যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া কী বলছে
হোয়াইট হাউজের একজন কর্মকর্তা বলছেন, ফরাসি সরকারের এই উদ্যোগে বাইডেন প্রশাসন দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার ব্যাপারে সামনের দিনগুলোতে তারা ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা করবে।
ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি অস্ট্রেলিয়াও। তারা বলছে, ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ দুঃখজনক।
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেইন বলেছেন ফ্রান্সের হতাশ হওয়ার কারণ তারা বুঝতে পারছেন। তবে তারা আশা করছেন ফ্রান্সও "দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্ব অনুধাবন করবে।"
উল্লেখ্য যে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্বিগ্ন অস্ট্রেলিয়া।
নতুন এই জোট গঠনের ঘোষণা যে সময়ে দেওয়া হয়েছে সেটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণার ঠিক এক মাস পরেই অকাসের কথা ঘোষণা করা হলো।
দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যে যখন সন্দেহ তৈরি হচ্ছিল তখনই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার দুটো মিত্র দেশকে পাশে নিয়ে নতুন এই জোটের ঘোষণা দেওয়া হলো।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করছেন যে চীনকে টার্গেট করে অকাস জোট গঠন করা হয়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া
ফ্রান্সের এই অবস্থানের ফলে ইইউ জোটও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
প্রথমত, নতুন এই জোটের আলোচনায় শুধু ফ্রান্স নয় ইউরোপীয় ইউনিয়নও ছিল না। শুধু যে আলোচনায় ছিল না তা নয়, এই আলোচনার বিষয়েও তারা অজ্ঞাত ছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান এবং শীর্ষস্থানীয় একজন কূটনীতিক জোসেপ বোরেলও অকাসের বিষয়ে কিছু জানতেন না।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, এই আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণ না করা এবং এবিষয়ে তাদেরকে কিছু অবহিত না করা দুঃখজনক এবং ফরাসি সরকারের জন্য এটা কতো হতাশাজনক সেটা তিনি বুঝতে পারেন।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান বলেছেন, ইউরোপের এখন সজাগ হওয়ার সময় এবং এবিষয়ে তাদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো সামরিক শক্তি নয়, কিন্তু তারপরেও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লায়ান "ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা জোট" গঠনের আহবান জানিয়েছেন।
ব্রাসেলস থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জেসিকা পার্কার বলেছেন, "ইইউ যদি তার পেশী প্রদর্শনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়, তার পরেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কেন তারা সেটা করছে। এবং এই কাজ করাটাও তাদের জন্য সহজ হবে না।"
যুক্তরাষ্ট্রে দ্য জার্মান মার্শাল ফান্ড নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়ান লেসার বলেছেন, "ওয়ারশ, এথেন্স, প্যারিস অথবা বার্লিন- সবার দৃষ্টিতে তো কৌশল এক রকম হবে না।"
সুতরাং, সংক্ষেপে বলতে গেলে অকাস জোট গঠনের ঘোষণাটি ইইউর জন্য সময়োপযোগী নয়, এবং তারা যে এবিষয়ে অজ্ঞাত ছিল সেটা তাদের জন্য বিব্রতকর।
চীনের বক্তব্য
চীন অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। কিন্তু অকাস চুক্তির ফলে এই দুটো দেশের সম্পর্ক যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে চীন একে 'চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন' ও 'সংকীর্ণ মানসিকতা' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাঁও লিজিয়ান বলেছেন, এই জোট আঞ্চলিক শান্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে জোরদার করছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া- এই তিনটি দেশের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। এবং অকাস চুক্তিকে "স্নায়ু যুদ্ধ মানসিকতা" উল্লেখ করে বলেছেন, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থেরও ক্ষতি করছে।
চীনা গণমাধ্যমগুলোতেও একই মনোভাব ব্যক্ত করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা