সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
নবজাতক ছেলের মুখ দেখতে পারলেন না প্রসূতি মা
বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:০৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

অসহ্য যন্ত্রণা সয়ে দশ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করেছে যে সন্তানকে। সেই সন্তান পৃথিবীর আলোতে আসার পরে মায়ের সাথে দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া। এমনকি জনমদুখীনি মায়ের একফোঁটা দুধও পান করতে পারেনি সে। মাও পারেনি একটি বারের জন্য নাড়ী ছেড়া ধন ছেলের পবিত্র মুখটি দেখতে। ১০ মাস ১০ দিন যে সন্তানকে ঘিরে স্বপ্নের নানা জাল বুনেছেন তিনি। ভূমিষ্ঠ হওয়ার দু/চার মিনিটের মধ্যে বিচিত্র এ ধরণী থেকে বিদায় নেন মা। সন্তান তখন দাদীর কোলে। সিজারিয়ান অপারেশন করার সঙ্গে সঙ্গেই সন্তানকে বের করে আনা হয় ওটি রুম থেকে। কেননা তার মা গুরুতর অসুস্থ। 

এমনই এক মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটে গেলো বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে। প্রসূতির নাম লাভলী বেগম (২৫)। স্বামী জসিম হাওলাদার পেশায় একজন ভ্যানচালক। বাড়ি উপজেলার  চাখার ইউনিয়নের বড় ভৈৎসর গ্রামে। প্রসব বেদনা ওঠায়  বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি স্ত্রীকে নিয়ে আসেন জসিম। ওই সময় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম কবির হাসান রোগীকে দেখে হাসপাতালের সামনে নির্ধারিত একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের নাম বলে সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট দিয়ে পরীক্ষা করানোর কথা বলে ভর্তি হতে বলেন। 

শনিবার (১১সেপ্টেম্বর) সকালে লাভলী বেগমকে এক নার্স এসে বলেন আজ আপনার সিজারিয়ান অপারেশন করা হবে। স্বামী ভ্যানচালক জসিমকে ওষুধ নিয়ে আসতে বললে জসিম চলে যান হাসপাতালের সামনের  ফার্মেসীতে। স্বামীর আসতে একটু দেরী হচ্ছে দেখে স্ত্রী লাভলী তাকে খুঁজতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দোতলা থেকে হেটে নিচে নেমে আসেন। তখন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন প্রসূতি লাভলী বেগম। সিজারিয়ান  অপারেশনের জন্য তার কিছু সময় পরই তাকে নেয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। স্বামী ও অন্যান্য স্বজনদের সাথে ওটাই ছিলো লাভলীর শেষ দেখা। এসময় অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন ডা. এস এম কবির হাসান, ডা. আশিকুর রহমান ও ডা. সৈয়দ নাজমুল হাসান। অপারেশন শেষে এক সেবিকা সদ্যজাত সন্তানকে দাদীর কোলে দিয়ে বলেন মায়ের অবস্থা ভাল না। ৪/৫ মিনিট পরে জানানো হয় প্রসূতি আর বেঁচে নেই। এ যেন, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো অবস্থা স্বামী ও স্বজনদের। এমনটাই জানালেন লাভলীর স্বামী জসিম হাওলাদার। 

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাড়াহুরো করে কোন ধরনের ছাড়পত্র না দিয়েই তাদেরকে সরকারী অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাড়িতে। 

মৃত লাভলীর ভাই মোঃ বাবলু  জানান, তাদেরকে হাসপাতাল থেকে এক প্রকার জোর করেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা  ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, প্রসূতি লাভলী বেগমকে আরো এক মাস পূর্বে হাসপাতালে ভর্তির জন্য বলা হয়েছিল কিন্তু ভর্তি হননি। লাভলীর অপারেশন হওয়ার পরে তার  রক্তচাপ বেড়ে যায় এক পর্যায়ে তার  হার্ট এ্যাটাক হয়। তাদের সকল ধরণের চেস্টা ব্যর্থ হয় এবং তার মৃত্যু হয়। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টায় হতভাগী লাভলীর লাশ দাফন করা হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে বরিশাল সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মনোয়ার হোসেন জানান,যদি সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের অবহেলায় প্রসূতি মারা  গেলে অবশ্যই তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে সদ্যজাত সন্তানকে কোলে করে মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে অনবরত কাঁদছেন অসহায় পিতা জসিম হাওলাদার। যে করুন দৃশ্য সবাইকে কাঁদাচ্ছে। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]