#সাংবিধানিক আইনের বাইরে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে না: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ। #বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আর নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না: আমিনুল ইসলাম আমিন। #হার নিশ্চিত ভেবেই নির্বাচনে না যাওয়ার রাস্তা খুঁজছে বিএনপি: উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার।
প্রকাশ: শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১, ১০:৪৩ পিএম আপডেট: ০২.১০.২০২১ ১০:৪৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে তা মূলত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন এখন সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কোথায় দোষ করলো সেটি জানতে হবে আমাদেরকে। জনগণকে নির্বাচনমুখী করার জন্য রাজনৈতিক দলের যেমন দায়িত্ব আছে ঠিক তেমনি সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে ঠিক তেমনি নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব আছে। বিএনপি আজ যখন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যত কথায় বলুক না কেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তাদের কোন কথায় আর আমলে নেওয়া হবে না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৮০তম পর্বে শনিবার (২ অক্টোবর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, আজকে ভোরের পাতা সংলাপে আমরা যে বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি সেটা বর্তমানে অনেক জটিলতায় চলে এসেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যদি কথা বলি তাহলে আমরা দেখেছি যে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে তা মূলত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন এখন সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কোথায় দোষ করলো সেটি জানতে হবে আমাদেরকে। এর আগে আমরা যেটা দেখেছি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত করেছেন এবং তারপর সেই কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এখন নির্বাচনের যারা পরাজিত হবে তারা নির্বাচন পক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলবেই; এটাই স্বাভাবিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাস্ট নির্বাচন নিয়ে এখনো বিতর্ক করছে ট্র্যাম্প। তারা এখনো সেই প্রক্রিয়া নিয়েই ব্যস্ত আছে। এখন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে যে কৌশল তৈরি করে সে কৌশলে এমন কিছু নির্বাচন করলে হবে না যে তার দল সেই নির্বাচনে জয়ী লাভ করার পূর্ণ আশ্বাস পাওয়ার পরেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এইরকম পরিবেশ তো নিরপেক্ষ পরিবেশ না। আরেকটি বিষয় যেটি আমরা বলতে চাই যে, নির্বাচন ও একটি রাজনৈতিক দলের কৌশল যদি নির্বাচনমুখী না হয় তাহলে সেটা কোন রাষ্ট্রের জন্য সুফল বয়ে আনে না। আমরা সব সময় দেখতে চাই একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এখন যদি কোন একটি দল তাদের শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তাদের যারা সমর্থক আছেন তারা স্বভাবতই ভোট দিতে আসবে না। ফলে নির্বাচনে অংসগ্রহণের যে মাত্রা থাকবে সেটা কমে আসবে এবং নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক না হলে জনগণ নির্বাচনমুখী হয় না। জনগণকে নির্বাচনমুখী করার জন্য রাজনৈতিক দলের যেমন দায়িত্ব আছে ঠিক তেমনি সরকারের যেমন দায়িত্ব আছে ঠিক তেমনি নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব আছে।
আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, সংবিধানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে এই রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই। সেই জায়গা থেকে একটি একটি অনির্বাচিত প্রতিনিধিরা একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করবে সেটা সংবিধানের সাথে একেবারেই সাংঘর্ষিক। যখন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য একটি আলোচনা হচ্ছিল তখন একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মাঝে মধ্যে ভাবতাম যে রাজনীতিবিদরা একটি দেশ পরিচালনা করতে পারে সেখানে তারা একটি নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে না; এটাতো একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে মর্যাদাকরণ নয় কোনভাবেই। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, এ প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। যারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে বহুদলীয় তামাশা আর সুবিধাবাদ চালু করেছিল, যাদের দলের অভ্যন্তরে নেই গণতন্ত্রের চর্চা, আজ তারাই গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন। পঁচাত্তরের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে লাগাতার একটি সময় গণতন্ত্রের নামে সামরিকতন্ত্র, কারফিউ তন্ত্র, রাতের বেলা যখন খুশি মানুষকে খুন করার তন্ত্র এমনকি নিজের রাষ্ট্র ক্ষমতাকে নিরুঙ্কুশ করার জন্য ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনীর অসংখ্য অফিসারকে এক মিনিটের মধ্যে ক্যামেরা ট্রাইলের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে মত্যুদণ্ড ঘোষণা করে কোন ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে রাতারাতি তাদের হাতের এবং পায়ের শিরা কেটে দিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে যেভাবে রক্ত গঙ্গা বয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই ধারাবাহিকতায় তারা শুধুই যে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেনি বরং গণতন্ত্রকে মাটির নিচে চাপা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি আজ যখন এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যত কথায় বলুক না কেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তাদের কোন কথায় আর আমলে নেওয়া হবে না।
উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বলেন, নিরেপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়টি আসলে কি, এটি হলো এমন একটি আপদকালিন ব্যবস্থা যখন বাংলাদেশ নামক দেশটি গণতান্ত্রিক চর্চার নেতিবাচক প্রভাবে ভুগছিল। একটা গণতান্ত্রিক ভাবধারা কে যখন একেবারে নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছিল ঠিক সেই মুহূর্তে গণতন্ত্রের চর্চার মধ্য দিয়ে এবং সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সেই সময়টার একটি সাময়িক সমাধানের পন্থা ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু এটি কোনভাবেই একটি গণতন্ত্র চর্চার জন্য মোটেও প্রযোজ্য নয়। কিন্তু তখন আমাদের অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে এছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প ছিল না। এবং এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথা যখন কোর্ট থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো তারপর আর এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের কোন একটি ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে তখন সেই ব্যবস্থায় আর ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ২০১১ এর ১০ মে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এই ব্যবস্থায় আর ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এখন মজার ব্যাপার হলো যে, যে সরকার ব্যবস্থার কথা বলে বিএনপি সেদিন চরম বিরোধিতা করেছিল, বিএনপি যেদিন চরম প্রতিবাদ করেছিল এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল যাতে এই ব্যবস্থায় আর নির্বাচনে যেতে না হয়। তখন তারা নানা কথা বলেছিল যে, শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়, সুতরাং নিরেপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোনভাবেই হতে পারে না। যে বেবস্থার উপর তারা পুরোভাবেই বিরোধিতা করেছিল সেই ব্যবস্থার উপর তারা আজ আবার সেই ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায়। এখন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সামাজিক ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও মানুষের স্বাবলম্বিতা বর্তমানে যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে আর আমরা অন্ধকারের যুগে ফিরে যেতে পারবো না।