#এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। #আমানত বেড়েছে ৯৯.৪০ শতাংশ। #বিতরণকৃত ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪২.২১ শতাংশ। #দেশের সরকারি-বেসরকারি ২৮ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং রয়েছে।
প্রকাশ: শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১, ১০:২০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দিন দিন মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং। খুব দ্রুত সময়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে সহজে লেনদেন করতে পারে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এছাড়া লাইনে দাঁড়ানোর কোন ঝামেলা নেই। তাই সবাই এখন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনাকালে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল। এরইফলে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। একইসঙ্গে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর জমানো টাকা ব্যাংকে আসতে শুরু করেছে। এর কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হচ্ছে আগের চেয়ে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনাকালে এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব বেড়েছে ৬৫ দশমিক ৮৭ মতাংশ। আমানতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৯৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। একই সময়ে বিতরণকৃত ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪২ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫৫ শতাংশ। ২০২০ সালের জুন থেকে চলতি বছরে জুন পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। বর্তমানে সরকারি- বেসরকারি ২৮টি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ২৩টি ব্যাংকের এজেন্ট ছিল ৮ হাজার ৭৬৪টি। চলতি বছরের জুন শেষে ৫টি এজেন্ট ব্যাংক বেড়ে বর্তমানে ২৮টি। এ ব্যাংকগুলোর এজেন্টের সংখ্যা ১২ হাজার ৯১২-এ দাঁড়িয়েছে। করোনাকালের এক বছরে ব্যাংকগুলোর এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে ৪৭.৩৩ শতাংশ। এজেন্টের মতোই গত এক বছরে ৪ হাজার ৬৯৬টি আউটলেট বেড়েছে। ২০২০ সালের জুন শেষে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪৪৯টি। চলতি বছরের জুন শেষে আউটলেটের সংখ্যা ১৭,১৪৫ এ উন্নীত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে আউটলেট বেড়েছে ৩৭.৭২ শতাংশ। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এজেন্ট
ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে চালু করা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৯০।
করোনাকালের এক বছরে ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৬৮টি নতুন ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে এজেন্টদের মাধ্যমে চালু করা ব্যাংক হিসাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩৫৮টি। এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক হিসাবের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৫.৮৭ শতাংশ। করোনাকালের এক বছরে এজেন্টদের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানত বেড়েছে ৯৯ শতাংশের বেশি। গত বছরের জুন শেষে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ২২০ কোটি ২১ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৭৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
এছাড়া ২০২০ সালের জুনে এজেন্টদের মাধ্যমে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭২০ কোটি টাকা। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ হিসাবে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪২ শতাংশেরও বেশি। চলমান মহামারিতে দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অর্জন হলো রেমিট্যান্সের বড় উল্লম্ফন। চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ শতাংশের বেশি। অথচ করোনাকালের এক বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ১৫৫ শতাংশ। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এজেন্টদের মাধ্যমে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২৬ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৬৭ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে নীতিমালা জারি করে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে পাইলট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রথম এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংক এশিয়া। এরপর দ্রুততম সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হয়েছে অন্য ব্যাংকগুলো। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৮টি ব্যাংক এরই মধ্যে সেবাটি চালু করেছে।
এ ব্যাপারে সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনতে আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছি। দেশের ৮০ ভাগ মানুষ বসবাস করে গ্রামে আর ২০ ভাগ শহরে। তবে গ্রামে এখনো একটি শাখা বা উপশাখা চালানোর মত পরিবেশ তৈরি হয়নি। কারণ গ্রামে একটি শাখা বা উপশাখা চালাতে ব্যয় অনেক। তাই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। গ্রামে এখন মোটামুটি সবাই আর্থিকভাবে সচল এবং সবারই কম বেশি অর্থ জমা পড়ে আছে। সেই অর্থ দেশের অর্থনীতিতে কাজে লাগানোর জন্যই এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছি আমরা।