মৌ-মাছির পরিচর্যা ও সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মধু চাষী। শত শত মৌ বাক্সের মধ্যে এসব মৌ মাছির বংশ বিস্তারের জন্য লালন পালন করা হচ্ছে।
বছরের এই সময়ে প্রায় ৩ মাস মৌ-মাছি লালন পালণের পর এসব মৌ মাছিকে মধু আহরণের জন্য উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে এমনই কয়েকটি মৌ মাছির সংরক্ষণাগার গড়ে উঠেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিবন্দী, টুনিয়ামান্দ্রা, সুরুদীয়া, তন্তর, বাড়ৈগাঁও, সাতগাঁওসহ বেশ কয়েক স্থানে রাস্তার পাশে উঁচু জমিতে মৌ মাছির শত শত বাক্স পাঁতা হয়েছে। গাছের ছাঁয়া তলে শীতল জায়গায় কাঠের তৈরী বাক্স সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। রানী মাছিরা বাক্সে মধ্যে বংশ বিস্তার করছে। লক্ষ্য করা গেছে, এসব মৌ মাছির লালন পালন ও পরিচর্যায় অভিজ্ঞ মধু চাষীরা কাজ করছেন।
আগামী অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের দিকে মধু আহরণের জন্য প্রস্তুত এসব মৌ মাছির দল নিয়ে বিভিন্ন চরাঞ্চলের আগাম ধনিয়া, সরিষা, কালজিরা ফুলের খাঁটি মধু সংগ্রহ করতে ছুঁটবেন চাষীরা এমনটাই জানান উপজেলার আটপাড়া এলাকায় মো. ইসহাক আলী নামে এক মধু চাষী।
তিনি বলেন, সাতক্ষিরা থেকে তারা এখানে এসেছেন। এখানে থেকে মৌ-মাছির বংশ বিস্তারের পরে অক্টোবরের দিকে এসব মৌ বাক্স নিয়ে সাতক্ষিরায় যাবেন বড়ই (কুল) ফুলের মধু সংগ্রহের জন্য।
মো. মাসুম বিল্লাল নামে এক জন মধু চাষী বলেন, তার সংরক্ষণে রয়েছে অস্ট্রোলিয়ান মেলীফেরা জাতের মৌ মাছি। এসব বাক্সের মধ্যে মৌ মাছির বংশ বিস্তার করছে। মৌ মাছির দল ভাড়ি করার জন্যই এখানে আসছেন তিনি। বর্ষার মৌসুমে এই অঞ্চলে বিলে/চকে প্রচুর ধইনছা ক্ষেতি থাকায় এসব মৌ মাছি লালন পালন করতে সুবিধা হচ্ছে তাদের। কার্তিক মাসেই খাঁটি মধু সংগ্রহের জন্য এসব যোদ্ধা মৌ মাছি নিয়ে পর্যায়ক্রমে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নাটোর পাবনা ও সুন্দরবন এলাকা ঘুরে বেড়াবেন। এই পন্থায় প্রতিবছর ৫/৬ টন মধু সংগ্রহ করতে পারেন।
তিনি জানান, তালিকাভুক্ত মধু চাষী হলেও সরকারিভাবে কোন আর্থিক সহযোগিতা পাননা তারা। দেশে কঠোর লকডাউন চলাকালীন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে এসব মৌ মাছির বাক্স নিয়ে উপজেলার বিবন্দীতে আসেন। বর্ষা মৌসুমে তাদের মধু উৎপাদ বন্ধ থাকে। এখন মৌ মাছি লালন পালন করতে শুধু খরচ হচ্ছে তাদের।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি বাক্সে সাধারণ মৌ মাছির দল রানীর কোষ দেয়। এসব কোষ থেকে ১০/১২ দিনের মধ্যে রানীদের জন্ম হলেও প্রতি বাক্সে মাত্র একটি করে রানী বেঁচে থাকে। একটি রানী দৈনিক এক থেকে দেড় হাজার ডিম দিতে সক্ষম। একটি রানী মৌ মাছি বেঁচে থাকতে পারে প্রায় আড়াই বছর। বাক্সের মধ্যে এসব মৌ মাছির দল বংশ বিস্তারে আলাদা আলাদাভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
বছরের এই সময়ে মৌ মাছি সংরক্ষণ ও লালন পালনের জন্য প্রতি বাক্সে আহারের জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে দুই বার করে চিনির রস/শরবত দিয়ে থাকেন চাষীরা। ১শত’ মৌ বাক্স হিসাব অনুসারে আহারের জন্য প্রতি ৭ দিনে ৫০ কেজির ৪ বস্তা চিনির প্রয়োজন হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় একটি বাক্সে প্রায় দুই লাখ মৌ মাছির সদস্য প্রস্তুত করে তোলা হবে মধু সংগ্রহের জন্য। মধু প্রক্রিয়াজাত করণ কোম্পানীর কাছে চাষীর উৎপাদীত প্রতি কেজি মধু বিক্রি করা হয়ে থাকে সর্বোচ্চ আড়াই শত থেকে ৩ শত’ টাকায়। অপরদিকে এসব উৎপাদীত মধু খোলা বাজারে খুচরাভাবে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫ শত’ থেকে ৭ শত’ টাকা।
ভোরের পাতা/কে