বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এবং তার স্বামী মাহফুজ আনাম হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐক্যে চিড় ধরানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা কৌশলে সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দুদের দাঁড় করিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন সংশোধনের দাবি তুলে কার্যত এই ধর্মে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।
সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে ৪৩টি সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে বলে জানানো হয়। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, সনাতনী সমাজে বিবাহ চুক্তি নয়, এটি একটি পবিত্র ব্রত। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী শাস্ত্রবিধি ও হিন্দু আইন অনুযায়ী অবিচ্ছেদ্যভাবে একাত্ম হয়ে যান। তারা পরিবারের সম্পদ-সম্পত্তিও যৌথভাবে ভোগ করে থাকেন। যুগ যুগ ধরে শাস্ত্রীর বিধানের ঐশীবন্ধনে হিন্দু সম্প্রদায়ের তথা সনাতনী সমাজের পরিবারগুলো শান্তিময়-ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় চলমান। কতিপয় এনজিওসহ একটি বিশেষ মহলের কারসাজিতে তা বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র চলছে।
তাঁরা আরও বলেন, কতিপয় এনজিও এবং সংগঠন হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তারা আসলে হিন্দুদের প্রতিনিধিত্বই করে না। এ অবস্থায় তাদের দাবি হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়। বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় সনাতনী সমাজ হিন্দু আইন পরিবর্তন চায় না।
এক প্রশ্নের জবাবে হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. জেঁকে পাল বলেন, হিন্দু আইন পরিবর্তনের জন্য যেসব এনজিও কথা বলছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি। কেউ কেউ বলছে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। এটি একেবারেই অসত্য। আমাদের আন্দোলন কতিপয় চিহ্নিত এনজিও এবং তার কর্ণধারদের বিরুদ্ধে; যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের নামে হিন্দু সম্প্রদায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে।
হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদের অন্যতম নেতা রামকৃষ্ণ বলেন, বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি যারা হিন্দু ধর্মের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন এবং বলছেন হিন্দু ধর্মে নারীরা অধিকার পান না তারা নিজেরাই স্বামীহীন। হিন্দু আইন পরিবর্তনের যে চক্রান্ত চলছে তা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামক এনজিও’র স্বার্থসিদ্ধির জন্য এবং হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য। হিন্দু ধর্মে নারীদের বিয়ে এবং সম্পত্তি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে তা অবান্তর এবং মিথ্যা। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে হিন্দু শাস্ত্রের কোন সম্পর্ক নেই। যারা বিদেশি প্রভুদের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে নিজেদের সংগঠনকে টিকিয়ে রাখতে হিন্দু সমাজে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না। এই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
হিন্দু সংগঠনের আরেক নেতা প্রণব মট চন্দ্র বলেন, হিন্দুধর্ম আইন পরিবর্তনের নামে যে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজ সোচ্চার। আমরা শান্তিতে আছি, শান্তিতে থাকতে চাই। হিন্দু আইন পরিবর্তনের নামে যে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, তার জন্য সব দায় শাহীন আনামদের নিতে হবে। সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিদেশ থেকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও একটি বিশেষ মহল হিন্দু শাস্ত্রের বিধি-বিধান পরিবর্তন প্রচেষ্টায় লিপ্ত। তারা জানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সরকারের বড় সমর্থক আর এই বন্ধন ভাঙতেই তারা এ ষড়যন্ত্র করছে। সরকারকে বিশ্বের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এই গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তারা।. আমরা এই ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করবো। আমরা সারা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক পরিচালিত সব সংগঠন তাদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বিভাস চন্দ্র বলেন, আমরা সম্প্রতি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ বসে ছিলাম। তারা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি হিন্দু আইনে কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন নেই। আইনটি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে তা সংশোধনের প্রয়োজন নেই। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই আইন সংশোধনের হাত দিতে সাহস পায়নি। আমরা যারা মনে করছি আইনের সংশোধন করা দরকার, তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ আইনের কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন নেই এবং এটি সম্ভব নয়।
ইসকন ফুড ফর লাইফ, ঢাকার পরিচালক রুপানুগ গৌরদাস ব্রহ্মচারী বলেন, এটি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নয় এটি ও অমানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। তাদের মতলব সবার সামনে উন্মুক্ত হোক এটাই আমরা চাই। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই আমাদের কথাগুলো বুঝুন এবং হিন্দু আইন পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। যদি হিন্দু আইন পরিবর্তনের নীলনকশার তারা বন্দনা করেন তাহলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে হিন্দু আইন পরিবর্তন প্রতিরোধ সম্মিলিত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় বলেন, প্রায় তিন দশক ধরে একটি বিশেষ মহল বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের পারিবারিক বন্ধন ও সম্প্রীতিকে ধ্বংস করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সে পথ ধরেই কতিপয় স্বার্থান্বেষী এনজিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিন্দু নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার নেই এ বাহানা তুলে হিন্দু সম্প্রদায়ের শাস্ত্রীয় বিধি বিধান পরিবর্তন প্রচেষ্টার মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার গভীর চক্রান্তে নতুন করে মেতে ওঠেছে । আওয়ামী লীগ যখনই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে উক্ত মহলটি তখনই হিন্দু ধর্মীয় তথা বিবাহ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের ব্যাপারে অতি উৎসাহী হয়ে ওঠে।
এ সময় তিনি শাহীন আনাম, তাকে সহায়তাকারী তার স্বামী মাহফুজ আনাম এবং আরেক এনজিও বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক এঙ্গেলা গোমেজের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত সম্মিলিত পরিষদ তথা ৪৩টি সংগঠনের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।