#বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবদের জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে: ড. শ্রী বীরেন শিকদার। #কমিশন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে হবে: অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির। #বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে: সৈয়দ আহমেদ সেলিম। #সকল ষড়যন্ত্র উৎখাত করে দেশ এখন সমৃদ্ধির পথে: মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল।
আমরা অনেকদিন যাবত একটা বড় ভুলের মধ্যে বিচরণ করেছি যে, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অনেক সময় বলে থাকেন যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে কিছু বিপদ্গামি সেনা সদস্যদের দ্বারা এই হত্যাকাণ্ডটি রচিত হয়েছিল। কিন্তু সেসব সেনা সদস্যদের কি এমন দরকার ছিল যে বঙ্গবন্ধুকে সেদিন সপরিবারে হত্যা করবে। তাদের যারা পরিচালনা করেছিল, যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, যারা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিল, যারা কুশীলব ছিল তারাই মূল হত্যাকারী। এই বিএনপি যারা আজকে দেশে আইনের কথা বলে, সুশাসনের কথা বলে, ন্যায় বিচারের কথা বলে সেদিন তারা এই সংসদে বঙ্গবন্ধুর বিচার না হওয়ার জন্য আইন পাস করেছিল।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৪৪তম পর্বে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার, যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির, জার্মান আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আহমেদ সেলিম, জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং লেখক মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, আজকে ভোরের পাতা লাইভ সংলাপে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভোরের পাতা কর্তৃপক্ষসহ সঞ্চালক নাসির উদ্দিন আহমেদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকের এই দিনে আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমরা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছি। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ১৫ আগস্টের সেই কালরাতে তাঁর পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাতবরণ করেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ ইজ্জত হারা মা বোনদের। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। আজকে আলোচ্য বিষয় ‘আগস্ট ট্র্যাজেডি : ষড়যন্ত্রের অন্তরালে’। এই সময়ে এই বিষয়বস্তুটা অনেক গুরুপূর্ণ বলে আমি মনে করি। কারণটা হলো আমরা অনেকদিন যাবত একটা বড় ভুলের মধ্যে বিচরণ করেছি যে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অনেক সময় বলে থাকেন যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে কিছু বিপদ্গামি সেনা সদস্যদের দ্বারা এই হত্যাকাণ্ডটি রচিত হয়েছিল। কিন্তু সেসব সেনা সদস্যদের কি এমন দরকার ছিল যে বঙ্গবন্ধুকে সেদিন সপরিবারে হত্যা করবে। তাদের যারা পরিচালনা করেছিল, যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, যারা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিল, যারা কুশীলব ছিল তারাই মূল হত্যাকারী। এই হত্যাকাণ্ডে যারা সরাসরি জড়িত ছিল তাদেরকে বিচারের জন্য আমরা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে তাদেরকে বিচারের আওতায় এনেছি এবং জাতীকে কিছুটা কলঙ্কমুক্ত করেছি। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা সরাসরি জড়িত না থেকেই যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, যারা এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছিল, যারা কুশীলব ছিল তাদের আসল চেহারা এখনো জাতির সামনে আসে নাই। তাদের আসল রূপ জাতির সামনে তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি সাড়ে তিন বছরের মাথায় একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়ে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই তাকে হত্যা করা হয়। যে বছর তাকে হত্যা করা হয়, সে বছর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৪ শতাংশ এবং তখন বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের বিচার করে শেখ হাসিনা জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। খুনিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন। ইতিমধ্যে যারা পলাতক তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলমান আছে। কিন্তু এই নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যেসব কুশীলব রয়েছে তাদের তদন্তের আওতায় আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে কোনকিছুতেই অন্ধকারে রাখা যাবে না। সেজন্য তাদের স্বরূপ উন্মোচন করা উচিত বলে আমি মনে করি।
অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, আমার মরহুম পিতা ১৯৪৯ সালে বঙ্গবন্ধু যে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই আওয়ামী লীগের যশোর জেলার প্রথম কমিটির একেবারে শেষের দিকে একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি আমৃত্যু ৫৫ বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মূল স্রোতের সাথে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের মূল স্রোতের সাথে সংযুক্ত থেকে কাজ করেছিলেন। এই কারণে আমি আওয়ামী লীগ নেতার সন্তান হিসেবেও নিজেকে অনেক গর্ববোধ মনে করি। আমি সেই প্রজন্মের লোক যারা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমাদের পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধু সম্বন্ধে কোন কিছুই লেখা ছিল না বরং আমরা একটা বিকৃত তথ্যের আওতাধীন ছিলাম, একটি বিকৃত ইতিহাসে মধ্যে হাবুডুবু খেয়েছি। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে, গণমাধ্যমে কোন কিছুতেই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে কিছুই ছিল না। আমাদের জাতির কোন ইতিহাস ছিলো না, বঙ্গবন্ধু তখন নির্বাসিত ছিল। কি নির্মম! সে সময় বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার না করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করেছিল খুনি মোশতাক আর সেই অধ্যাদেশ কে আইনে রূপান্তরিত করেছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনে যিনি কুশীলব, যিনি বেনিফিসিয়ারি, সেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা খুনি জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯’র পার্লামেন্টে বিএনপির আসন সংখ্যা যখন ২০৭ ছিল, তখন সেই সংসদে যখন এই অধ্যাদেশকে আইনে রূপ দিচ্ছে তখন তারা দুজন কিন্তু আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন না। একজন আছে বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আরেকজন জেনারেল মিজানুর রহমান আর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিল সুধাংশু শেখর হাওলাদার। তখন তারা সংসদে দাঁড়িয়ে নানাভাবে বলার চেষ্টা করেছিল শুধুমাত্র তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই সংসদে জাতির পিতা যিনি কিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং তার পরিবারের হত্যার বিচার হবে না বলে যে আইন করা হচ্ছে এটা ঠিক না, এটা করা যাবে না। যখন এই আইন পাস হয়ে গেল তখন সেই সংশোধনীতে এই তিনজন জাতীয় সংসদ সদস্য সেদিন ফ্লোর নিয়ে বলেছিল, মাননীয় স্পিকার এই সংসদে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হবে না বলে যে আইন পাস করলো, একদিন এমন সময় আসবে যেদিন এই সংসদে এই বিএনপির ২০৭ তো দূরের কথা, ১০৭ তো দূরের কথা, মোটে ৭টি আসনও জুটবে না তাদের কপালে। আজকে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আজকে আপনাদের সামনে আলোচনা করছি তখন কিন্তু এই বিএনপির বর্তমান জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা মাত্র ৬টি। এই সেই বিএনপি যারা আজকে দেশে আইনের কথা বলে, সুশাসনের কথা বলে, ন্যায় বিচারের কথা বলে সেদিন তারা এই সংসদে বঙ্গবন্ধুর বিচার না হওয়ার জন্য আইন পাস করেছিল।
সৈয়দ আহমেদ সেলিম বলেন, এই ষড়যন্ত্র স্বাধীনতার ঊষা লগ্ন থেকেই শুরু হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন এবং এ বিষয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই আপোষ করেননি। বঙ্গবন্ধু অল্প দিনেই বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্ব সভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক আর একদিকে শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে। বিশ্ব সভায় তিনি বাংলাদেশের নেতা হিসেবে কথা বলেননি, বিশ্বনেতা হিসেবে কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ দুটো আলাদা নাম হলেও ইতিহাস কিন্তু একটিই। বাংলাদেশের ইতিহাস রচনায় তিনিই অবিসংবাদিত মহানায়ক, রাজনীতির মহাকবি। তিনি যুক্ত ছিলেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে, ভূমিকা রেখেছেন চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট গঠনে, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার হাত দিয়ে আসে ছেষট্টির ছয় দফা। গ্রেফতার হন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে। সেই