৬ ফুট উঁচু করার স্থলে ৩০-৩৫ ফুট ভরাট, জেলা প্রশাসকের নিদের্শনা না মানার কৃষি জমি মালিকদের ক্ষোভ
মোংলা বন্দরের ইনারবার ড্রেজিংয়ের ২ টি কম্পার্টমেন্ট কাজ বন্ধ করে দিয়েছে কৃষি জমি ক্ষগ্রিস্ত মালিক পক্ষ।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে জয়মনির কাটাখালী এলাকায় ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।
পশুর চ্যানেল খননের কথা বলে কৃষি জমি ও মৎস্য খামারের ক্ষতিপূরন না দিয়ে জোরপূর্বক ডাইক নির্মান ও বালু ডাম্পিং শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ড্রেজিংয়ের নিয়মানুযায়ী কাজ না করে ৬ ফুট বালু ভরাটের উচ্চতার স্থলে জোর পুর্বক বন্দরের সহায়তায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উচু করছে চায়না কোম্পানী বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
জমির মালিক এলাকাবাসী বলছেন, মৎস্য ঘের, ফসলি জমি ও জলাভূমির শ্রেনী বিন্যাশে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র্য, শেষ হবে স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা। আর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মৌসুমে উড়ো বালুর আগ্রাসনে বসবাসের অনুপযোগি পরিবেশের শংকায় চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন শত শত গ্রামবাসী।
তাদের দাবী, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চীনা কোম্পানি পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ফসলি জমি ও মৎস্য ঘেরে বালু ডাম্পিং করে পাহাড় তৈরী করছে। ভবিষ্যতে এ জমিতে কোন কৃষি বা শিল্প প্রতিষ্ঠান করা সম্ভাব হবেনা। এ অবস্থায় যতই দিন যাচ্ছে জমির মালিক-সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ আগামন-নির্গমনে চ্যানেল সচল রাখতে আর মোংলা সমুদ্র বন্দরকে উন্নয়নে ৭শ কোটি টাকার আউটার ড্রেজিংয়ের পর এবার পশুর নদীতে ইনার বার ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চীনা কোম্পানী জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি ঠিকাদার হিসেবে পশুর চ্যানেল খননের কাজটি করে যাচ্ছে।
গত ১৩ মার্চ নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেক ও উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭শ ৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর চ্যানেলের ড্রেজিং করার জন্য এ প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিংকৃত মাটি পশুর নদীর তীরবর্তী জমিসমূহে ফেলার জন্য ১৫শ একর জমির অনুকুলে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি থেকে মালিকানা ৭শ একর জমি হুমুক দখলে নেয়ার পরিকল্পনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
৬নং চিলা ইউনিয়নের ১১নং চিলা মৌজার বিভিন্ন জমির সাড়ে ৩শ একর জমি মালিকানা। আর সাড়ে ৩শ একর রয়েছে কয়েকটি কোম্পানীর ক্রয়কৃত জমি।
কয়েকটি কোম্পানীর সাড়ে ৩শ একর জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের না জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও চায়না কোম্পানীর লোকজন জোর পুর্বক ঠিকাদার কোম্পানীর মাধ্যমে ভেরীবাধ নির্মান শেষে বালু ভরাটের কাজ শুরু করে।
যেসকল জমিতে মৎস্য ও ধান চাষ চলা অবস্থায় তাদের সেই ঘেরের মধ্যে বালু ভরাট করে ব্যাপক ক্ষতি করেছে বলে জমির মালিকদের অভিযোগ।
যে সকল জমিতে বালু ভরাট করে ফেলছে যেমন, গ্রামবাসীর মৎস্যঘর, বসত বাড়ী ও কৃষি জমি, সে সকল জমির অধিগ্রহণ করা ছাড়াই এবং ওই জমির মালিকদের অনুকুলে কোন ক্ষতিপুরণ পরিশোধ না করে অন্যায়ভাবে জোর পূর্বক কৃষি জমি ও মৎস্য ঘেরে বালু ভরাট করে নষ্ট করে দিয়েছে।
এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের লিখিত নিয়মানুযায়ী রাস্তা লেভেল থেকে যেখানে ৬ ফুট উচু করার কথা থাকলেও সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট উঁচু করে মাটি ভরাট করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এভাবে উচু করে জমিতে মাটি বা বালু ফেললে আগামী ১০০ বছরেও উক্ত জমিতে কোন প্রকার ফসল ফলানো সম্ভব হবে না বা কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান করা সম্ভব না বলে দাবী মালিকদের। বালু ভরাটের ফলে এলাকায় বসবাস করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসীর অনেকেই।
তাই দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের ফলে গত ৩০ আগাষ্ট সোমবার দুপুুরে জেলা প্রশাসকের একটি প্রতিনিধি দল ড্রেজিং এলাকায় পরিদর্শনে আসে।
এসময় ওয়েষ্টান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাঃ লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ লুৎফর রহমানসহ ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই জেলা প্রশাসকের কাছে সব কিছু খুলে বলেন। এসময় জেলা প্রশাসক বালু ভরাটের দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায় এবং কঠোর ভাবে ড্রেজিং কোম্পানী ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে নিদেশে প্রদান করেন।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান বলেন, গ্রামবাসীর অভিযোগ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যা দেখলাম, তাদের অভিযোগ সম্পুর্নটাই সত্য। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সরকারের নিয়মানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য পাওনাদি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবার সম্মিলভাবে তা পরিশোধ এবং রাস্তা লেবেল থেকে ৫-৬ ফুট বালু ভরাটের উচু করা করার নির্দেশনা প্রদান করেন।
এছাড়া যে জমিতে বেশী বালু ভরাট হয়েছে তাতে ষ্কেভেটর দিয়ে তা কমিয়ে লেভেল ঠিক রাখার জন্য বলেন জেলা প্রশাসক।
ওই কৃষি জমির মালিক ও কোম্পানীর প্রতিনিধি লুৎফর রহমান আরো বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শওকাত হোসেন জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী জমির মালিকগণ নিয়মানুযায়ী জমির ক্ষতিপুরনের টাকা দেয়া হবে এবং যে সকল জমিতে বেশী বালু ভরাট করা হয়েছে তাদেরও ক্ষতিপুরন বা লেভেল ঠিক করে দেয়া হবে বলে জানায় লুৎফর রহমান।
ওয়েষ্টান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাঃ লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ লুৎফর রহমান আরো বলেন, উপজেলা ও জেলা প্রশসকের নির্দেশনা অমান্য করে বালু ভরাট অব্যাহত রেখেছে চায়না কোম্পানীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
তাই যেখানে বেশী বালু ভরাটের ব্যাপারে কেটে লেভেল করার কথা সেখানে আরো ১০ থেকে ১৫ ফুট উঁচু করে ভরাট করছে তারা।
জমির প্রকৃত মালিকদের নির্দেশনায় রোববার দুপুরে বন্দরের ড্রেজিংয়ের ২ ও ৩ নং কম্পার্টমেন্টের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে বন্দর চায়না কোম্পানীর কর্তৃপক্ষকে।
যতদিন জমির ক্ষতিপূরন ও বালু ভরাট রাস্তার লেভের ৫-৬ ফুটের মধ্যে আনা না হবে ততক্ষন পর্যন্ত ড্রেজিয়ের বালু ফেলতে দেয়া হবে না বলে জানায় লুৎফর রহমান।