প্রকাশ: শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৭ পিএম আপডেট: ২৪.০৯.২০২১ ৭:৪১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও লেখাপড়া করার অদম্য ইচ্ছে শক্তি মোস্তাফিজুর রহমান ডলার (২২)কে দিয়েছে নতুন এক জীবন। রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এই যুবক এখন সাভারের একটি বেসরকরি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। এছাড়াও বাস্তব জীবন নিয়ে নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে অন্যকে শুনিয়ে সে এখন কবি। ভালবেসে সবাই তাকে ডাকে কবি বলে।
আলাপ করে জানা গেছে, চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আজমতপুর গ্রামের দরিদ্র পিতা রবিউল ইসলামের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ডলার। ৪ ভাই এক বোনের সংসারে চতুর্থ সন্তান মোস্তাফিজ অতি কষ্টে স্থানীয় প্রাইমারি পাশ করে সে ভর্তি হয় চাপাইনবাবগঞ্জের তেলকুপি আলিম-দাখিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে সে ২০১৮-১৯ শিক্ষা বর্ষে দাখিল (এসএসসি) পাশ করে। মাদ্রাসায় পড়া কালীন যে খরচ হতো তা বাবা রবিউল ইসলাম কষ্টে যোগার করে দিতেন। এভাবে দাখিল পাশ করার পর মোস্তাফিজ পাড়ি জমায় শহরে। ভাল একটি কলেজে লেখাপড়া করে অনেক শিক্ষিত হওয়ার অদম্য শক্তি তাকে নিয়ে আসে ঢাকার সাভারে। এখানে এসে বিভিন্নস্থানে রাত্রি যাপন করে কাজ খোঁজার চেষ্টা করে সে। কিন্তু পার্টটাইম চাকরী পায়না কোথাও। কারণ, লেখাপড়া করতে হলে স্থায়ী চাকরী সে করতে পারবেনা, এই ভেবে অবশেষে সাভারের গ্যারেজ থেকে রিক্সা ভাড়া নিয়ে চালাতে থাকে মোস্তাফিজ। রিক্সা চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে শুরু হয় তার শিক্ষা সংগ্রাম। আয়ের টাকায় কলেজে ভর্তি হওয়া, বইকেনা, বাসাভাড়া দেয়া তার কষ্টসাধ্য হলেও দিন রাত পরিশ্রম করে রিক্সা চালিয়ে সে সব কিছুরই যোগান দিয়ে আসছে। এরপরেও বাড়তি টাকা সে বাড়িতে পাঠায় বাবা-মা ও ভাই-বোনদের খরচের জন্য। এখন সে কলেজে ২য় বর্ষে মানবিক শাখায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
অবসর সময়ে মোস্তাফিজের নিজের জীবন এবং দারিদ্রতা নিয়ে কবিতা লিখে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২ শতাধিক কবিতা রচনা করেছে এই সংগ্রামী যুবক। তার কবিতা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায় পাঠক ও শ্রোতা সকলেই।
মোস্তাফিজুর রহমান ডলার বলেন, বর্তমানে আমি সাভারের লিজেন্ড কলেজের ২য় বর্ষে লেখাপড়া করি। কলেজের সবাই আমাকে প্রচন্ড ভালবাসে। আমার কবিতা শুনে আমাকে সবাই কবি বলে ডাকে। কলেজের সময়ের বাইরে আমি দিনে এবং অনেক রাত্রি অবধি রিক্সা চালিয়ে আসছি। বর্তমানে একটি অটো রিক্সা ভাড়া প্রায় ৪’শ টাকা। যতটুকু সময় রিক্সা চালাই তাতে আমার প্রায় ৭ থেকে ৮’শ টাকা আয় হয়। এ দিয়েই চলে আমার খরচ। এ পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে লেখাপড়া করে আসিনি। কারো কাছে কখনও সাহায্য চাইনি। এভাবে পরিশ্রম করে আমি অনেক শিক্ষিত হতে চাই। দারিদ্রতা আমাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
লিজেন্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও সমন্ধয়কারী আব্দুর রাজ্জাক জানান, মোস্তাফিজুর রহমানের এভাবে লেখাপড়ার কথা শুনে কলেজ থেকে যতটুকু বেতন ও অন্যান্য ফি ছাড় দেয়া দরকার তা আমরা দিচ্ছি। মোস্তাফিজ আমাদের সমাজে একটি দৃষ্টান্ত। কারণ, এভাবে একটি প্রাইভেট কলেজে লেখাপড়া করার যোগ্যতা সবার থাকে না। তবুও মোস্তাফিজ সেই অসাধ্যকে সাধণ করেছে।