মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সংবিধান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাধা দিচ্ছে বিএনপি
#নির্দলীয় সরকারের কোনো ভিত্তি নেই: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ। #বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চায় বিএনপি: ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর। #বিএনপির দাবি একেবারেই অযৌক্তিক: ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:৪২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার বা নির্দলীয় নির্বাচন কমিশনের আসলে কোনো ভিত্তি নেই। আমি যদি সংবিধান বা পলিটিক্যাল সাইন্সের আলোকে দেখি তাহলে সেটা হলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র হচ্ছে এটা একটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এখানে মূল জায়গা হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তাই রাষ্ট্রের মালিক যেখানে জনগণ এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি নির্বাচিত নয় সেই ব্যক্তিকে দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করাটা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীতি শুধু এখন পাকিস্তান ও গ্রিসে চালু আছে। পাকিস্তান এখন একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র। তাই বিএনপি-জামায়াত চাচ্ছে বাংলাদেশকে আবারও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য।

দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৫৯তম পর্বে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ)  চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।

মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, আমি যে কথাটা শুরুতে বলতে চাই সেটা হলো নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার বা নির্দলীয় নির্বাচন কমিশনের আসলে কোন ভিত্তি নেই। আমি যদি সংবিধান বা পলিটিক্যাল সাইন্সের আলোকে দেখি তাহলে আমি শুরুতে যেটা বলতে চাই সেটা হলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র হচ্ছে এটা একটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এখানে মূল জায়গাটা হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তাই রাষ্ট্রের মালিক যেখানে জনগণ এবং জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্রকে পরিচালনা করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি নির্বাচিত নয় সেই ব্যক্তিকে দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করাটা হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক হস্তক্ষেপ ও পরবর্তীকালে সামরিক শাসককে আমরা দেখেছি সেখানে এই বিষয়টি যখন আদালতে গিয়েছে তখন এই সামরিক শাসনটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এদের সব কার্যকলাপ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা একটা সরকারের রূপ পরিবর্তন করতে পারেন, পরিবর্তিত করতে পারেন কিন্তু একটি অনির্বাচিত ব্যক্তিকে এক দিনের জন্য কেন এক মুহূর্তের জন্যও আমাদের এই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ধারণার মধ্যে আসে না। আমরা যদি এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার যত বারই এসেছে ততবার এদেরকে কিভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে কতগুলো গলধ হয়েছে সেটা আমরা দেখেছি। তাই এটা কোনোবারেই ধোপে টেকেনি। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার যারা তৈরি করে তারা আগে থেকেই ছক কষে রাখে কাদেরকে তারা এখানে বসাবে যেখানে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা থাকে। তাই এটাকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক পন্থা বলা যাবে না। আমরা আরেকটা বিষয় খেয়াল করছি যে, যারা নির্বাচনে হেরে যাবে তারা সব সময় দাবি করে যে নির্বাচনটা ঠিক হয়নি। আমাদের দেশেও এটার যেমন দাবি উঠে ঠিক যুক্তরাষ্ট্রেও ট্র্যাম্প হারার পরেও ঠিক একই দাবি উঠেছে। কিন্তু সেই গল্প দিয়ে আমরা আমাদের রাষ্ট্রের চরিত্রকে নষ্ট করতে পারি না। আমাদের এখানে নির্বাচনের সময় অনেক গুলো অতিরিক্ত ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে যায় সে জন্য দেখা যায় তফসিল ঘোষণার পরে অনেক মন্ত্রণালয় নিজে থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা নির্বাচন কমিশনের সাথে আলোচনা না করে। এখন মূল বিষয়টা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন গঠন করার পদ্ধতি। বাংলাদেশ যে পদ্ধতিটা অনুসরণ করছে সেটা হলো একটা সার্চ কমিটি করে সব দলের থেকে চাওয়া হচ্ছে যে, আপনাদের মনোনীত প্রার্থীর না বলুন আমরা এটা বিবেচনা করবো। সেভাবে আমরা দেখেছি যে বিগত সময়ে সেটা বিবেচিত হয়েছে। সেখানে অন্যদলের সুপারিশ করা ব্যক্তি সেই নির্বাচন কমিশনে জায়গা পেয়েছে। যদি আমরা দেখতাম যে শুধু এক দলেরই সুপারিশকৃত ব্যক্তি জায়গা পেয়েছে তখন আমি বলতে পারতাম নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্যে গলধ আছে। 

ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একটি কথা বলেছেন যে, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতার পালাবদলের কোনো সাংবিধানিক পথ নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণই তাদের পরবর্তী সরকার নির্বাচন করবে। এই কথাটা অবশ্যই যথার্থ। এই কথাটি বিশ্লেষণ করতে হলে আমাদের একটি পেছনের দিকে তাকাতে হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল কিন্তু সেখানে সেই উন্নয়নকে থমকে দেওয়ার জন্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে তার পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। সেসময় গণতন্ত্রের সাথে দেশের উন্নয়নকেও পেছনের দিকে টানা হচ্ছিল। আজকে যে উন্নয়ন সেটা যদি আমরা খেয়াল করি সেখানে আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের আগে উন্নত বাংলাদেশের কথা বলেছে, ২০২১ সালের আগে মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলেছে সেখানে কিন্তু আমরা এখনই টার্গেট প্রায় পূরণ করে ফেলেছি। ২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, দেশের একটি মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। তার এই মহান ব্রতকে সামনে রেখেই মুজিববর্ষে প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারই পাচ্ছে দুর্যোগ সহনীয় সেমিপাকা ঘর, আর দুই শতাংশ জমির মালিকানা। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সুদৃশ্য রঙিন টিনশেডের সেমিপাকা বাড়ি পাচ্ছেন গৃহহীন ও ভূমিহীনরা। সারা দেশে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের এই মহাযজ্ঞ প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপের ফলেই বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকা আনা সম্ভব হয়েছে। বিশ্বের অনেক ধনী দেশও যখন এ টিকা পায়নি, তখন দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অতি সম্প্রতি ভারত করোনা টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী কদিন আগে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা দিয়েছেন- ‘যত টাকা লাগুক, টিকা আনবই’। আজ এই উন্নয়নের পন্থাকে ফের কুলশিত করতে চাচ্ছে বিএনপি-জামায়ত গোষ্ঠী আগামী নির্বাচনকে নিয়ে তাদের এই অসাড় দাবি দিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীতি শুধু এখন পাকিস্তান ও গ্রিসে চালু আছে। পাকিস্তান এখন একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র। তাই বিএনপি-জামায়াত চাচ্ছে বাংলাদেশকে আবার ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর হাতে যেমন বাংলাদেশ নিরাপদ ছিল তার হত্যার পরে সেই বাংলাদেশেকে যেভাবে পেছনের দিকে টেনে নেওয়া হয়েছে আমরা মনে করি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ এবং এই নিরাপদের মাধ্যমে আমরা দেশের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতে চাই।

ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, আমাদের আসলে পেছনে হাঁটবার কোনও সুযোগ নেই, জাতি হিসেবে আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। ফলে এই ধরনের অযৌক্তিক কুপমুন্দুক মার্কা কথা বার্তা আমাদের আমলে নেওয়ার কোনও মানেই নেই। বিএনপি দায়িত্বশীল আচরণ করবে এবং সঠিক রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে নির্বাচনে যাবে এটাই জনগণের চাওয়া কিন্তু তা বলে যা ইচ্ছা তা করবে এবং যা তা বলবে এটা কিন্তু কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিএনপি বলছে, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। তাদের কথা হলো একটাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপির এ দাবির পেছনে কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অস্তিত্বের উপস্থিতি কোনভাবেই কাম্য নয়। তাই বিশ্বের কোনো দেশে এটা নেই। একটি অস্বাভাবিক অবস্থায় এই অস্বাভাবিক সরকার তৈরি করা হয়েছিল। আমাদের দেশের আইন ও সংবিধান দ্বারা এ ব্যবস্থা এখন আর স্বীকৃত নয়। সে কারণেও এ ব্যবস্থার দাবি তোলা অযৌক্তিক। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে তোলা। এ ব্যাপারে আমাদের পাশের দেশ ভারত চমৎকারভাবে সফল হয়েছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে, পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ফলে সেখানে গণতন্ত্রের বিকাশ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা যায় কীভাবে এ নিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। এ কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন এ ঘোষণা সরকারকেই দিতে হবে। জনগণের মনে কমিশন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে হবে। শুধু বর্তমানে নয়, ভবিষ্যতেও যাতে কোনো সরকার কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য কমিশনকে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে। এখন কথা হলো অতীতে বিএনপি যতটুকু ভুল করেছে তার জন্য জনগণের কাছে নিঃস্বার্থক ক্ষমা চাইতে হবে এবং নতুন মোড়কে তাদের এগুতে হবে যদি তারা দেশের সক্রিয় রাজনীতিতে টিকে থাকতে চায়, তা না হলে তাদের ভবিষ্যৎ মুসলিম লীগের মতো হবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  ভোরের পাতা সংলাপ   বিএনপি  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]