রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) পাঁচটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ যারা ব্যবহার করেন, তাদেরকে সাশ্রয়ী হতে হবে। দেশে এখন অনেকে অর্থশালী, সম্পদশালী হয়ে গেছেন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, আমরা যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি, তাতে খরচ অনেক বেশি।
তিনি বলেন, গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য সেখানে কিন্তু ব্যাপকহারে ভর্তুকি দিচ্ছি। উৎপাদনের যে খরচ, সেই খরচটা কিন্তু আপনাকে বিল হিসেবে দিতে হচ্ছে না এবং অনেক কম টাকা বিল দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়নের অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটার প্রচার পায়নি। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক শাসকেরা উন্নয়ন না করলেও ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। ঠিক একইভাবে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সময়কার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর বারবার ক্ষমতাবদল। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে একের পর এক… ১৯টা ক্যু হয়েছে এই দেশে। ক্ষমতা সেনানিবাসে, সামরিক শাসকদের হাতে। ডিরেক্টলি বা ইনডিরেক্টলি। অভার্টলি অর কভার্টলি। তাদের হাতেই ক্ষমতা। ক্ষমতাকে তারা ভোগের বস্তু বানিয়েছে। কিছু চাটুকারের দল, তোষামোদি-খোশামোদি সৃষ্টি করে তাদেরকে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। দেশের মানুষের কল্যাণে বা উন্নয়নে তাদের কোনো অবদান ছিলও না। কিন্তু প্রচার পেয়েছে ব্যাপক।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু এত উন্নয়নের কাজ করে গেছেন। সেখানে ঠিক উল্টো প্রচার করা হত। যেটা এখনও আমি এত উন্নয়ন করার পরেও কিছু কিছু লোকের মুখে, কিছু কথা যখন শুনি। সেই সব সুরের প্রতিধ্বনিটাই যেন আমি শুনতে পাই। সেই সব শ্রেণির লোকেরাই কিন্তু সমালোচনা কিংবা বলেই যায়। যদিও আমি এসব পরোয়া করি না। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের কাজ করতে হবে। কারণ যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছেন সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশেষ আইনও আমরা করেছি। যদিও এসব কারণে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। শুধু সমালোচনা না ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলাও দিয়েছিল। যে কয়টা ভালো কাজ করেছি, তার সবকয়টার জন্য মামলা খেয়েছি। আবার ২০০৭ সালেও মামলা খেয়েছি। আমাদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টাও (তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী) আমার সঙ্গে আসামি ছিলেন। আমরা কাজও করেছি। আবার এই ধরনের হয়রানিও শিকার হয়েছি। কিন্তু থেমে থাকিনি।
দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে জাতিকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে দেয় এমন কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলবে। কারও সামনে মাথা নত করবে না। সে লক্ষ্য নিয়েই তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নে আমরা নানা পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে দেশের উন্নয়নের গতিটা এগিয়ে নিয়ে যাবে, সেটাই আমরা চাই। এমন কেউ না আসে, যাতে আবার এই বাংলাদেশকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে সম্মানের সাথে যাতে চলমান থাকে সেই পরিকল্পনা আমরা করে দিয়েছি।
ভোরের পাতা/কে