#রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশির সাথে একত্রীকরণের কোনো সুযোগ নেই: ড. ওয়ালি-উর রহমান। #ভূরাজনৈতিক চাপে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ। #রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা: ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। #যেভাবেই হোক রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে দিতে হবে: বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে মূলত একটি ভূরাজনৈতিক খেলার অংশ। বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য একটি কৌশল হিসেবে সবাই এখন এটাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার জন্য এদেরকে জায়গা দিয়েছে এবং এই পর্যন্ত তাদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ দিয়ে আসছে। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত কোন পজিটিভ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি, বর্তমানে তা অনেক কমে গিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা এমন পর্যায়ে অবস্থান করছে যদিও আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেলে এটা নিয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং এখনো চলমান আছে। যখন তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হলো সেই চুক্তি মোতাবেক তখন তাদের দেশ থেকে আমাদের দেশে তাদের মন্ত্রী আসলো, আমাদের এখান থেকে তাদের দেশে আমাদের মন্ত্রী গেল কিন্তু প্রত্যেকবারই আমাদের সাথে তাদের যে চুক্তি হয়েছে সেখানে তারা প্রত্যেকবারই এই চুক্তিকে অসম্মান করেছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৪২তম পর্বে বুধবার এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. ওয়ালি-উর রহমান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
ড. ওয়ালি-উর রহমান বলেন, আসলে বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যাটা ব্যাক পেইনে চলে এসেছে। এটা বর্তমানে এমন একটা পর্যায়ে অবস্থান করছে যদিও আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেলে এটা নিয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং এখনো চলমান আছে। যখন তাদের সঙ্গে আমদের সাথে চুক্তি হলো তখন তাদের দেশ থেকে আমাদের দেশে তাদের মন্ত্রী আসলো আমাদের এখান থেকে তাদের দেশে আমাদের মন্ত্রী গেল কিন্তু প্রত্যেকবারই আমাদের সাথে তাদের যে চুক্তি হয়েছে সেখানে তারা প্রতেকবারই এই চুক্তিকে অসম্মান করেছে। এই যে ঘটনাগুলো আমরা দেখছি সেখানে আমরা বলতে পারবো যে আমরা প্রত্যেকবারই যোগাযোগ রেখেছি এবং এখনো যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি। কিন্তু তাদের তরফ থেকে কখনোই পজিটিভ পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। এই জন্য আমরা এগুতে পারছি না এবং এটা সত্যি যে এশিয়াতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে বিশেষ করে আফগানিস্তানে বর্তমানে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেখানে স্বভাবতই রোহিঙ্গা ইস্যুটা একটু সবার অগোচরে চলে গিয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের চলতি অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে ওআইসি সব সদস্যরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা, মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। ওআইসির ওই প্রস্তাবটিতে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। এ ছাড়া তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এ গুরুভার বহনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়। সরকার এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অব্যাহত রেখেছে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় ও মানবিক সাহায্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রয়োজীয় মানবিক সাহায্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কার্যালয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা এসব কার্যক্রমে সমন্বয় করে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের ওপর চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরের একটি প্রকল্প নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ থেকে এ পর্যন্ত আট ধাপে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাকি ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেওয়ার আগেই ভাসানচরের কাজে যুক্ত হবে জাতিসংঘ। রেফুজি সমস্যা প্রত্যেক দেশেই রয়েছে কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা কিন্তু রেফুজি সমস্যা না, এটা মানুষের তৈরি একটা সমস্যা। এখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে এরা যেন কোনভাবেই আমাদের দেশে গোলমালের ভেতর না গিয়ে পড়ে।
মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে মূলত এটি একটি ভূরাজনৈতিক খেলার অংশ। বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য এটাকে একটি কৌশল হিসেবে সবাই এখন এটাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার জন্য এদেরকে জায়গায় দিয়েছে এবং এই পর্যন্ত তাদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ দিয়ে আসছে। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে থেকে এখন পর্যন্ত কোন পজিটিভ পদক্ষেপ বর্তমানে অনেক কমে গিয়েছে। এদেরকে বাংলাদেশে সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের লোভ দেওয়া হচ্ছে বা বিভিন্ন ধরনের সহায়তা আরোপ করা হচ্ছে। সব থেকে আমি বেশি দুঃখিত হয়েছি যখন আমরা দেখেছি যে হিউম্যান রাইট ওয়াচরা যারা রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই তারাও এটি নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করেছে। রাজনীতি করার তাদের কোন এজেন্ডা নেই কিন্তু তারা তাদের এজেন্ডা তৈরি করে রাজনীতির সাথে মিলিয়ে। রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জায়গা দিয়েছেন শুধু মানবতার খাতিরে। এদেরকে প্রত্যাবাসন করার দরকার হলো মিয়ানমার সরকারের। কিন্তু তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিকে টালমাটাল হচ্ছে। তাদের এই টালমাটালের কারণে রোহিঙ্গাপ্রত্যাবাসনে কোন গতি আসছে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত ভয়াবহ নৃশংসতার পর এর জবাবদিহি নিশ্চিত এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইনে প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত ভয়াবহ নৃশংসতার পর ১২ জুলাই ২০২১, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রথম বারের মত কোনো প্রস্তাব ভোটাভুটি ছাড়া পাস হলো। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অর্জিত এই সফলতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক। এখন রোহিঙ্গাদের যখন ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন আমরা দেখছি এটিকে নিয়ে অনেক ধরনের মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে। তারা এই ভাসানচরকে চর বলে আখ্যায়িত করেছে যেখানে নাকি কোন মানুষ বসবাস করতে পারেনা। কিন্তু আমাদের ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশে অনেক চর আছে যেখানে আমাদের মানুষজন খুব ভালোভাবেই বসবাস করছে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের উদ্ভট কথা বলা হচ্ছে সেটার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এখন কথা উঠছে যে তাদেরকে চলাচলের সুযোগ করে দিতে হবে, বাড়ি কেনার অধিকার দিতে হবে, আরও অনেক কিছু। এখন এখানে কথা হচ্ছে যে একটি দেশে নাগরিক এবং আরেকটি হচ্ছে অন্য দেশ থেকে যারা আমাদের এখানে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাদের অধিকার কখনোই এক হতে পারেনা। এই অধিকার দিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। বাংলাদেশে কূটনীতিকরা খুবই চেষ্টা করছে এই সমস্যাকে সমাধান করার জন্য। এখন সেই চেষ্টাটা থেকে আমাদের একটা ফল বের করে আনতে হবে। সেখানে আমাদের পুরানো কৌশল থেকে নতুন কৌশলের দিকে ধাবিত হতে হবে।
ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, আজ থেকে চার বছর আগে মোটামুটি এই দিনে সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের এই দেশে প্রবেশ করার অনুমুতি দেওয়া হয়েছিল। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে চার বছর আগের এইদিনে তাদের ওপর নৃশংস হত্যা-ধর্ষণ, হামলা চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে শুরু হওয়া ওই সেনা অভিযানের পরের পাঁচ মাসে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। অবশ্য এর আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করত। সেই ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করে সর্বশেষ আসা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে। সীমান্ত অতিক্রমের সর্বধরনের সুযোগ দিয়েই তাদেরকে এই ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে অনেক ধরনের সমস্যা আমাদের আসতে পারে এই বিষয়টি মাথায় রেখে মানবতার কারণে আমাদের জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই ঝুঁকিটি কাঁধে নিয়েছিলেন এবং সেসময় তিনি অসাধারণ একটি উক্তি দিয়েছিলেন যে, আমরা যদি কোটি কোটি লোকের অন্নের জোগান দিতে পারি তাহলে এই ১০ লাখ মানুষের অন্নের জোগান কেন দিতে পারবো না। আমরা জাতি হিসেবে যতটুকু সামর্থ্য আছে সেখানে যদি আমরা দুই বেলা খেতে পারি তাহলে তারাও দুই বেলা খাবার পাবে। এই যে একটা পদক্ষেপ এটা কিন্তু একেবারেই ইউনিক। প্রচুর বিত্তশালী দেশ আছে কিন্তু তারা এই সাহসটি দেখাতে পারেনি। