শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে: ড. মো. আফজাল হোসেন# বাংলাদেশকে অনন্য অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা: নাসির উদ্দিন আহমেদ# বিশ্ব বরেণ্য নেতায় রুপান্তর হয়েছেন শেখ হাসিনা: অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা
একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন খেতাব আর সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতা হয়ে ওঠার যে ম্যাজিক তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন তা এখন উন্নত বিশ্বে ‘শেখ হাসিনা উন্নয়নের রোল মডেলে’ রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ এখন অর্জন করেছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পপূর্ণতা।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৮৪তম পর্বে বুধবার (০৬ অক্টোবর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আফজাল হোসেন, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, বেলজিয়াম বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ড. মো. আফজাল হোসেন বলেন, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন খেতাব আর সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক, পুরস্কার ও স্বীকৃতির পালক এখন শেখ হাসিনার মুকুটে একের পর এক যুক্ত হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করেছিল যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কেউ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে। আর এ কারণে নরপশুরা ছোট শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আমাদের আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্নেহের ছোট বোন শেখ রেহানা। দুই বোন ছাড়া পরিবারের সবার মর্মান্তিক মৃত্যু তাদের অনিশ্চিত পথে ঠেলে দেয়; কিন্তু বাবা ও মা’র দেখানো পথে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দীর্ঘ ৬ বছর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ফিরেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে মনোনিবেশ করার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন এবং বারবার তাকে কারান্তরীণ করা হয়। তাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা হয়। রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনেতা হয়ে ওঠার যে ম্যাজিক তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন তা এখন উন্নত বিশ্বে ‘শেখ হাসিনা উন্নয়নের রোল মডেলে’ রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ এখন অর্জন করেছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পপূর্ণতা। প্রবৃদ্ধির হার থেকে শুরু করে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সূচকের প্রবৃদ্ধির ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় স্বর্ণযুগ হিসেবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নিখুঁত নেতৃত্বে অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। গঠিত হয় মহাজোট সরকার। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনেন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে রেকর্ড সৃষ্টি করে তিনি চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। তার গৃহীত পদক্ষেপে দেশবাসী আজ তার সুফল পাচ্ছে। অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে।
নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক। তার হাত ধরে এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এগুলো স্পর্শ করতে পারেননি। এ অর্জন অনন্য ও অতুলনীয়।তিনি টানা ৪০ বছর দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সভাপতি।১৭ বছরের বেশি সময় চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনা করছেন।৭৫ পরবর্তী সময়ে বিপন্ন গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইতিহাসের সঠিক ধারায় এনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।৩১টি বেশি আন্তর্জাতিক পদক ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন এবং চল্লিশটির অধিক বই লিখেছেন।বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ অবকাঠামো উন্নয়নে এক নবজাগরণ ঘটিয়েছেন।১২ বছর আগের মাথাপিছু আয়কে চার গুণ বাড়িয়ে ২২২৭ ডলারে উন্নীত করেছেন। দেশের রিজার্ভকে সর্বকালের রেকর্ডে উন্নত করে ৪৮.৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন।HDI-সহ সব INDEX এ বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন।৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণসহ বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি চলছে।সমুদ্রবিজয় (BLUE ECONOMY), দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যার সমাধান, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, পারমাণবিক বিদ্যুৎযুগে প্রবেশ, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, ICT ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়নসহ সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করে বিশ্বের বিস্ময় হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন।খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ বৃহত্তর কৃষির সব সেক্টরে এসেছে এক অভাবনীয় সাফল্য।তিনি লাখ লাখ গৃহহীন মানুষকে গৃহ দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফলতার পিছনে রয়েছে বেদনাবিধুর ইতিহাস, দুঃখ কষ্টের দীর্ঘ সংগ্রামের সাহসী জীবন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার পর ১৯৭১ সালের ১৭ মে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, জীবনকে তুচ্ছ করে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশে ফিরেছেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে গিয়েছেন।অবশেষে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলসহ দেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন। এরপর ২০০১ সালের প্রহসনের নির্বাচন ছাড়া চতুর্থবারের মতো উন্নয়নের অদম্য অগ্রযাত্রায় দেশ পরিচালনা করছেন।বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যেও তিনি জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটি সংমিশ্রণ করে জিডিপি গ্রোথ, রপ্তানিসহ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখেছেন সমগ্র বিশ্ব আজ বিস্ময়ে দেখছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ, স্যানিটেশনসহ সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান। যার স্বীকৃতি দিয়ে চলছে বিশ্ব সম্প্রদায়ও। SDG বাস্তবায়ন অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জনে যুক্ত হচ্ছে নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশ পৌঁছে যাচ্ছে এক সমৃদ্ধ মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে অনন্য উচ্চতায়। তাইতো তিনি আজ জননেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী।
অধ্যাপক ড. ফারুক মির্জা বলেন, যার হারাবার কিছু নেই, চাওয়া-পাওয়াও নেই, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ হতদরিদ্র অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে। বিশ্ব উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ তার অবস্থানকে আরও সুদৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তা যে কারও কাছে অভাবনীয় মনে হতেই পারে। এক কথায় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবং এর নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা বিশ্ব পরিমন্ডলে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। একটি পশ্চাৎপদ দেশকে উন্নয়নের কাতারে শামিল করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের মাঝে নিজের অবস্থানকে একটা অনন্য ধারায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। বাংলাদেশ নিজে যেমন স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্ন এখন অনেক দেশকেই দেখানো হচ্ছে। শুধু দেখা নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পথনির্দেশিকা এবং সঠিক কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যাত্রাপথ মসৃণ না হলেও স্বপ্ন পূরণের পালায় চড়াই-উতরাই ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছে উন্নতির অগ্রযাত্রায়। তাকে পাড়ি দিতে হবে আরও বহু পথ। সেই পথে যতই থাক কাঁটা বিছানো, তা উপড়ে ফেলার সক্ষমতাও ক্রমশ ধারণ করছে দেশটি। বাঙালীর আশা-আকাক্সক্ষার চৌহদ্দি স্বদেশ ছাড়িয়ে এখন বিশ্বসভায় পৌঁছে গেছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক সূচকে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে সত্যিকারার্থেই উত্থান ঘটেছে দেশটির। যে কারণে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতিশীল নেতৃত্বের কারণে বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়কের ইমেজ তৈরি করতে পেরেছেন তিনি। শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ধারণাই দেশকে পাল্টে দিয়েছে। একসময় যা ছিল একটা স্লোগান তা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ এখন ইন্টারনেটের সেবার আওতায় এসেছে। ভিশন-২০২০-এর ফলই এসব অগ্রগতি। এ করোনা মহামারীতেও জেলা শহরে বসে মানুষ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এটা এক বিস্ময়। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা সত্যিই ঈর্ষণীয়। অর্থনীতি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপই বাংলাদেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের নতুন মাইলফলক হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশেষ করে ভারী শিল্পের উন্নয়ন এবং পদ্মা সেতু, মেট্রারেলসহ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর নেওয়া সাহসী পদক্ষেপ বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত। শুধু তাই নয়, করোনাভাইরাসের চলমান মহামারী থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে যেসব উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন সেগুলোও অত্যন্ত ফলপ্রদ ভূমিকা রেখেছে।