মশা থেকেই ডেংগু,চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন মশা বাহিত রোগ ছড়ায়। আর ম্যালেরিয়ায় প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই আফ্রিকার শিশু। কয়েক দশকের টানা গবেষণা আর প্রাণান্তকর চেষ্টার পর অবশেষে মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগ ম্যালেরিয়ার প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফলতার মুখ দেখলেন বিজ্ঞানীরা।
বুধবার (০৬ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই রোগের টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছেন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে।
এ ভ্যাকসিনের নাম আরটিএস,এস/এস০১— যা শিশুদের শরীরে প্রয়োগের জন্য অনুমোদন পেয়েছে।
ম্যালেরিয়া সংক্রামক রোগের মধ্যে প্রাচীনতম পরিচিত এবং মারাত্মক একটি রোগ। এটি প্রতি বছর প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করে, তাদের প্রায় সবাই সাব-সাহারান আফ্রিকার।তাদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যাই বেশি।
ক্লিনিকাল পরীক্ষায়, প্রথম বছরে মারাত্মক ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রায় ৫০ শতাংশ ছিল, কিন্তু চতুর্থ বছরে শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে।
ম্যালেরিয়ার মৃত্যুর অর্ধেক পর্যন্ত এবং এটিকে "মৃত্যুর একটি নির্ভরযোগ্য প্রক্সিমাল ইন্ডিকেটর" হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ডব্লিউএইচও'র জানায়,আশা করি আমরা ভ্যাকসিনটির কার্যকর প্রভাব দেখতে পাব।"
গত বছর একটি মডেলিং স্টাডিতে অনুমান করা হয়েছিল যে, যদি ম্যালেরিয়ার সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাবের দেশগুলোতে টিকা প্রেরণ করা হয়, তাহলে এটি প্রতি বছর ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫.৪ মিলিয়ন কেস এবং ২৩ হাজার মৃত্যুর ঘটনা রোধ করতে পারে।
ভ্যাকসিনের সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু রোধে দ্বৈত পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকর ছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইয়াসুস বলেন, আজ ডব্লিউএইচও বিশ্বের প্রথম ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। এ ভ্যাকসিন ব্যাপক হারে ব্যবহারের সুপারিশ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ম্যালেরিয়া মশাবাহিত রোগটির কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। সদ্য অনুমোদন পাওয়া আরটি,এস ভ্যাকসিন প্রায় একশো বছরের প্রচেষ্টার ফল। ছয় বছর আগে এ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণ হলেও অনুমোদন দিতে দীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আফ্রিকার ঘানা, কেনিয়া, মালাভিতসহ সাব-সাহারান যেসব দেশে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি, সেসব দেশে এ ভ্যাকসিনের একাধিক পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এ ভ্যাকসিনের অনুমোদনকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, শিশুদের জন্য বহু প্রতীক্ষিত ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন বিজ্ঞান, শিশু স্বাস্থ্য এবং ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ প্রাণ রক্ষা করবে।
ভোরের পাতা/কে