#শেখ হাসিনা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়েছেন: সৈয়দ মোজাম্মেল আলী। #শেখ হাসিনা উল্টো পথের সারথি: ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। #বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি শেখ হাসিনার মধ্যে দেখতে পাই: শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু। #হাসু বু-ছোট বু বেঁচে আছেন বলেই আমরা সাহস নিয়ে বেঁচে আছি: শাওন মাহমুদ।
প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ের স্পন্দনে পরিণত হয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন দক্ষ নেত্রী এখন শুধু বাংলাদেশের নেত্রীই নন, তিনি বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফিরে না আসলে আজকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হতো না বাংলাদেশ।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৫৭তম পর্বে বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- যুক্তরাজ্য স্টাডি সার্কেলের চেয়ারপারসন ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে, ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্যের রাজনৈতিক প্রতিনিধি শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু, শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
সৈয়দ মোজাম্মেল আলী বলেন, ভোরের পাতা এমন একটি মহতী আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি মনে করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করা শুধু আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নয়; বাংলাদেশের প্রতি নাগরিকের দায়িত্ব শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করা। কেন আমি এমনটা বলছি, সেটার ব্যাখা দিতে চাই। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল যখন ছোট আপা শেখ রেহানা যে বাসায় থাকতেন, সেটির নম্বর ছিল ১২০ নম্বর বাসা। আমি থাকতাম ১১১ নম্বর বাসায়। শেখ রেহানা আপার বাসাটি ছিল আমাদের তীর্থস্থান। ওই পাড়াতে আরো দুটি বাঙালি পরিবার ছিল। তখন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে যাননি। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা আপা যখন টিউলিপ সিদ্দিকীকে নিয়ে স্কুলে যেতেন তবে তখন একটি পরিবার অন্য রাস্তা দিয়ে মুখ ফিরিয়ে হাঁটতো। আমি বিষয়টা নিয়ে দুঃখ পাওয়ার পাশাপাশি গর্বও অনুভব করি। কেননা তখন যারা মুখ ফিরিয়ে নিতেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে দেখে, তারাই এখন দেখতে পাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশকে উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরেন তখন সামরিক শাসক জিয়া ক্ষমতায়। তাকে বারবার হত্যা করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। আমি মনে করি, আল্লাহ শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজগুলোই সম্পন্ন করার জন্য। তিনি যেভাবে দেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। আজকে দেখুন, আমরা যে অনুষ্ঠানে কথা বলছি, বাংলাদেশে এই ১০ মিনিটে তিনবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হতো। আজ শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের ৯৯ শতাংশ এলাকা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। এছাড়া মাথাপিছু আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি থেকে শুরু করে উন্নয়নের সকল সূচকেই বাংলাদেশকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে আছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা পদ্মা সেতু বিশ্বব্যাংকে চ্যালেঞ্জ করে আজকে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। যখন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে অর্থায়ন ফিরিয়ে নিল, তখন যুক্তরাজ্যে এসে অমিত সাহস নিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন নিজের অর্থায়নের পদ্মা সেতু করবেন। তখন বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল মাত্র ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু পদ্মা সেতুতেই ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন ছিল। তখন অনেক সুশীল এবং অর্থনীতিবিদরা বলেছিল, নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা সম্ভব নয়। আমি এখন তাদের নাম ধরে বলতে পারি, তারা ভুল বলেছিলেন। শেখ হাসিনা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়েছেন। আমি নিজেকে খুব সৌভাগ্যমান মনে করি, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য দুই কন্যাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাদের পাশে থেকে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, এ বছরে ফেব্রুয়ারিতে আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তখন বিদেশে গেলে এবং ফিরে আসলে করোনা পরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল। তখনো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত করেনি। আমি এই তথ্যটা এই কারণে দিলাম, ছোট্ট একটা বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছিল। তিনি যে সূক্ষ্মাতি সুক্ষ্ম বিষয় নিয়ে খোঁজখবর রাখেন সেটা প্রমাণিত হয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন দেশ যেভানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে চীন, ভারত. আমেরিকার মতো দেশ থেকে একসাথে এতসংখ্যক ভ্যাকসিন আনার রেকর্ড আর কোনো দেশের রাষ্ট্রনায়কের নেই। তার