হত্যা কেবল মুজিবকে নয়, পুরো বাঙালিকে জাতিকে করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হত্যা করতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতির পিতাকে হত্যার ৪২ দিনের মাথায়, ২৬ সেপ্টেম্বর কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনি খোন্দকার মোশতাক। অধ্যাদেশে যেকোনো আদালতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যেহেতু তখন সংসদ অধিবেশন ছিল না, সেহেতু ১৯৭৫ সালের এই দিনে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতির পদ দখলকারী খুনি মোশতাক আহমেদ একটি অধ্যাদেশ আকারে ইনডেমনিটি জারি করেন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে ২১ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমেই জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত করে খুনিদের বিচারের আওতায় আনে। পরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট দুটি ঘটনাই একসূত্রে গাঁথা। এ ষড়যন্ত্রের পেছনে বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র সরাসরি জড়িত। আমাদের জাতির জন্য এটা খুবই কষ্টকর যে আজও সেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা দেশে বাইরে বসে ষড়যন্ত্র করছে এবং দেশের ভেতরে বসে তাদের সুরে সুর মিলিয়ে কিছু লোকেরা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। এদের বিরুদ্ধেও আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার থাকতে হবে।
মায়েদুল ইসলাম তালুকদার বাবুল বলেন, শুরুতেই আমি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সকল শহীদদের স্মরণ করছি। বঙ্গবন্ধু জন্মেছিল বলেই আমাদের দেশ স্বাধীনতা পেয়েছিল, আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করতে পেরেছি। কিন্তু সেই স্বাধীন দেশে বেশি দিন টিকতে পারেনি এই পরিবারটি যেই পরিবারটি যারা আমাদের স্বাধীনতা আনার জন্য প্রত্যেকটি সদস্য জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়ে গিয়েছিলেন। জাতির পিতা তার সব অনুভূতি, ত্যাগ, সংগ্রাম, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, অদম্য স্পৃহা, দৃঢ় প্রত্যয়, বাঙালি জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, মমত্ববোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শের দ্বারা সমগ্র বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত আত্মত্যাগে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের জন্মলাভ, ’৪৮-এর মার্চে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন, ’৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী লীগের জন্ম, ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬-দফা, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ১১-দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগ’-এর নিরঙ্কুশ বিজয়সহ ইতিহাস সৃষ্টিকারী নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের আকাক্সক্ষা চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। সেই মহান নেতাসহ তার পরিবারের প্রায় সকল সদস্য আমাদের মাঝে নেই। সেই পরিবারের সদস্যদেরকে আমরা হারিয়েছিলাম বিদেশি ও দেশি কিছু কুলাঙ্গারদের জন্য। সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তৎকালীন সময় জিয়াউর রহমান অভিব্যক্তি ছিল এমন, ‘সো হোয়াট? লেট ভাইস প্রেসিডেন্ট টেক ওভার। উই হ্যাভ নাথিং টু ডু উইথ পলিটিক্স’। এমনভাবে তিনি এই কথাটা বলেছিলেন যে তিনি সব কিছু জানতেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে রাতের অন্ধকারে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু ঘাতকরা এখানেই থেমে ছিল না। ২০০৪ সালের আগস্টের রোদ ঝলমলে বিকেল বাঙালির জীবনে নেমে আসে আরেক ভয়াবহ অন্ধকার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আজকের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে তাকে বাঁচাতে পাড়লেও মহিলা লীগের তৎকালীন সভাপতি আইভী রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ ২৪ জন নেতাকর্মী এই ভয়াবহ, নৃশংস, নিষ্ঠুর-নির্মম গ্রেনেড হামলায় মারা যান। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দুই কান ও চোখ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপূরণীয় ক্ষতি হয় তার শ্রবণশক্তির। অলৌকিকভাবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন এবং আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে, শোককে শক্তিতে পরিণত বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।