#মধ্য অক্টোবরেই খুলছে বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষামন্ত্রী #দায়িত্ব অবহেলায় মাউশির কর্মকর্তা বরখাস্ত
দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কারণ এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে সন্তুষ্টিতে আঘাত হেনেছে এমন খবরও রয়েছে। সরকারের কড়া নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কোন কোন প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অভিভাবকরাও মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করিয়েই সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে হবে। ফিরে যাবেন অভিভাবকরা। এরপর ক্লাশ শেষে অভিভাবকরা এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে যাবেন। কিন্তু প্রথম দিনেই দেখা গেল আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে অভিভাবকদের স্কুলের সামনে জটলা করতে। এভাবেই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রথম দিন পার করেছে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। চোখের সামনে এসব ঘটলেও নিরব ছিল প্রশাসন।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে টানা প্রায় ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন একটি কক্ষ অপরিষ্কার থাকায় আজিমপুর গভার্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তদারকির দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কর্মকর্তা সেলিনা হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে এ স্কুলের পাঠদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি দেখতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এ নির্দেশ দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘একটি কক্ষ অপরিষ্কার পেয়েছি।’
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ হাসিবুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় যখন পরিদর্শনে আসেন, তখন তিনি আমদের কলেজের একটি স্টোর রুমে গিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমি তখন বলতে পারিনি যে এটা স্টোর রুম।’
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপুমনি। যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও উৎকন্ঠা দেখা গেছে অনেক অভিভাবকদের মধ্যে। করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ উর্ধ্বগতিতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় এনে দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে রোববার পর্যন্ত প্রায় কুড়ি মাস (এক বছর ৮ মাস) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে সতর্ক করে দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। এসময় তিনি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের ও তার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘এখন থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সারপ্রাইজ ভিজিট চলবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয়, তাহলে অষ্টম জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা হতে পারে। অষ্টম শ্রেণিতে এখন সশরীরে সপ্তাহে একটি ক্লাস হলেও অনলাইন, টিভি ও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পড়াশোনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।’
শিক্ষাবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতি শিক্ষাবর্ষ দু-এক মাস বাড়ানো হবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এখন কী কী ঘাটতি হয়েছে বা কতটুকু হয়েছে, সেটা মূল্যায়ন করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলার সময় ফটকের বাইরে ভিড় না করতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এদিকে দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রোববার দুপুরে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেস্থেশিওলজি) পদে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের যোগদান এবং ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ, যা এখন সারা বিশ্বে প্রসংশিত। করোনা নিয়ন্ত্রণ কোনো ম্যাজিকের মাধ্যমে সম্ভব হয়নি। এটা কাজের ফল, প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত দিকনির্দেশনা এবং চিকিৎসক, নার্স ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ আজ ভালো অবস্থানে আছে। দেশে করোনা সংক্রমণের হার ৭. ০৩ শতাংশতারই প্রমাণ দেয়। তবে এটা যে কোনো সময় বাড়তে পারে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হবে, সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো আছে। ৬ শতাংশ গ্রোথ রেট আছে। খাদ্যের অভাব হচ্ছে না। বিদেশে লোক যাওয়া-আসা করছে। দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে। সংক্রমণের হার কমছে। ফলে স্কুল-কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে আসা উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার দিকে সর্বোচ্চ নজর দিয়েছে। দেশের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বার রঙিন বেলুন দিয়ে সজ্জিত করার পাশাপাশি সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বরণ করতে শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রস্তুতিও ছিল চোখে পড়ার মত। শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দূর করতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দেখা গেছে উৎসাহ উদ্দীপনা। শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে তারা নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। সারিবদ্ধভাবে শ্রেণিকক্ষে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অভিভাবক সকলের মুখেই ছিল মাস্ক। শিক্ষার্থীরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে। শ্রেণিকক্ষেও ছিল পারস্পরিক নিরাপদ দূরত্ব। প্রতি বেঞ্চে জেড পদ্ধতিতে একজন করে শিক্ষার্থীরা আসন গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে,শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ থেকে শিক্ষকের পাঠদানের স্থানও ছিল নিরাপদ দূরত্বে। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা স্বশরীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার ঘোষণা এখনো না এলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ঘোষণা আসতেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। এদিকে শিক্ষার্থীরাও বিশেষ করে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের শিক্ষার্থীদের মাঝেও স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পাঠদান কর্মসূচি কঠোরভাবে মনিটরিংসহ নানা সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাউশি গত বৃহস্পতিবার নতুন এক নির্দেশনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানসম্মত কার্যপ্রণালি বিধি (এসওপি) নির্ধারণ করে দিয়েছে। নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক-পরিচালনা কমিটি এবং মাঠপ্রশাসন কর্মকর্তাদের জন্য ৬৩টি নির্দেশনা রয়েছে। যারমধ্যে অভিভাবকদের আটটি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষে আসবে। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে। অন্যদিকে, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।