কূটনৈতিক দূরদর্শিতার কারণেই এ রকম সাফল্য দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ। আমি খুব সংক্ষেপে যেতে চাই, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উল্টো পথের সারথি বলতে চাই। কেননা বলা হয়, হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িতক বাংলার ভূখণ্ড। কিন্তু এ অঞ্চলেই রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই বঙ্গভঙ্গ থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমলেও মৌলবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। কিন্তু এ অঞ্চলে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী আর কোনো নেতা পাওয়া যায়নি। আজকে অনেকেই বলেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আওয়ামী লীগ যখন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় মুসলিম শব্দটি ফেলতে এক দশকের বেশি সময় লেগেছে। আজকের অবস্থানে দাঁড়িয়ে চিন্তাও করা যায় না, কিন্তু একজন প্রগতিশীল মাওলানাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করার কথা। এই মাটিতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো শাসক নেই যারা অসাম্প্রদায়িক নেতা আসেনি। আজকে ১৩ বছরে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে দেখে যদি কেউ মনে করেন যে, শেখ হাসিনার যাত্রাপথটি মসৃণ ছিল তা ঠিক নয়। তাকে নিজ হাতে ৩২ নম্বরের রক্ত পরিষ্কার করতে হয়েছিল। গরুর গাড়িতে চড়ে রাজনীতি করতে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ যতদিন বাংলাদেশের শাসনভার বহন করবেন, ততদিনই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু বলেন, আমি আজকের অনুষ্ঠানে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে কথা বলতে চাই। ভোরের পাতা সংলাপের মাধ্যমে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি আপা বলেই সম্বোধন করি। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর আপার খুব কাছাকাছি থেকে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আপাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা সমাবেশে আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছি। আমাদের তখনকার বাসা ছিল ইস্কাটনে। সেই বাসাতে নিয়মিত আসতেন। আওয়ামী লীগের একটি কেন্দ্র ছিল আমাদের বাসাটি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবিই আমি শেখ হাসিনার মধ্যে দেখতে পাই। কারণ এখানে আমার পূর্ববর্তী বক্তা সৈয়দ মোজাম্মেল ভাই পদ্মা সেতু নিয়ে সবিস্তারে বলেছেন। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেই বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে পদ্মা সেতু করার সাহস ও মানসিকতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন আপা। অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। ভোরের পাতা যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটার প্রশংসা করছি। আমি আজ দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, আজ বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের সকলের দায়িত্ব শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা। অবশ্যই সমালোচনা করা যাবে। তবে সেটি পজিটিভ সমালোচনা হওয়া উচিত। বিরোধীরা সত্যকে সত্য বলে না। ভ্যাকসিন নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু তারা সাদাকে সাদা বলে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা সবাই জানেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নাগরিক হিসাবে অবশ্যই তার পথকে আরো মসৃণ করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। বক্তব্যের শেষে শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘প্রতিবিম্ব’ শিরোনামে স্বরচিত একটি কবিতা আবৃতি করেন।
শাওন মাহমুদ বলেন, আমি আসলে স্বপ্নীলের কথার সাথেই মিল রেখে কথা বলতে চাই। বাংলাদেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে আমরা হাসু বু বলে ডাকতে পারি। বঙ্গবন্ধু যেমন তার দরজা সব সময়ই খোলা রাখতেন। তেমনই শেখ হাসিনাও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনায় আমি বলতে চাই, যখন বলা হয়েছিল শেখ হাসিনাকে জামার্নিতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য, তখন তাকে সরাসারি নিষেধ করা হয়েছিল। তবে রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ যথেষ্ট সহায়তা করেছিলেন। এরপর একাকী জীবনের লড়াই শুরু করেন শেখ হাসিনা এবং ছোট বু শেখ রেহানা। ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন। এমনকি প্রণব মুখার্জিও যথেষ্ট সহায়ক ছিলেন। তখন ভারতে জয় ও পুতুলকে নিয়ে ভারতে দিন কাটাতে হয়েছে। ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় ফিরে আসলে আওয়ামী লীগের নেতারা ভারত সফরে গিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসার অনুরোধ করেন। তখন দোটানায় পড়েছিলেন শেখ হাসিনা। তখন ইন্দিরা গান্ধী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, তুমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। সেখানে গেলে অবশ্যই অনেক সমস্যা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলো কিভাবে করা যায় সেদিকে কাজ করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শহীদ পরিবারের সন্তান হিসাবে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা আছেন বলেই আমরা সাহস নিয়ে বঁচে আছি। তাদের কেউ গুলি করতে এলে নিজের বুক পেতে দিবো।