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো রোহিঙ্গাদের ওপর চলা জাতিগত নিধন নিয়ে সোচ্চার হলেও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো যারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মোটাদাগে ভূমিকা রাখতে পারত তারা বাংলাদেশকে আশানুরূপ সহযোগিতা করেনি। তদুপরি বাংলাদেশের মতো এরকম ঘনবসতিপূর্ণ একটা দেশের পক্ষে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর দীর্ঘ মেয়াদে চাপ সামাল দেওয়া অসম্ভব। ভাসানচর বসবাসের উপযোগী করার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপের ছয় হাজার ৪২৭ একর ব্যবহারের উপযোগী ভূমির মধ্যে এক হাজার ৭০২ একর ভূমিতে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে বসানোর জন্য আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। আমাদের সরকার রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য কার্যক্রম প্রদানে সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে ২০১৭ সাল থেকেই রোহিঙ্গাদের নির্যাতন-নিপীড়নের সমস্যা বিশ্বব্যাপী সুশীল সমাজের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তখন থেকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে সরকার একটা কথায় মাথায় রেখে চিন্তা করেছেন যে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ বলেন, মানবতার মা হচ্ছে আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গারা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের নাগরিক। গণ্ডগোল বাধল ১৯৪৮ সালে যখন তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সময় প্রশ্নবিদ্ধ করা হল, আপনারা কে? মিয়ানমারের ভাষায় রোহিঙ্গা যার অর্থ আপনি কে? অর্থাৎ তাদের নাগরিকত্ব তাদের দেওয়া হলো না। একটা দেশে যুগের পর যুগ তারা বসবাস করছে কিন্তু হঠাৎ ১৯৪৮ সালে এসে তাদেরকে বলা হলো আপনারা কারা? এই প্রশ্নের সমাধান না করলে কিন্তু এই বিষয়টার সম্পূর্ণ সমাধান আসবে না। একটা দেশের মানুষ আরেকটা দেশে বিচরণ করছে সেখানে সেই দেশের সামরিক বাহিনী ও প্রশাসন যাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই দেশের মানুষদের রক্ষা করা, তাদের অধিকার নিশ্চিত করা কিন্তু তারাই সেটার উল্টোটা করে তাদেরকে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করে দিলো। মানবিকতার চরম বিপর্যয়ের দৃষ্টান্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। কয়েক যুগ ধরে তারা স্বভূমির সামরিক জান্তার নির্মম শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে এই মানবিক বিপর্যয় বাংলাদেশের জন্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যথিত করেছে এই মানবিক বিপর্যয়। তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, নানা সময় ছুটে গেছেন আশ্রয় শিবিরে। নিজে দেখেছেন এই অমানবিক অপরাধের চিহ্ন। কথা শুনেছেন নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের। দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই, তবে তাদের অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করা হবে না। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, শরণার্থীদের পাশে তিনি আছেন। দেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি তাদের পাশে থাকবেন। একথা সত্য যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অবস্থা, তাতে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময় আশ্রয় দেওয়া আমাদের মতো দরিদ্র দেশের জন্য সত্যিই অসম্ভব। সীমিত সাধ্যের মধ্যেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শরণার্থীদের আশ্বস্ত করছেন। তাদের থাকা, খাওয়া এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। এই চাপ বাংলাদেশের জন্য সত্যিই চ্যলেঞ্জ। শেখ হাসিনা মানবিক হৃদয় দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি মানবিক মনোভাবের পরিচয় দেওয়ায় বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বে একটি আলোচিত নাম। পিতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজের অবস্থান আগেই তৈরি করেছেন। এখন মানবিকতায়ও। বর্বর নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়-সেবা দিয়ে বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।