সাত কেজি ৩০০ গ্রাম সোনা চোরাচালান মামলার আসামি হয়েও ছয় বছরে গ্রেপ্তার না হওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার হাইজ্যাদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন ভুঁইয়া (৫১) গ্রেপ্তারে পরোয়ানা নিয়েও আবার নৌকার মনোনয়ন চান।
গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এই পরোয়ানা জারি করেছিলেন। একই সঙ্গে পলাতক থাকা অপর নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত।
২০১৪ সালে বিমানবন্দর থানায় দায়ের হওয়া এ মামলায় ৬ বছর আগে প্রথম তদন্তর সময় এক আসামির স্বীকারোক্তিতে নাম আসে এই চেয়ারম্যানের নাম। মামলার নথি থেকে দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০১৪ সালের ২২ আগস্ট মালেশিয়ার কুয়ালামপুর থেকে আসা বিজি-৮৭ ফ্লাইটের যাত্রী নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার বড় আলমদি গ্রামের বাসাদ মিয়ার ছেলে মোহাম্মাদ আল আমীন (২৫) এর কাঁধে থাকা স্কুল ব্যাগ তল্লাশী করে পাঁচটি এক কেজি, একটি ৫০০ গ্রাম ও ১৮টি ১০০ গ্রাম ওজনের সোনার বার শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃক উদ্ধার হয়। যার মোট ওজন ৭ কোজি ৩০০ গ্রাম। এছাড়া তার কাছ থেকে ২৬টি পাসপোর্টও উদ্ধার হয়।
মামলার নথি থেকে দেখা যায়, ওই ঘটনায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান সোনা চোরাচালানের অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পর গ্রেপ্তারকৃত মোহাম্মাদ আল আমিন ওই বছর ২৬ আগস্ট আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। জবানবন্দিতে সে তার সঙ্গে জামান, সোহেল, সেলিম ও রমজান নামে চারজনও ওই সোনা চোরাচালানে জড়িত বলে প্রকাশ করেন। ওই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মচারী মো. ইয়াছিন মিয়া ওরফে সেলিম (৩৫) গ্রেপ্তার হয়। সে একই বছর ১১ সেপ্টেম্বর আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। ওই জবানবন্দিতে সে তার সঙ্গে সোনা নিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া আল আমিন, মো. জসিম উদ্দিন, মো. ইব্রাহিম, মো. নূর-ই আলম ওরফে আলম, মো. গোলাম রসুল, মো. ইলয়াস, মো. মোজাম্মেল, আলী হোসেন চেয়ারম্যান্, সাঈদ, শহিদুল ইসলাম বাবু, শংকর সরকার, শহীদ ও জাকিরের নাম প্রকাশ করেন।
মামলার নথি থেকে আরও দেখা যায়, মামলাটি তদন্তের পর ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম টান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ হিউম্যান ট্রাফিকিং এন্ড স্মাগলিং টিমের পুলিশ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান ২০১৬ সালের ২১ জুলাই ঢাকা সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন, আল আমিন, জসিম উদ্দিন, নূর-ই আলম, শংকর সরকার, শহিদুল ইসলাম বাবু, ইয়াছিন ওরফে সেলিম ও ইব্রাহিম শেখকে অভিযুক্ত করেন। যাদের মধ্যে চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন ও ইব্রাহিম শেখকে পলাতক এবং অপর আসামিরা গ্রেপ্তার মর্মে দেখানো হয়।
চার্জশিটের আসামিদের মধ্যে আল আমিন, ইয়াছিন ওরফে সেলিম ও শংকর সরকারের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছিল। সেখানে মোট ১৬ জন আসামির নাম প্রকাশ পেলেও আটজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করায় ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত ২০১৭ সালের ৯ মার্চ সিআইডির কাছে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য প্রেরণ করেন। ওই বছর ৩০ মার্চ থেকে সিআইডি মামলাটি অধিকতর তদন্ত শুরু করে চলতি বছর ৭ জুলাই সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. জহিরুল ইসলাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন। সেখানেও চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন আসামির তালিকায় আছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাকে গত সাত বছরেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। অবশেষে চেয়ারম্যানকে পলাতক দেখানোয় আদালতই গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
এছাড়া হাইজ্যাদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে টিআর কাবিখার অর্থ আত্নসাৎ থেকে শুরু করে বয়স্কভাতা প্রদানেও জালিয়াতির সুনিদিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এমনকি আড়াইহাজারে আন্তজেলা ডাকাত দলের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে তার নাম এসেছে কয়েকবার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে হাইজ্যাদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন ভুঁইয়াকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।