করোনা মহামারির সময়ে সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার ধামরাইয়ে কিছু রফতানিমুখী গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে কয়েক লাখ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এক তথ্য বলছে, গত ৮ বছরে পোশাক কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ১১ শতাংশ। এর ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে অনেক গার্মেন্টস মালিককে।
গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে স্থানীয় বাজারে সুতার দাম আর না বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন কারখানা মালিকরা। স্থানীয় বাজারে সুতার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। সুতার অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি পোশাক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। করোনা মহামারির আগে বাজারে সুতার কেজি ছিলো দুই’শ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি তিন’শ টাকা। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে টিকাদান কর্মসূচির কারণে ওইসব দেশে দোকানপাট খুলছে, সেইসঙ্গে দেশগুলোতে খুচরা বিক্রিও দ্রুত হারে বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশে প্রচুর অর্ডারও আসছে।
গার্মেন্টস মালিকরা জানান, স্থানীয় বাজারে সুতার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে রফতানিকারকরা সব অর্ডার নিতে পারছেন না। আর বাংলাদেশের রফতানিকারকরা যদি অর্ডারগুলো নিতে না পারেন, তাহলে সেগুলো নিশ্চিতভাবেই অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোতে চলে যাবে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে সুতা বা তুলা। মোট রফতানি পোশাক পণ্যের ৭৫ শতাংশই তুলা থেকে প্রস্তত হয়। বাংলাদেশ বিশ্বে তুলা আমদানিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। কোনো কারণে যদি এই শিল্পের কাঁচামাল (তুলা বা সুতা) সরবরাহ বা মূল্য প্রভাবিত হয়, তবে সেটি পোশাক শিল্পের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে।
ডিইপিজেড সূত্র জানায়, করোনা মহামারির কারণে ইতিমধ্যে অনেক পোশাক কারখানা ক্ষতির মুখে পড়েছে। অর্ডার বাতিল, মূল্য না পাওয়া, ডিসকাউন্ট, ফোর্স লোন ইত্যাদি কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারছে না মালিকরা। আবার ব্যবসা থেকে সরেও যেতে পারছেন না তারা। এর মধ্যে দায়-দেনা বাড়ছে প্রতিদিনই। এ অবস্থার মধ্যেই কারখানাগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করছে ক্ষতি সামলে টিকে থাকার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সাভার, আশুলিয়া ও ঢাকার ধামরাইয়ে প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৫’শর বেশি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এতে কাজ করেন প্রায় কয়েক লাখ শ্রমিক। এসব কারখানার উৎপাদিত শার্ট গেঞ্জি, প্যান্ট, জ্যাকেটসহ নানা উৎপাদিত পোশাক বিশে^র নামি-দামি দেশে রফতানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনার কারণে কারখানা মালিকরা সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন। গার্মেন্ট মালিকরা জানান, করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনা করতে গিয়ে খরচ বেড়েছে। অথচ, পণ্যের দর কমেছে ৪ শতাংশের মতো। পরিবহন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। মজুরি, বিদ্যুৎ, ব্যাংক চার্জ-সব মিলিয়ে গত ৮ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ১১ শতাংশ। এ অবস্থায় পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সুতার দাম না বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন গার্মেন্টস মালিকরা।
এ ব্যাপারে সাভারের আক্রান এলাকার এবিসি বাংলা অ্যাপারেলন্স লিমিটেড কারখানার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সুতার মূল্যবৃদ্ধিতে অনেক কারখানা নতুন অর্ডার নিতে পারছে না। কারণ সুতার দাম বাড়লেও ক্রেতারা (বায়ার) তাদের নতুন দেওয়া অর্ডারের দাম বাড়াচ্ছে না। যে কারণে ফিনিশড গুডস তৈরি করতে তাদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এসব কারণে অনেক কারখানা বায়ারদের নতুন অর্ডার ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আবার যেসব গার্মেন্টস কারখানা এক বা দুই মাস আগে অর্ডার নিয়েছিল তাদের এখন অনেকটা লোকসান দিয়েই পণ্য তৈরি করে চালান করতে হচ্ছে। বাজারে সুতার দাম কমানোর পাশাপাশি সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনা দাবি করেছেন গার্মেন্ট মালিকরা।