রংপুর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে এমদাদ আছেন ১৩ বছর ধরে। এবার তার বিরুদ্ধে প্রায় হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এই দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে তার দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পেলে দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নেয়। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) থেকেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত এমদাদ প্রায় ১৩ বছর ধরে সিটি করপোরেশনের পদ আঁকড়ে আছেন। সাবেক মেয়রের সময়ে নিয়মবহির্ভূত পদোন্নতি নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বনে যান বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে এমদাদের বিরুদ্ধে। তিনি মেয়রের অনুমোদন না নিয়ে অনৈতিকভাবে পাঁচটি প্যাকেজে যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ১১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকার দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিতে কোনো যান্ত্রিক প্রকৌশলীকে অন্তর্ভুক্ত করেননি। শুধু নিজের মনোনীত পূর্ত প্রকৌশলীকে দিয়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেছেন।
এ কারণে কেন তিনি এই বে-আইনি কার্যক্রম বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন, তার ব্যাখ্যা চেয়ে গত ১৮ এপ্রিল এমদাদকে চিঠি দেন বর্তমান মেয়র মোস্তফা। এছাড়া সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা তদন্ত করার জন্য এমদাদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট গত বছরে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তিনি কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেননি। এবিষয়েও তাকে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেন মেয়র।
দুদকের সহকারী পরিচালক মানসী বিশ্বাস স্বাক্ষরিত চিঠির সূত্রে এমদাদের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয় এবং নামে-বেনামে ঢাকা ও রংপুরে প্লট-ফ্ল্যাট কেনাসহ দুর্নীতির আরও গুরুতর অভিযোগের খোঁজ মিলেছে বলে জানা গেছে। দুদকের পাঠানোর ওই চিঠিতে সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক বাতি স্থাপন প্রকল্পের প্রাক্কলন ব্যয় ও স্পেসিফিকেশন, দরপত্র, দরপত্র খোলার বিবরণী, কার্যাদেশ, পরিমাপ, বাজারদর যাচাই-বাছাই কমিটির অনুমোদনের সকল কাগজপত্রসহ সেগুনবাগিচাস্থ প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে মেয়রের কাছে রেকর্ডপত্র তলব করা হয়।
দুদকের দেওয়া চিঠির সূত্রে জানা গেছে, এমদাদ দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এসব অনিয়মের ঘটনায় ভুক্তভোগী কয়েকজন দুদক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এমদাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাঁচটি প্রকল্পের দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে কাজ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি প্রয়াত মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর স্বাক্ষর জাল করে সকল টেন্ডারের নথি পরিবর্তন করে গুরুতর অপরাধের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
এমদাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট করে আরও যেসব প্রকল্পের বিষয়ে নথিপত্র তলব করা হয়েছে, তা হলো- সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামো উন্নয়নের ২১০ কোটি টাকার হিসাব। রংপুরের বিভিন্ন সড়কের পুনর্বাসন ও উন্নতি প্রকল্পের ২৫ কোটি, সড়ক বাড়ি স্থাপনের ৪৯ কোটি টাকার হিসাব। যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ১১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার হিসাব। অবকাঠামো ও ড্রেন কাম ফুটপাত নির্মাণে ৬০ কোটি টাকার হিসাব। উল্লেখিত প্রকল্পগুলোর প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের আদেশসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন ও অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ৩১টি প্যাকেজের ডিপিপি একনেকের অনুমোদন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দাখিলকৃত দরপত্রসহ দরপত্র খোলার বিবরণী, কার্যাদেশ, পরিমাপ বহি, পরিশোধিত বিল, নথির নোট সিটসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তলব করা হয়েছে।
এছাড়া সিটি করপোরেশনের দুটি অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় সংক্রান্তে অনুমোদন, বাজার দর যাচাই কমিটির প্রতিবেদন, প্রাক্কলন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দাখিলকৃত দরপত্রসহ দরপত্র খোলার বিবরণী, কার্যাদেশ, পরিশোধিত বিল, বাজারদর যাচাই কমিটির প্রতিবেদন, কান্ট্রি অব অরিজিন এবং নথির নোটিশটসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তলব করা হয়েছে।
গত ২৯ মার্চ দুদকের সহকারী পরিচালক মানসী বিশ্বাস স্বাক্ষরিত চিঠিতে রংপুর সিটি করপোরেশনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগর অনুসন্ধানের স্বার্থে এসব কাগজপত্র তলব করা হয়।
ভোরের পাতা/কে