নির্দলীয় সরকারের কোনো ভিত্তি নেই: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ
প্রকাশ: শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:৪২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার বা নির্দলীয় নির্বাচন কমিশনের আসলে কোনো ভিত্তি নেই। আমি যদি সংবিধান বা পলিটিক্যাল সাইন্সের আলোকে দেখি তাহলে সেটা হলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র হচ্ছে এটা একটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এখানে মূল জায়গা হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তাই রাষ্ট্রের মালিক যেখানে জনগণ এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি নির্বাচিত নয় সেই ব্যক্তিকে দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করাটা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীতি শুধু এখন পাকিস্তান ও গ্রিসে চালু আছে। পাকিস্তান এখন একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র। তাই বিএনপি-জামায়াত চাচ্ছে বাংলাদেশকে আবারও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৫৯তম পর্বে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, আমি যে কথাটা শুরুতে বলতে চাই সেটা হলো নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার বা নির্দলীয় নির্বাচন কমিশনের আসলে কোন ভিত্তি নেই। আমি যদি সংবিধান বা পলিটিক্যাল সাইন্সের আলোকে দেখি তাহলে আমি শুরুতে যেটা বলতে চাই সেটা হলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র হচ্ছে এটা একটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এখানে মূল জায়গাটা হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তাই রাষ্ট্রের মালিক যেখানে জনগণ এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি নির্বাচিত নয় সেই ব্যক্তিকে দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করাটা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক হস্তক্ষেপ ও পরবর্তীকালে সামরিক শাসককে আমরা দেখেছি সেখানে এই বিষয়টি যখন আদালতে গিয়েছে তখন এই সামরিক শাসনটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এদের সব কার্যকলাপ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা একটা সরকারের রূপ পরিবর্তন করতে পারেন, পরিবর্তিত করতে পারেন কিন্তু একটি অনির্বাচিত ব্যক্তিকে এক দিনের জন্য কেন এক মুহূর্তের জন্যও আমাদের এই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ধারণার মধ্যে আসে না। আমরা যদি এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার যত বারই এসেছে ততবার এদেরকে কিভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে কতগুলো গলধ হয়েছে সেটা আমরা দেখেছি। তাই এটা কোনোবারেই ধোপে টেকেনি। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার যারা তৈরি করে তারা আগে থেকেই ছক কষে রাখে কাদেরকে তারা এখানে বসাবে যেখানে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা থাকে। তাই এটাকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক পন্থা বলা যাবে না। আমরা আরেকটা বিষয় খেয়াল করছি যে, যারা নির্বাচনে হেরে যাবে তারা সব সময় দাবি করে যে নির্বাচনটা ঠিক হয়নি। আমাদের দেশেও এটার যেমন দাবি উঠে ঠিক যুক্তরাষ্ট্রেও ট্র্যাম্প হারার পরেও ঠিক একই দাবি উঠেছে। কিন্তু সেই গল্প দিয়ে আমরা আমাদের রাষ্ট্রের চরিত্রকে নষ্ট করতে পারি না। আমাদের এখানে নির্বাচনের সময় অনেক গুলো অতিরিক্ত ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যায় সে জন্য দেখা যায় তফসিল ঘোষণার পরে অনেক মন্ত্রণালয় নিজে থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা না করে। এখন মূল বিষয়টা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন গঠন করার পদ্ধতি। বাংলাদেশ যে পদ্ধতিটা অনুসরণ করছে সেটা হলো একটা সার্চ কমিটি করে সব দলের থেকে চাওয়া হচ্ছে যে, আপনাদের মনোনীত প্রার্থীর না বলুন আমরা এটা বিবেচনা করবো। সেভাবে আমরা দেখেছি যে বিগত সময়ে সেটা বিবেচিত হয়েছে। সেখানে অন্যদলের সুপারিশ করা ব্যক্তি সেই নির্বাচন কমিশনে জায়গা পেয়েছে। যদি আমরা দেখতাম যে শুধু এক দলেরই সুপারিশকৃত ব্যক্তি জায়গা পেয়েছে তখন আমি বলতে পারতাম নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্যে গলধ আছে।