গত বুধবার তালেবানের সংস্কৃতি বিষয়ক কমিশনের উপ-প্রধান আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক অস্ট্রেলিয়ার এসবিএস রেডিও পাশতো-কে বলেছিলেন, মেয়েদের খেলাধুলা করার আবশ্যকতা নেই৷তালেবানের আমলে আফগানিস্তানের নারীরা আবার খেলাধুলার অধিকার হারাবেন- এমন ইঙ্গিত ছিল তার কথায়৷ ফলে ক্রীড়াবিশ্বে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় দ্রুত৷
আগামী নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের পুরুষ ক্রিকেট দল৷ কিন্তু তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের উপ-প্রধানের বক্তব্য শুনে অস্ট্রেলিয়া জানিয়ে দেয় আফগান নারীদের খেলাধুলার অধিকার কেড়ে নেয়া হলে হোবার্টে অনুষ্ঠেয় আফগানিস্তান-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচ বাতিল করা হবে৷ অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইনও তার অসন্তোষ এবং ক্ষোভের কথা জানান কঠোরভাবে৷ পেইন মনে করেন, নারীদের অধিকার কেড়ে নিয়ে আফগানিস্তান যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল পাঠায়, তাহলে অন্য দেশগুলোর উচিত হয় তার প্রতিবাদে আসর থেকে নিজেদের দল প্রত্যাহার করে নেয়া অথবা আফগানিস্তান দলকে বয়কট করা৷
নারী ক্রীড়াবিদদের বিষয়ে তালেবানের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত আইসিসিতে আফগানিস্তানের পূর্ণ সদস্য পদকেও ফেলেছে হুমকিতে৷
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী টেস্ট খেলুড়ে প্রতিটি দেশে নারীদের সক্রিয় দলও থাকতে হবে৷ তাই নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলে আফগানিস্তানের পূর্ণ সদস্যপদও থাকবে কিনা এ বিষয়ে নভেম্বরের বোর্ড মিটিংয়েই সিদ্ধান্ত নিতে চায় আইসিসি৷
এমন চতুর্মুখী চাপের মুখে আগেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিল আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড৷ অস্ট্রেলিয়াকে হোবার্ট টেস্ট বাতিল না করার অনুরোধ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বোর্ড বলেছিল, ‘‘আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিবেশ পরিবর্তনে আমরা অক্ষম'', তাই ‘‘আমাদের একা করে দেবেন না৷''
কিন্তু আফগান ক্রিকেট বোর্ডের এই অনুরোধ হোবার্ট টেস্ট বাতিল বাতিল হওয়া ঠেকাতে পারলেও আফগানিস্তানের আইসিসির সদস্যপদ খারিজ হওয়ার আশঙ্কা দূর করতে পারতো না৷
তবে ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিজুল্লাহ ফাজলি নারী ক্রিকেটারদের সম্পর্কে যা বলেছেন তা সত্যি হলে আফগানিস্তানের ক্রিকেট আকাশে দেখা দেয়া কালো মেঘ কেটে যেতেই পারে৷ শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার এসবিএস রেডিও পাশতো-কেই তিনি বলেন, আফগানিস্তানে মেয়েরা ক্রিকেট খেলতে পারবে৷
কীভাবে সেটা সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদ শিগগিরই তার একটা রূপরেখা দাঁড় করাবে এবং ‘‘খুব তাড়াতাড়িই আমরা এ বিষয়ে আপনাদের ভালো একটা খবর দেবো৷ নারীদের কীভাবে ক্রিকেট খেলার সুযোগ দেয়া হবে তা-ও জানিয়ে দেয়া হবে খুব তাড়াতাড়ি৷''
সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আফগানিস্তানের নারী ক্রিকেটাররা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন৷ তালেবান তাদের খুঁজে বের করতে কাবুলের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে৷ তবে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান এসবিএস রেডিও পাশতো-কে বলেন, ‘‘নারী ক্রিকেট কোচ ডায়না বারাকজাই এবং তার খেলোয়াড়রা নিরাপদ আছেন৷ নিজেদের দেশেই আছেন তারা৷ অনেক দেশ তাদের আফগানিস্তান ছাড়তে বলেছে, কিন্তু তারা আফগানিস্তান ছেড়ে যাননি৷'' সূত্র: ডয়চে ভেলে