রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতির বাস্তবায়ন চান গবেষকরা
গৃহশ্রমিক অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান
রতন বালো
প্রকাশ: সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম | অনলাইন সংস্করণ

গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা-২০১৫ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস পরিচালিত ‘সুনীতি প্রকল্প’র গবেষকরা।

তারা বলেছেন, গৃহকর্মীর অধিকার বাস্তবায়িত হলে গৃহশ্রমিকরা ঘটাবে উন্নয়ন। এজন্য গৃহশ্রমিকদের অধিকারের ব্যাপারে সরকার, গবেষকসহ সর্বস্তরের নিতীনির্ধারকদের সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

ঢাকা শহরে কর্মরত গৃহশ্রমিকদের উপর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গৃহশ্রমিকদের গড় মজুরি প্রতি মাসে ৪ হাজার ৫০০ টাকার কিছু বেশি এবং এদের ৯০ শতাংশই হাজার টাকার কম মজুরি পেয়ে থাকেন। তবে যেসব গৃহশ্রমিকের কারিগরি প্রশিক্ষণ রয়েছে তাদের গড় আয় অপ্রশিক্ষিতদের তুলনায় ভালো বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এছাড়া নিয়োগকারীর সাথে কোন লিখিত চুক্তি নেই ৯৯ শতাংশের বেশি গৃহশ্রমিকের। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের জন্য কোন ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই। এমনকি সবেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটিরও ব্যবস্থা নেই। 

এদিকে ২৮.২ শতাংশ গৃহশ্রমিকের মজুরি হ্রাস পেয়েছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়। অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা’র সহায়তায় ‘সুনীতি’ প্রকল্পের আওতায় ২৮৭ জন গৃহশ্রমিকের ওপর ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি বাস্তবায়ন নিরীক্ষা এবং উত্তরণের বিষয়ক’ শীর্ষক এই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী অন্যান্য সংগঠনসমূহের মধ্যে রয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযান, হ্যালোটাস্ক, নারী মৈত্রী, রেড অরেঞ্জ ও ইউসেপ বাংলাদেশ। বিল্স পরিচালিত এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ছিলেন অনাবাসিক (লিভ আউট) এবং ৪০ শতাংশ ছিলেন আবাসিক (লিভ ইন) গৃহশ্রমিক। সরকারের মন্ত্রিসভা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ অনুমোদন দেয়। যেখানে নিয়োগকর্তা, কর্মচারী এবং সরকারের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট সংজ্ঞাসহ ১৬ টি বিধান রাখা হয়েছে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১৪ শতাংশ গৃহশ্রমিক সরকার ঘোষিত এই আইন সর্ম্পকে একেবারেই অজ্ঞ। এমনকি তাদের নিয়োগকারীদেরও এবিষয়ে কোন ধারণা নেই। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, আবাসিক গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ৩৮.৬ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। আইনের চোখে যারা শিশু শ্রমিক।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিলস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিলসের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের প্রকল্প সমন্বয়কারী গীতা রাণী অধিকারী, গবেষণা পরিচালনাকারী টিমের প্রধান জাকির হোসেন খান, প্রকল্প সমন্বয়কারী ও বিলসের উপপরিচালক মো. ইউসুফ আল-মামুনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংগঠনসমুহের নেতৃবৃন্দ, গৃহশ্রমিক প্রতিনিধি ও মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নইমুল আহসান জুয়েল তার লিখিত বক্তব্যে জানান, ৭২.২ শতাংশ গৃহশ্রমিকের মজুরি কাজের ধরনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে, এ ছাড়াও কর্মঘণ্টার ওপর ভিত্তি করে ৬.১ শতাংশের এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ৮.১ শতাংশের মজুরি নির্ধারিত হয়। আবাসিক গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ২০ শতাংশের মজুরি পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তবে এই সব আবাসিক গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ১৩.৬ শতাংশ কোন মজুরি পান না, তারা শুধু থাকা ও খাওয়ার বিনিময়ে শ্রম দিয়ে থাকেন। তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সকল গৃহশ্রমিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন তাদের গড় আয় অপ্রশিক্ষিতদের তুলনায় কিছুটা ভালো এবং যেসব গৃহশ্রমিক বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা গৃহস্থালি সম্পর্কিত জিনিসের উপর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন তাদের মাসিক আয়  ৯ হাজার টাকার উপরে। যেখানে গড় মজুরি ৪ হাজার ৬২৯ টাকা।

গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন জানান, গৃহশ্রমিকদের মাত্র ০.৭ শতাংশের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের সাথে লিখিত চুক্তির কথা জানা যায়। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, বেশিরভাগ আবাসিক গৃহশ্রমিক (৫১.৩ শতাংশ) তাদের স্বজনদের দ্বারা নিয়োগ পেয়েছেন এবং বেশিরভাগ অনাবাসিক গৃহশ্রমিক (৪৩.৪ শতাংশ) অন্যান্য গৃহশ্রমিকের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়াও ৬৪ শতাংশ গৃহশ্রমিকের কোন সাপ্তাহিক বা মাসিক ছুটি নেই। আবাসিক গৃহশ্রমিকদের মধ্যে ৩৮.৬ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নীচে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

এদিকে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, ৩১.৫৮ শতাংশ আবাসিক এবং ৩৬.৪২ শতাংশ অনাবাসিক গৃহশ্রমিক বলেছেন, তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক চাপ নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জবরদস্তিমূলক শ্রম দিতে হয়। যার ভেতরে আবাসিক গৃহশ্রমিকদের ৪১.২৩ শতাংশ এবং অনাবাসিকদের ২৪.৮৬ শতাংশ বলেছেন, তারা গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। ১৮ বছরের নীচে যাদের বয়স, তাদের ৫০ শতাংশই শারীরিক মানসিক এমনকি যৌন নির্যাতনেরও  শিকার হন। 

প্রকল্প সমন্বয়কারী গীতা রাণী অধিকারী জানান, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ তে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন ক্রমেই গৃহকর্মীর প্রতি কোনো প্রকার অশালীন আচরণ অথবা দৈহিক আঘাত অথবা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। তবে দেখা গেছে, গৃহশ্রমিকদের কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী তাদের অভিযোগ করার সুযোগ খুবই সীমিত।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমাদের দেশে গৃহশ্রমিকদের অবদান গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) এর অন্তর্ভুক্ত নয়। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত শ্রমিকরা কল্যাণ তহবিলের পরিধিতে থাকলেও গৃহশ্রমিকদের জন্য এ জাতীয় কোনও সুনির্দিষ্ট তহবিল নেই।

গবেষণা পরিচালনাকারী টিমের প্রধান জাকির হোসেন খান জানান, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ এর মধ্যে যে সব সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত হয়েছে তা হলো, শ্রম সম্পর্কিত আইন এবং জিডিপি প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে গৃহশ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি না দেওয়া, সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারিত না থাকা, গৃহশ্রমিকদের পদ্ধতিগত পরিসংখ্যানের অনুপস্থিতি, ট্রেড ইউনিয়ন বা সমিতি গঠনের বিধানের অভাব, গণমাধ্যমে প্রচার ও নিরক্ষরতার কারণে নীতি সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতনতার অভাব, হয়রানি, নির্যাতন, জবরদস্তিমূলক শ্রমের জন্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোতে নিবন্ধণ ও তথ্যের অভাব, মনিটরিং সেলের কার্যকারিতার অভাব এবং সামাজিক অধিকারের অভাব।

প্রকল্প সমন্বয়কারী ও বিলসের উপপরিচালক মো. ইউসুফ আল-মামুন সম্মেলনে জানান, আমাদের নীতিনির্ধারক এবং ট্রেড ইউনিয়ন একত্রে মিলে সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ প্রদান করতে পারে। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে কোভিড-১৯ সংকট এবং গৃহকর্মীদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]