সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
গাড়িতে সাংসদ স্টিকার লাগিয়ে বিপাকে স্থানীয় নেতা!
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১, ২:৩০ এএম | অনলাইন সংস্করণ

নাম মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ। পেশায় তিনি একজন ঠিকাদার। জাতীয় নির্বাচন তো দূরের কথা, কোন দিন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও অংশ নেননি তিনি। কিন্তু গাড়িতে সংসদ সদস্য লেখা স্টিকার লাগিয়ে ঘোরেন। 

সেই গাড়ি নিয়ে আবার সচিবালয় থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা সব জায়গাতেই তার অবাধ পদচারণা। এলাকায় যখন যান তখন গাড়ির ড্যাশ বোর্ডে থাকা সংসদ সদস্য লেখা মনোগ্রামটি ঢেকে রাখেন। কিন্তু ঢাকায় আসলেই তা আবার দৃশ্যমান হয়ে যায়। 

সম্প্রতি তিনি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ বছরের ২৪ এপ্রিল পটুয়াখালী-৩, গলাচিপা-দশমিনা এলাকার সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদার সাথে এমপি হোস্টেলে তার সরকারি অফিসে দেখা করতে যান মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ। 

তখন তিনি ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৪৪৫৫ নম্বরের গাড়ি নিয়ে জাতীয় সংসদ এলাকায় প্রবেশ করেন। গাড়ির সামনের ড্যাশ বোর্ডে সংসদ সদস্য লেখা সম্বলিত জাতীয় সংসদের একটি স্মারক ছিল। যা গাড়িতে ব্যবহারের জন্য সংসদ সচিবালয় থেকে সংসদ সদস্যদের দেয়া হয়। 

আর সামনের কাঁচে ছিল সংসদ সচিবালয় থেকে দেয়া স্টিকার। আবার ৪ মে রাতেও তিনি স্থানীয় সাংসদের সাথে দেখা করতে যান একই স্টিকার ও স্মারক লাগানো গাড়ি নিয়ে। 

ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সময়ও তিনি সংসদ সদস্য লেখা গাড়িটি ব্যবহার করেন। এতে করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও ট্রাফিক পুলিশ তাকে সংসদ সদস্য হিসেবেই মনে করত। 

বিআরটিএ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৪৪৫৫ নম্বরের গাড়িটি মোফাজ্জেল হোসেনের নামে নিবন্ধন করা। 

তবে ভিন্ন চিত্র দেখা যায় যখন তিনি পটুয়াখালীতে যান। তখন গাড়ির ড্যাশবোর্ডে থাকা জাতীয় সংসদের প্রতীক সম্বলিত সংসদ সদস্য লেখা স্মারকটি সরিয়ে ফেলেন বা ঢেকে রাখেন। তবে সংসদ সচিবালয়ের ত্রিভুজ আকৃতির স্টিকারটি লাগানো থাকে।

২৫ জুলাই গলাচিপা পৌর এলাকায় নিজ বাসায় মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ অবস্থানকালীন সময় দেখা গেছে, বাসার সামনে রাখা গাড়িতে সংসদ সচিবালয়ের স্টিকার লাগানো আছে। আর ড্যাশ বোর্ডে থাকা সংসদ সদস্যের স্মারকটি সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে, সংসদের নিরপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এ বিষয়ে জানান, এই গাড়িটির সন্দেহজনক ঘোরাফেরা তাদের নজরে এসেছে। 

ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৪৪৫৫ গাড়িটিকে কখনোই সংসদ সচিবালয়ের স্টিকার দেয়া হয়নি। আর সংসদ সদস্য লেখা যে মনোগ্রাম ব্যবহার করা হচ্ছে সেটাও এখন দেয়া হয় না। 

এটি একটি জাল স্টিকার বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।   

এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ স্টিকারের বিষয়টি পুরোপরি মিথ্যা দাবী করে এগুলো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে জানান।  

তার গাড়ির পর্যাপ্ত ছবি আছে জানালে এগুলো ফটোশপ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। ভিডিও ফুটেজেও আছে এমনটা জানানোর পর, মোফাজ্জেল মাসুদ কিছুক্ষন চুপ করে থাকেন। 

এরপর তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা এটি তাকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন, তবে এখন তিনি এগুলো খুলে ফেলেছেন। এলাকায় গুঞ্জন আছে মোফাজ্জেল মাসুদের সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যবসায়িক লেনদেন আছে। 

সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা এই স্টিকার মাসুদকে দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি কিভাবে স্টিকার দেবো? আমি কি স্টিকার প্রোডাকশন করি নাকি? এমপি হিসেবে সংসদের স্টিকার পেতে আবেদন করতে হয় এবং এটি গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তারপর দেয়া হয়। তাকে কেন আমি সংসদ সদস্যের স্টিকার দেবো?”  

তিনি আরো বলেন, “সংসদ সচিবালয় থেকে আমার পিএ’র কাছে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, আমি সেখানেও বলে দিয়েছি কেউ যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। আর সংসদ সদস্য না হয়েও এই স্টিকার ব্যবহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ”।

এই সংসদ সদস্য আরো দাবি করেন, মাসুদের সাথে তার কোন ধরনের ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব নেই। 

কে এই মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ?

মোফাজ্জেল হোসেন মাসুদ এলাকায়, মোফা মাসুদ হিসেবে পরিচত। তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রোটন-রিপন কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। 

তার আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। 

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন না। তবে সবাইকে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতেন। 

পরে দল ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা ভবনের টেন্ডারবাজি শুরু করেন। শিক্ষা ভবনের বিভিন্ন সময়ের টেন্ডারবাজির বিষয়ে তার নাম বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমে এসেছিল। 

যুবলীগ নেতা সম্রাট গ্রেপ্তারের পর ঢাকা ছেড়ে এলাকার রাজনীতি শুরু করেন। গত জুলাই মাসে হওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তাকে মনোনীত করে জেলা কমিটি। 

তার বিরুদ্ধে দুই মাস আগে হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে আওয়ামী লীগের মনোয়ন পাইয়ে দেবেন এই কথা বলে টাকা নেয়ার অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগীদের ফোন রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব নিয়ে মাসুদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন সাবেক ছাত্রলীগের যে কোন নেতাকেই জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে তিনি ছাত্র ছিলেন কিনা। 

তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর, শিক্ষাবর্ষ ও বিভাগ সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলে মাসুদ তা দিতে নানা ধরনের টালবাহানা করেন। 

ফোন দিয়ে তার কাছ থেকে এই তথ্য চাওয়া হলেও তিনি তা দেননি। এক পর্যায়ে তিনি  প্রতিবেদকের সাথে একান্তে দেখা করতে সময় চান এবং অর্থ লেনদের মাধ্যমে বিষয়টি চেপে যাবার প্রস্তাব দেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]