মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
উদ্বেগজনক ঘটনা চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া
রতন বালো
প্রকাশ: শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১, ১০:২২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ১৯৮০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছরের কারাদ- থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হলেও পাথর ছোড়ার ঘটনা বন্ধ করা যায়নি। বরং এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। যাতে ট্রেনের চালক, সহকারী চালকসহ যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। এমনকি জানালা বন্ধ রেখেও রেহাই মিলছে না, জানালার কাঁচ ভেঙে অনেক যাত্রী আহত হন। পাথর নিক্ষেপকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে সে ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের শাস্তির বিধান রয়েছে। এতসব আইন থাকার পরও কোনভাবেই চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বন্ধ করা কেন যাচ্ছে না সেটিই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এদিকে চলন্ত ট্রেনে ছিনতাই-ডাকাতির মত ঘটনায় যাত্রীদের ভেতরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রেলে নিরাপত্তাকর্মী থাকা অবস্থাতেই এধরনের ঘটনা মানুষকে রেল ভ্রমণের ব্যাপারে অনুৎসাহিত করে তুলছে। দেশের কেন্দ্রীয় রেল টার্মিনাল ঢাকার কমলাপুর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী টঙ্গী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও জামালপুরে  আসা যাওয়া করে থাকেন। সম্প্রতি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে ডাকাতি ও যাত্রী হত্যার মত আতঙ্কজনক  ঘটনা ঘটে।  যদিও ঘটনার পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও রেল পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নড়েচড়ে বসছেন। এধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন কিন্তু যাত্রীদের ভেতরের দুশ্চিন্তাতো দূর করা সম্ভব হয়নি।  

র‌্যাব-১৪ ব্যাটলিয়ন গত শনিবার গভীররাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত টানা অভিযান চালিয়ে পাঁচ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে। তারা র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, পলাতক ডাকাতদেরকে ধরতে অভিযানে নেমেছে র‌্যাব। ট্রেনের ভেতরে সিট না পেয়ে বহু যাত্রী ছাদে উঠে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। যদিও ট্রেনের ছাদে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরেও মানুষ বাধ্য হয়েই ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করে থাকেন। বর্তমান সময়ে সেটিও আর নিরাপদ নয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে চলাচল করতে যেয়ে ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের কবলে পড়তে হচ্ছে। অপরাধী চক্র দলবদ্ধভাবে  অস্ত্র ঠেকিয়ে যাত্রীদের নগদ টাকা ও মালপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে। এদিকে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া বন্ধে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীতে আরও দেড় হাজার জনবলের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রেলপথ বিভাগ থেকে এ জনবলের কথা বলা হয়। পরে কমিটির পক্ষ থেকেও এ নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, রেলওয়ের বর্তমান জনবলের সঙ্গে আরও ১ হাজার ৫শ বাড়ানো গেলে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে। আলোচনা শেষে কমিটি ওই জনবল বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে। বৈঠকে রেলওয়ের যাত্রীসেবা নিশ্চিত করনে আরও অনেক প্রকল্প গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।  

গত ১৫ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুরে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে পাথর ছোড়ার অন্তত তিনটি পৃথক ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা হরহামেশায়  ঘটে। এর ফলে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন, পাশাপাশি অঙ্গহানি ঘটছে অনেকের। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে ভাটিয়ারী এলাকায় চলন্ত ট্রেনে ছোড়া ঢিলে প্রীতি দাশ নামে এক প্রকৌশলী নির্মম মৃত্যুবরণ করেন। চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে কর্তৃপক্ষকে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। যদিও  নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় রাতের আঁধারে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসব এলাকা চিহ্নিত করে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে রেল কর্তৃপক্ষকে টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব স্থানে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে সেসব স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। দুর্বৃত্তরা যাতে রাতের আঁধারে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান সরকারের আমলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিদ্যুৎ চলে গেছে। তাছাড়া সৌর বিদ্যুতের মতো অনেক বিকল্প রয়েছে। কাজেই কাজগুলো কঠিন বা অসম্ভব এমনটি ভাবার কোন কারন নেই। এতসব কঠোর আইন থাকা সত্বেও গত শনিবার রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা গোপালগঞ্জগামী টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারলে তামান্না তন্বী নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আহত হন। তিনি গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে ময়মনসিংহের গফরগাঁও স্টেশনের আউটার সিগন্যাল এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় আরেক ঘটনায় ‘সরিষাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’-এর হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন (৫৬) পাথরের আঘাতে আহত হন।

গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চলন্ত ট্রেনে সবচেয়ে বেশি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম থেকে ঈশ্বরদী, টাঙ্গাইল থেকে মির্জাপুর, পার্বতীপুর থেকে নীলফামারী, খুলনা থেকে সৈয়দপুর এবং যশোর থেকে নওয়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত। এদিকে দিনের চেয়ে রাতেই ট্রেনযাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় বেশি ভুগছেন। সম্প্রতি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে ডাকাতি ও যাত্রী হত্যার মত ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও রেল পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে বেশ কয়েকজন ডাকাতকে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। গ্রেফতারকৃত ডাকাত আশরাফুল ইসলাম স্বাধীনকে গত শনিবার গভীররাতে ময়মনসিংহ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে, ঘটনায় জড়িত মাকসুদুল হক রিশাদ, মো. হাসান, রুবেল মিয়া ও ডাকাত মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই ময়মনসিংহের সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য।  ডাকাতদের দেখানো জায়গা থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত পলাতক অন্য ডাকাতদেরকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত ডাকাত রিশাদের নামে দুইটি মামলা রয়েছে। অন্য এক মামলায় দুই বছর জেল খেটে ছাড়া পাওয়া রিশাদ এখন ট্রেন ডাকাতির সর্দার। 

র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম অল্প সময়ের মধ্যে ডাকাত চক্রের সন্ধান পেয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ চক্র এর আগেও বিভিন্ন সময় ট্রেনে ডাকাতি ছিনতাই করেছে। এ ঘটনায় জড়িত সাত ডাকাতের নাম তারা জানতে পেরেছেন। যাদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। এ ব্যাপারে রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন, মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার ও রেল সচিব মো. সেলিম রেজার সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। 

তবে নাম প্রকাশে অনিহা প্রকাশ করে রেল পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, করোনা ভাইরাস ও লকডাউনের কারণে অনেক দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এ চক্র এর আগেও বিভিন্ন সময় ট্রেনের ছাদে ছিনতাই ও ডাকাতি করেছে। আবার কোন কোন ডাকাত জামিনে ছাড়া পেয়ে বা সাজা খেটে এখন আবার চলন্ত ট্রেনে ডাকাতি ও ছিনতাই করছে। প্রাইভেট বা বেসরকারিভাবে পরিচালিত কমিউটার ট্রেনে রেল পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে না। রেল পুলিশ জনবল (ফোর্স) স্বল্পতার কারণে শুধু আন্তঃনগর বিশেষ ট্রেনে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এ ঘটনার পর চলন্ত ট্রেনে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। র‌্যাব পুলিশ ছাড়া র‌্যাবের একাধিক টিম কাজ করছেন। আশাকরি, ট্রেন ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা আইনের আওতায় আসবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]