পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ, অবৈধভাবে জমি বিক্রি ও দখলে নেয়াসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেছে জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক। জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক শাহিন স্বাক্ষরিত নোটিশে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের জমি বিক্রির ৪ কোটি টাকা এবং মসজিদের ফান্ড থেকে উঠিয়ে ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎের অভিযোগসহ মসজিদ রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন মসজিদের মুসল্লি মো. নজরুল তালুকদার বাদশা ও আবদুল হান্নান। এছাড়া মসজিদের অর্থ ও সম্পদ আত্মসাৎ, অবৈধভাবে জমি বিক্রি ও দখলে নেয়াসহ দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মসজিদের নতুন কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য আবদুল হান্নান, যা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।
ঐতিহ্যবাহী খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদটি নির্মিত হয় ১৯২১ সালে। নির্মাণের পর থেকে সুনামের সঙ্গে মসজিদটি পরিচালিত হয়ে আসছে। মসজিদের নামে জেএল ০৬নং খেপুপাড়া মৌজার এসএ ৪০৯নং খতিয়ানের ১৭৯, ৬৪০ নং দাগসহ একাধিক দাগে ২১.৯৬ একর জমির ছাপানো রেকর্ড রয়েছে। ২০১১ সালে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ (আ.লীগ সহ-সভাপতি), সাধারণ সম্পাদক এসএম রাকিবুল আহসান (আ.লীগ সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান), ক্যাশিয়ার মীর আবদুল বারেক (আ.লীগ নেতা) একত্রিত হয়ে মসজিদের জমি হতে ২ কোটি টাকার জমি সাব কবলা দলিল মূলে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। এরপর ২০১৩ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ২০১৭ সালে অবৈধভাবে উল্লিখিত কমিটির তিন জন তিনটি সাব কবলা দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করে অনুমান ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনটি দলিল মূলে অন্যায়ভাবে মসজিদের জমি ক্রয় করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ মাহবুবুর রহমান, মহিলা আওয়ামী লীগ সদস্য সচিব বিলকিস জাহান ও তার স্বামী মো. ইউসুফ আলী। অবৈধভাবে ক্রয় করা মসজিদের জমির বর্তমান বাজার মূল্য অনুমান ১০ কোটি টাকা। এছাড়া মসজিদ নির্মাণে মুসল্লিদের দেয়া দানের ৮৪ লাখ টাকা কমিটির তিন জন মসজিদ ফান্ড থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল হক শাহিন অভিযুক্ত ৬ জনকে নোটিশ প্রদান করেছেন।
এদিকে মসজিদের একাধিক মুসল্লি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন মসজিদ ভবন নির্মাণ কাজ, ঈদগাহ মাঠ, ইমাম, মুয়াজ্জিন কোয়ার্টার ও অজুখানা নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ও স্থানীয় মুসল্লিদের অনুদান পাওয়ার পরও মসজিদ কমিটির উল্লিখিত তিন জন মসজিদ তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে নির্মাণ খরচ করেন। পুরাতন ভবন ও অন্যান্য ঘর বেশি টাকা নিলামে বিক্রি করে মসজিদ ক্যাশে কম টাকা জমা দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। ভবন নির্মাণে মুসল্লিদের দান, অনুদানের সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি। মসজিদ পুকুরের মাছ বিক্রি করে মসজিদ তহবিলে তারা জমা দেননি। এমনকি উল্লিখিত মসজিদ কমিটির তিনজন দায়িত্বে থাকাকালীন মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাবও বর্তমান কমিটিকে দেননি।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সাবেক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, ইমাম, মুয়াজ্জিন কোয়ার্টার নির্মাণ করেছি ৮-১০ বছর আগে। ১১ কানি জমি কিনেছি। একটা জমি নিয়ে একটু সমস্যা আছে। যা বর্তমান কমিটি চেষ্টা করলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমাধান করতে পারবে।
জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক ও অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল হক শাহিন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহম্মদ শহিদুল হক বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। জেলা ওয়াক্ফ পরিদর্শক অভিযোগের তদন্ত করছেন।