মাদক সম্রাট শাহিনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি আ. লীগের ত্যাগী কর্মীরাও!
পাবনা জেলার অন্তর্গত আতাইকুলা থানার ভুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গনেশপুর গ্রামের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহিন আলম। পাবনা জেলার অন্যতম মাদকের গডফাদার ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মাদকের টাকায় এবং অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে মাত্র কয়েক বছরে হয়ে উঠেছে এক আতঙ্কের নাম।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি আওমীলীগের আতাইকুলা থানার ভুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান সভাপতি কালু মেম্বার এবং সাবেক সাধারন সম্পাদক সামাদ মাষ্টার।
এ বিষয়ে কালু মেম্বার বলেন, "গত বছর আমার বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র এবং সন্ত্রাসীবাহিনী নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। তাকে প্রশ্ন করা হলে কেনো আপনার বাড়িতে শাহিন হামলা করলো? উওরে সে জানায়, তারা অবৈধভাবে বিচারের নামে চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেয়ার কারনে আমি ও আমার পরিবারের ওপর বর্বর হামলা করা হয়। আমি আমার পরিবারসহ মোট ৫ জন কে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে। আমার ছেলেসহ আহতদের কে চিকিৎসার জন্য পাবনা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে আমরা চিকিৎসার কাগজসহ আইনের সযোগীতার জন্য এ বিষয়ে শাহিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য থানায় শরণাপন্ন হই। প্রাথমিক অবস্থায় তৎকালীন ওসি নাসির উদ্দিন আমাদের মামলা লিখিত নেয় ও আমাদের মামলা রেকর্ড করার কথা বলে সকল মেডিকেল ডকুমেন্টস নেয় এবং আসামী গ্রেফতার করার কথা বলে আমার থেকে নগদ নয় হাজার টাকা নেয় । পরবর্তীতে জানতে পারি মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি। কারন সে সময় শাহিন ও বকুল মেম্বারের মাধ্যমের তার অবৈধ টাকা দিয়ে মামলাটি রেকর্ড করতে দেয়নি।
এ বিষয়ে আরো তিনি বলেন, আমি আওমীলীগের একজন কর্মী হয়েও থানায় মামলা দায়ের করতে পারিনি সেখানে সাধারন মানুষ তো শাহিনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে সাহসও পায়নি। যার ফলে শাহিন নির্বিচারে তার মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ টাকা গরীব ও অসহায় মানুষের কাছ থেকে বিচারের নামে অবৈধ অস্ত্র দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে।
কালু মেম্বারকে এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "শাহিনের মাদক ব্যবসা পুরোদমে চলছে। আমি আওমীলীগের একজন ত্যাগী কর্মী। যেখানে প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনা করেছেন সেখানে একজন মাদক ব্যবসাহী কীভাবে একজন আমাদের মতো ত্যাগী আওমীলীগ কর্মীদের উপরে নির্যাতন চালায়? এটাই আমার প্রশ্ন। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এসকল চিহ্নিত ও শীর্ষ মাদক ব্যবসাহী ও সন্ত্রাসী শাহিনের হাত থেকে আমাদের চিরতরে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।"
অপরদিকে আতাইকুলা থানার ভুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওমীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদ মাষ্টার শাহিনের বিষয়ে বলেন, "সে এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসাহী ও সন্ত্রাসের গডফাদার। সে আমার ভোগ দখল করে জমির দলিল জাল করে আমার থেকে চার লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি সেটা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে দুই বছর যাবৎ এলাকা ছাড়া করে রেখেছিলো। পরবর্তীতে আমি চাঁদা না দিয়ে দুই বছর পরে বাড়িতে আসার কারনে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অবৈধ পিস্তল এবং ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে আমার উপর হামলা চালায়। তারা আমার হাত পা ভেঙে আমাকে গুরুতর অবস্থায় রেখে চলে যায়। পরবর্তীতে আমি দীর্ঘ ছয় মাস যাবৎ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম এবং এখনো আমার কাছে চিকিৎসার সকল সনদ রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন ওসি মামলা লিখিত নিলেও তা রেকর্ড করে নি এবং ওসি বলেছিলো, শাহিনদের বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব না। পরবর্তীতে আমি কোনো বিচার না পেয়ে আমার জীবন রক্ষার জন্য চার লক্ষ টাকা চাঁদা দিয়ে আমার জায়গার মিমাংসা করি। এভাবেই দিনের পর দিন শাহিনের মাদক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসা।
তিনি বলেন, এদের কি কোনোদিন বিচার হবে না ? সামাদ মাষ্টার আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদক নির্মূলে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালের ৪ মে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ সকল কুখ্যাত মাদক ব্যবসাহী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎখাত করার আহ্বান জানান ।"
এ বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, শাহিনের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ মামলা এবং মুখ খুলতে সাহস পায় না। এজন্য তার অনেক অপরাধের শত শত প্রমান থাকা সত্ত্বেও তার অনেক অপরাধ চাপা পড়ে গিয়েছে তার কালো টাকার দ্বারা। আমরা শাহিনের অত্যাচার থেকে রেহাই পাবার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি ।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলেন এই কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাস চাঁদাবাজ শাহীন আলম আওয়ামী লীগের কোনো কর্মীর না হয়েও সে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী দল এর মান ক্ষুন্ন করছে। তারা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আরো শক্তিশালী হচ্ছে সেখানে এসকল মাদক ব্যবসায়ীদের জায়গা পাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।