ভূরাজনৈতিক চাপে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে: মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ
প্রকাশ: বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১, ১১:৩৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে মূলত একটি ভূরাজনৈতিক খেলার অংশ। বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য একটি কৌশল হিসেবে সবাই এখন এটাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার জন্য এদেরকে জায়গা দিয়েছে এবং এই পর্যন্ত তাদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ দিয়ে আসছে। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন পর্যন্ত কোন পজিটিভ পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি, বর্তমানে তা অনেক কমে গিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা এমন পর্যায়ে অবস্থান করছে যদিও আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেলে এটা নিয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং এখনো চলমান আছে। যখন তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হলো সেই চুক্তি মোতাবেক তখন তাদের দেশ থেকে আমাদের দেশে তাদের মন্ত্রী আসলো, আমাদের এখান থেকে তাদের দেশে আমাদের মন্ত্রী গেল কিন্তু প্রত্যেকবারই আমাদের সাথে তাদের যে চুক্তি হয়েছে সেখানে তারা প্রত্যেকবারই এই চুক্তিকে অসম্মান করেছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৪২তম পর্বে বুধবার এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. ওয়ালি-উর রহমান, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মাবুদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরি করা হয়েছে মূলত এটি একটি ভূরাজনৈতিক খেলার অংশ। বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য এটাকে একটি কৌশল হিসেবে সবাই এখন এটাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার জন্য এদেরকে জায়গায় দিয়েছে এবং এই পর্যন্ত তাদেরকে রক্ষণাবেক্ষণ দিয়ে আসছে। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে থেকে এখন পর্যন্ত কোন পজিটিভ পদক্ষেপ বর্তমানে অনেক কমে গিয়েছে। এদেরকে বাংলাদেশে সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের লোভ দেওয়া হচ্ছে বা বিভিন্ন ধরনের সহায়তা আরোপ করা হচ্ছে। সব থেকে আমি বেশি দুঃখিত হয়েছি যখন আমরা দেখেছি যে হিউম্যান রাইট ওয়াচরা যারা রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই তারাও এটি নিয়ে রাজনীতি করা শুরু করেছে। রাজনীতি করার তাদের কোন এজেন্ডা নেই কিন্তু তারা তাদের এজেন্ডা তৈরি করে রাজনীতির সাথে মিলিয়ে। রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জায়গা দিয়েছেন শুধু মানবতার খাতিরে। এদেরকে প্রত্যাবাসন করার দরকার হলো মিয়ানমার সরকারের। কিন্তু তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিকে টালমাটাল হচ্ছে। তাদের এই টালমাটালের কারণে রোহিঙ্গাপ্রত্যাবাসনে কোন গতি আসছে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত ভয়াবহ নৃশংসতার পর এর জবাবদিহি নিশ্চিত এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইনে প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত ভয়াবহ নৃশংসতার পর ১২ জুলাই ২০২১, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে প্রথম বারের মত কোনো প্রস্তাব ভোটাভুটি ছাড়া পাস হলো। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অর্জিত এই সফলতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় মাইলফলক। এখন রোহিঙ্গাদের যখন ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন আমরা দেখছি এটিকে নিয়ে অনেক ধরনের মিথ্যা সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে। তারা এই ভাসানচরকে চর বলে আখ্যায়িত করেছে যেখানে নাকি কোন মানুষ বসবাস করতে পারেনা। কিন্তু আমাদের ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশে অনেক চর আছে যেখানে আমাদের মানুষজন খুব ভালোভাবেই বসবাস করছে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের উদ্ভট কথা বলা হচ্ছে সেটার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এখন কথা উঠছে যে তাদেরকে চলাচলের সুযোগ করে দিতে হবে, বাড়ি কেনার অধিকার দিতে হবে, আরও অনেক কিছু। এখন এখানে কথা হচ্ছে যে একটি দেশে নাগরিক এবং আরেকটি হচ্ছে অন্য দেশ থেকে যারা আমাদের এখানে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাদের অধিকার কখনোই এক হতে পারেনা। এই অধিকার দিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। বাংলাদেশে কূটনীতিকরা খুবই চেষ্টা করছে এই সমস্যাকে সমাধান করার জন্য। এখন সেই চেষ্টাটা থেকে আমাদের একটা ফল বের করে আনতে হবে। সেখানে আমাদের পুরানো কৌশল থেকে নতুন কৌশলের দিকে ধাবিত হতে হবে।