জানা গেছে, শিল্পকলার আগের সচিব মো. নওসাদ হোসেন গত ৩০ জুন বদলি হন। ওই দিনই শিল্পকলা একাডেমির ডিজি লিয়াকত আলী লাকী নতুন আদেশ জারি করে একাডেমির চুক্তিভিত্তিক পরিচালক (চারুকলা) সৈয়দা মাহবুবা করিম (মিনি)-কে সচিবের দায়িত্ব দেন।
ওই আদেশে বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে একাডেমির অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার প্রয়োজনে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি সচিবের অতিরিক্ত দায়িত্ব তাকে প্রদান করার কথা বলা হয়।
নওসাদ হোসেন গত অর্থবছরের শেষ দিনেও (৩০ জুন) দায়িত্ব পালন করেন। অথচ ওই দিনের আদেশেই মাহবুবা করিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর সরকারের নিয়োগ দেওয়া সচিব মো. আছাদুজ্জামান বিদেশে যাওয়ায় সৈয়দা মাহবুবা করিমকে আবারও সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে, আগের আদেশে সচিবের দায়িত্ব পালনের কথা বলা হলেও এবারের আদেশে সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে আদেশপ্রাপ্ত কোনও সচিব ছাড়া একাডেমির ডিজির আদেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির চেকে স্বাক্ষর করার সুযোগ নেই।
শিল্পকলা একাডেমির নিয়ম অনুযায়ী মহাপরিচালকও সেটি পারেন না। বিধি অনুযায়ী সচিব বা একাডেমির অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাই কেবল চেকে স্বাক্ষর করতে পারেন।
শিল্পকলা একাডেমিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ জুন থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রথম দফায় সচিবের দায়িত্ব পালন করেন মাহবুবা। ওই সময় পেছনের তারিখে প্রায় ২৬ কোটি টাকার চেকে স্বাক্ষর করেন তিনি। পেছনের তারিখে স্বাক্ষর করে কেবল ১৬ আগস্টই ৮ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রবিবারের বৈঠকে অর্থবছর শেষ হওয়ার পরও শিল্পকলা একাডেমির ডিজির টাকা উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বলেন, কোনও কারণে একটি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যয় নাও হতে পারে। কিন্তু ব্যয় না করে অগ্রিম উত্তোলনের কোনও সুযোগ নেই।
ব্যয় না হলে সেটা সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে। পরের বছর কেন খরচ করা যায়নি সেই যুক্তি তুলে ধরে আবার চেয়ে নেওয়া যাবে। সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবে টাকা আবার বরাদ্দ দিতেই পারে। আর বাস্তব কারণ তো ছিলই, করোনায় সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ ধরনের পদ্ধতি এখন করছে। শিল্পকলা সেটা না করে পেছনের তারিখে তুলে তিন মাসে এত টাকা কোথায় খরচ করেছে, কীভাবে খরচ করেছে-তা জানা দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দা মাহবুবা করিম বলেন, আমি সচিবের দায়িত্ব নিতে চাইনি। আমাকে ডিজি মহোদয় বারবার বলার কারণেই দায়িত্ব নিয়েছি।
আমাকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বারবার বলেছেন। আমার আগেও অনেকে এরকম দায়িত্ব নিয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। ডিজি আমার বস। তার আদেশ তো অমান্য করতে পারি না। তিনি হুকুম দিয়েছেন। তাই আমি এটা করেছি।
তিনি বলেন, আমি হুকুমের তালিম করেছি। তবে আমি যেসব ফাইলে সই করেছি তার সবই ডিজি অনুমোদিত। ওনার অনুমোদন ছাড়া কোনও ফাইল বা চেকে সই করিনি। জানা মতে অন্যায় কিছু করিনি। আর যদি কোনও প্রশ্ন থাকে সেটা ওনাকেই করতে হবে।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে সদস্য অসীম কুমার উকিল বলেন, শিল্পকলা একাডেমির জনবলসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডিজির অনিয়ম বা ওই সংক্রান্ত কোনও কিছু নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়নি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির এক সদস্য বলেন, সভাপতি ডিজির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আসার কথা বৈঠকে উপস্থাপন করেছেন। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি। বিষয়টি তদন্তের কথা বলেছেন।
ভোরের পাতা/অ