হেফাজতে ইসলামের আলোচিত ১৩ দফা দাবির আন্দোলন নিয়ে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, সরকারের দিকে অস্ত্র তুলে, জিহাদ করে দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। রক্তপাত ও অস্ত্রের মহড়ায় বিশ্বাস করে না হেফাজতে ইসলাম। আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে ১৩ দফা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি।
২০১৩ সালে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে ইতিহাসের বড় জমায়েত হওয়ার পরও রক্তপাত হয়নি। হেফাজতে ইসলাম রক্তপাতে বিশ্বাসী নয়। সরকার পারলে আমাদের দাবি পূরণ করবে, না পারলে আল্লাহর কাছে জবাব দেবে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন এখনো চলমান। আমাদের যেসব দাবি সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব তা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সংবিধানে কিছু অংশ রয়েছে যা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব অংশ ইমানের জন্য ক্ষতিকর। এ অংশগুলো সংস্কারের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি। এ দেশের নাগরিক হিসেবে সরকারের কাছে সংবিধান সংস্কারের দাবি করতে পারি আমরা।
হেফাজতে ইসলাম ও সরকারের সম্পর্ক বিষয়ে তিনি বলেন, কওমিদের নিয়ে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় আমরা খুশি। সরকারের পতন কিংবা কাউকে গদিতে বসানো আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নয়। আমরা মুসলিম, কোরআন এবং হাদিস মেনে চলতে হবে। কোরআন পরিপন্থী কোনো আইন চাপিয়ে দিলে আমরা বিরোধিতা করব। আন্দোলন করব। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আলেমরা গদি (ক্ষমতা) চায় না। গদিওয়ালাদের (ক্ষমতাসীনদের) আলেম বানাতে চায়।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হেফাজতের আঁতাতের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। বরং কওমি আলেমরা জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে সব সময়। দেওবন্দের অন্যতম অলি আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আমরা তাঁর অনুসারী হিসেবে এখনো জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলি। তাই জামায়াতের সঙ্গে কওমিদের কোনো ঐক্য হতে পারে না।
আদর্শিক কারণেই কওমিদের সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। রাজনৈতিক স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করেছে। কিন্তু হেফাজতের সঙ্গে জামায়াতের এখনো কোনো জোট হয়নি। হেফাজতের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, অতীতের মতো ভবিষ্যতেও হেফাজতের ব্যানারে কাউকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।
হেফাজতের কমিটি গঠন নিয়ে মহিবুল্লাহ বলেন, হেফাজতের বর্তমান যে কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে তা সম্প্রসারণ করা হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে জেলা, উপজেলা, থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি করা হবে। কমিটি গঠনের আগে হেফাজতের বর্তমান নেতাদের মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে তা বিমোচন করা হবে।
এরই মধ্যে নেতাদের মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করতে কাজ করছেন কয়েকজন শীর্ষ আলেম। যারা কমিটির বাইরে রয়েছেন তাদের নিয়েই আগামীতে কেন্দ্রীয় এবং অন্যান্য কমিটি সম্প্রসারণ ও গঠন করা হবে।