কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী রেজোয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে সান্ধকালীন কোর্সের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল গত বছরের ১৫ জানুয়ারি। এরপর প্রায় ২০ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন সমাধান হয়নি এ ঘটনার। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলছেন তিনি ব্যাপারটি ভুলেই গেছেন।
তিনি বলেন, এটা তো আমারও মনে নেই। প্রতিবেদন তো এখনো পাইনি। প্রতিবেদন পেলে বিষয়টা বলা যাবে। আমি দ্রুত ওদের প্রতিবেদন দিতে বলে দিব।
জানা যায়, ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্য কোর্সের প্রোগ্রাম পরিচালকের (পিডি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বিভাগটির সান্ধ্য কোর্সের সেই ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগে সেই ছাত্রী অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া ও পরীক্ষার হলে তার ফোন থেকে প্রমাণাদি লোপাট করার অভিযোগ করেন। এরপর অভিযুক্ত শিক্ষক ১৯ জানুয়ারি কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগকারী ছাত্রীকে মানসিক ভারসাম্যহীন এবং তার নামে অশ্লীল ও আপত্তিকর শব্দচয়নের মাধ্যমে মানহানি করেন। পরবর্তীতে অভিযোগকারী ছাত্রী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে ২০ জানুয়ারি সান্ধ্যকালীন কোর্সের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এছাড়া ১৯ জানুয়ারির সেই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারী ছাত্রীর পাশাপাশি ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহা. হাবিবুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আকবর হোসেনকেও মানহানি করেন।
তারা ২০ জানুয়ারি ও ২১ জানুয়ারি রেজিস্ট্রার বরাবর আলাদা আলাদা লিখিত অভিযোগ দেন সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সামগ্রিক ঘটনায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী রেজোয়ান তালুকদারের প্রতি তার সহকর্মীরা অনাস্থা জানালে এবং শিক্ষকদের চাপের মুখে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি চান। এরই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দেন।
দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো এ ঘটনার সুষ্ঠ সমাধান না পাওয়ায় হতাশ অভিযোগকারী সেই ছাত্রী।
তিনি বলেন, যা হয়েছে তার সুষ্ঠ তদন্ত হোক, বিচার হোক। এরপরে কোন শিক্ষক যেন এরকম কাজ করবার আগে যেন দশবার চিন্তা করে। এ ঘটনার পর আমার কনফিডেন্স নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সামাজিকভাবে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছি। আর যাতে এমন কারো সাথে না হয়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধকল্পে ৩ টি কমিটি গঠন করা হয়।
তার মধ্যে ৯ সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ও ৪ সদস্যের অভিযোগ কমটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বরত লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস এ ব্যাপারে বলেন, এ বিষয়ে অনেকবার বসা হয়েছে। ২ বার অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু একবার পরীক্ষার কারনে ও আরেকবার তাকে পৌছিয়ে দেয়ার মতো তার ফ্যামিলির কেউ ছিলো না বলে সে আসতে পারেনি। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক দুইবারই আসতে চেয়েছিল।
আবার কমিটির একজন সদস্য করোনা পজেটিভ হয়েছিল। এরপর লকডাউন পরে গেলো। এছাড়া অভিযোগ কমিটির সদস্য সচিব ফার্মাসি বিভাগের
প্রভাষক মানতাশা তাবাসসুম শিক্ষা ছুটিতে থাকায় সবকিছু একসাথে ক্লিক করছে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা যদি পারতাম তাহলে এক সপ্তাহের ভেতর একটা সমাধান দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এটা তো অনেক বড় একটা বিষয়। কারো অনুপস্থিতিতে যদি এটার সিদ্ধান্ত দেয়া হয় সেটা কি ঠিক হবে?
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: শামীমুল ইসলাম বলেন, এসব বিষয় প্রশাসন কেন এত দীর্ঘ সময় ফেলে রাখে আমি জানি না। দ্রুত এসব বিষয়ে এড্রেস করা উচিত। এ অভিযোগের সাথে একজন শিক্ষকের মান-সম্মানের বিষয় জড়িত। অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে যেন দ্রুত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। আর অভিযোগ মিথ্যা হলে শিক্ষকের ভাবমূর্তি সমুন্নত থাকে এবং এমনটি হওয়াই বাঞ্চনীয় বলে মনে করি।