শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) কারা অধিদপ্তরের এআইজি মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, নতুন কারা মহাপরিদর্শক নিয়োগের কথা আমরা শুনছি তবে কোনো প্রজ্ঞাপন পাইনি।
রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। জনপ্রশাসন থেকে প্রজ্ঞাপন প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে। এরপর সেখান থেকে তা আমাদের কাছে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. তরুণ কান্তি শিকদার বলেন, বর্তমান কারা মহাপরিদর্শককে সরিয়ে দেওয়া বা নতুন মহাপরিদর্শক নিয়োগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কাছে আসেনি। তাই এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।
গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আইজি (প্রিজন্স) হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠতে থাকে।
কারা সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ডিআইজি (প্রিজন্স) টিপু সুলতানের সহযোগিতায় তিনি দুর্নীতি মামলার আসামি সাময়িক বরখাস্ত আসামি ডিআইজি (প্রিজন্স) বজলুর রশীদকে পদায়নের সুপারিশ করেন।
বরিশাল বিভাগে বজলুরকে পদায়নের জন্য তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের কাছে একাধিকবার প্রস্তাব পাঠান। এ প্রস্তাব গ্রহণ না করে বরং বিষয়টি নিয়ে তার কাছে মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা তলব করে।
বর্তমান কারা মহাপরিদর্শক মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ- যোগদানের পর থেকেই তিনি আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা হিসাবে পরিচিত ব্রিগেডিয়ার মামুন একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের কাছে ডিআইজি তৌহিদুল ইসলাম, সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সুভাষ কুমার ঘোষ, জেল সুপার নেসার আলম, জেলার মাহবুবুল ইসলাম এবং ডেপুটি জেলার মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।
অভিযোগে বলা হয়- এসব কর্মকর্তার কারণে তিনি কারা অধিদপ্তরে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছেন না। দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেন। পাশাপাশি দুদকে পালটা অভিযোগ দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, একই মতাদর্শে বিশ্বাসী আইজি (প্রিজন্স) মামুন ও ডিআইজি (প্রিজন্স) টিপু সুলতান বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুনের অনিয়ম-দুর্নীতি অতীতের যে কোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কারাগারে বিএনপি ও জামায়াতপন্থি বন্দিদের তিনি বিশেষ সুবিধা দেন।
রফিকুল আমিনসহ ভিআইপি বন্দিরা কারাগারে বসেই জুম মিটিং করার সুযোগ পান। তার দুর্নীতির কারণেই কাশিমপুর কারাগারে বসে জঙ্গি সদস্য আল আমিন মোবাইল ফোনে পলাতক আসামি আনোয়ার আলী হৃদয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের সুযোগ পান।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর মামুন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের পার্ট-১ পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি কারাবন্দি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
সাঈদী বলেন, মামুন তুমি কেমন আছ। তুমি আইজি হয়েছ শুনে খুব খুশি হয়েছি।
সূত্রে জানা গেছে, কারা অভ্যন্তরে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বড় ক্ষেত্র হলো কারা ক্যান্টিন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ মূল্যে বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
এছাড়া কারাগারে বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পিসি বাণিজ্য, পদায়ন বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ বাণিজ্য এবং জামিন বাণিজ্যের নামে প্রভাবশালী চক্র বিপুল অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করে আসছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের তদন্তেও বিষয়টি উঠে এসেছে। কুষ্টিয়া জেলা কারাগার নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি দুর্নীতির ভয়াবহ সব তথ্য পেয়েছে।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়- শুধু কুষ্টিয়া কারাগার নয়, সারা দেশের কারাগারে একই চিত্র বিরাজ করছে। দুর্নীতির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে কারা অধিদপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা আহ্বান করার সুপারিশ করা হয়।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও কারা অধিদপ্তর সভাটির আয়োজন করেনি। এমনকি ১৯টি সুপারিশের অধিকাংশই বাস্তবায়ন করা হয়নি। সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দফা তাগিদপত্র দিয়েও কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, প্রতিবেদন দুটির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অবগত। ইতোমধ্যে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর প্রতিফলন দেখা যাবে।