স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, সবার বক্তব্যেই আন্দোলন নামার বিষয়টি উঠে এসেছে। আমরা সকল নেতাদের উদ্দেশে বলেছি, নির্বাচন নিয়ে কোনো আলাপ হবে না। আমাদের কারও বক্তব্যে যেন নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা না আসে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ফাঁদে আমাদের পড়া যাবে না। আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে আগে নিরপেক্ষ সরকার আদায় করতে হবে।
দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মূলত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা কে কী করেছেন, সে বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা আগামী দিনে কমিটিতে পদ নিশ্চিতের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। নেতাদের কেউ-কেউ প্রয়োজনে রক্ত দেয়ার কথা বললেও শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তা নিরুৎসাহিত করে কমিটমেন্ট নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে সমালোচনা: বৈঠকে বেশ কয়েকজন নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করাটা ভুল ছিল বলে মত দিয়েছেন। দলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তারা বলছেন, এবার দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বেই আন্দোলন বা নির্বাচনের পথে এগোতে হবে। ২০১৮ সালের মতো আর হায়ার করা নেতার নেতৃত্বে ভোটে যাওয়া যাবে না।
একক আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শ: বৈঠকে অনেক নেতাই বিএনপিকে এককভাবে আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেন, অনেক হয়েছে। এবার ডু অর ডাই চিন্তা করেই মাঠে নামতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের নির্বাচন করতে দেয়নি। আবার এখন সরকার নতুন খেলা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিকে এককভাবে আন্দোলনে যেতে হবে। আন্দোলন শুরু করার আগে যেসব নেতা দেশের বাইরে চিকিৎসা নেন, তাদের আগেই চিকিৎসা নিতে হবে। আন্দোলন চলাকালে সব নেতার পাসপোর্ট স্থায়ী কমিটির নেতাদের কাছে জমা দিতে হবে।
জামায়াত প্রসঙ্গ: বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর বিষয়টি নিয়েও দলের সুস্পষ্ট অবস্থান ঘোষণার পরামর্শ দেন একাধিক নেতা। দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্যের মত হলো, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি’র সম্পর্ক রাখা নিয়ে নতুন করে বিবেচনা করা উচিত।
তারা বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে আবার নির্বাচন হলে জামায়াত বিএনপি ছাড়াই নির্বাচনে চলে যাবে। তাই জামায়াতের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বহির্বিশ্বে আমাদের বন্ধু ও শত্রু চিহ্নিত করতে হবে।
অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ: বৈঠকে অংশ নেয়া বিএনপির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে যারা দলের জন্য কাজ করতে আগ্রহী নন, তাদের নিজ থেকে পদ-পদবি থেকে সরে যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা। আন্তরিক, আগ্রহী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা যেন সংগঠনে এসে কাজ করতে পারেন তিনি সেই সুযোগ করে দিতে বলেন।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, বিএনপির অঙ্গসংগঠন কৃষক দল, শ্রমিক দল ও মহিলা দলের বর্তমান নেতৃত্বের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে এই তিনটি সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে অঙ্গ সংগঠনগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। তারা বলেছেন, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে যখনই আন্দোলনের ডাক আসবে, তখনই তারা আন্দোলনে নামার জন্য প্রস্তুত আছেন।
এছাড়া অনেকে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন নিয়েও কথা বলেন। বক্তব্যে মহিলা দলের এক নেত্রী বলেন, মহিলা দলকে শক্তিশালী করতে সংগঠনের বাইরে থাকা অনেক নারী নেত্রী ও সাবেক এমপিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। তাই নতুনভাবে এ সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা বলেন, সারা দেশের জনগণ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের ভোটাধিকার, মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করতে বিএনপিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। ওই আন্দোলনে তার মতো সিনিয়ররাও সাধ্যমতো ভূমিকা পালন করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপি যে বৈঠকগুলো করেছে এটাতো দলের সাংগঠনিক তৎপরতার মধ্যেই পড়ে। করোনা পরিস্থির কারণে আমাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি দীর্ঘদিন। তাই আমরা সবার সঙ্গে বসে মতবিনিময় করেছি। এ আলোচনায় আমরা উপকৃত হয়েছি। অনেক দিন পরে তাদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি।
এদিকে তৃতীয় দিনের ধারাবাহিক বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের তিনটি সভা শেষ হলো। আগামী শনিবার আমাদের স্থায়ী কমিটির মিটিং আছে। এই মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো যে, আরও কয়েকটি সভা করবো কিনা। কারণ আমাদের এখনো কিছু কার্যনির্বাহী সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় বাকি রয়েছে। তাদের নিয়ে এবং জেলা পর্যায়ের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিদের নিয়ে মিটিং করার কথা আছে। আমরা হয়তো সেই বিষয়গুলো সিদ্ধান্ত নেবো। পরে আমাদের পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে। আমরা দেখি যে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যদি সিদ্ধান্ত হয় পরবর্তীতে এ মিটিংগুলো আমরা করবো।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমাদের এসব ধারাবাহিক বৈঠকে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কী করণীয় এবং আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব এসব বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন এবং নেতাদের মতামত শুনেছেন।
তিনটি মিটিংয়ে কি কি পরামর্শ এসেছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা সময়মতো জানতে পারবেন। আমরাই আমাদের প্রয়োজনেই তখন আপনাদেরকে জানাবো।