#সফল একজন নেত্রী ছিলেন আইভি রহমান: অ্যারোমা দত্ত। #আগস্টের সকল ষড়যন্ত্র একই সূত্রে গাঁথা: অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। #১৫ আগস্ট ও ২১শে আগস্ট দুটোই একই সূত্রে গাঁথা: আফজালুর রহমান বাবু। #আগস্ট, শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার মাস: ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন।
আগস্ট মাস ট্রাজেডির মাস। এই মাসটা আসলেই মনের ভেতরে কি রকম একটা রক্তক্ষরণ হয় সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে ৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট মারা যান আইভি রহমান। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই অনেক মিশুক ছিলেন, সবার সাথে কথা বলতে ভালোবাসতেন। নির্ভীক অসীম সাহসী শহীদ বেগম আইভি রহমানের রক্তের ঋণ শোধ হবার নয়। জাতি তাঁর অবদান বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৪৪১তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ঢাবি ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতা বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
অ্যারোমা দত্ত বলেন, আগস্ট মাস ট্র্যাজেডির মাস। এই মাসটা আসলেই মনের ভেতরে কি রকম একটা রক্তক্ষরণ হয় সেটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আগস্ট আসে শোকে বিনম্র হয় বাঙালি। আমি মাঝে মাঝে ভাবি যদি ক্যালেন্ডার থেকে এই আগস্ট মাসটাকে বাদ দেওয়া যেতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখন্ড ও লাল সবুজ পতাকা পেয়েছি স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে সপরিবারে আমরা সেই মহান নেতাকে হারিয়েছি। এ আগস্ট মাসেই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। মহান আল্লাহর অপার কৃপায় তিনি বেঁচে থেকে পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৫ আগস্টের এ ঘটনা মানবতার ওপর চরম আঘাত। তেমনি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাও আমাদের বাঙালি জাতি ও দেশের রাজনীতির জন্য চরম আঘাত। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে; কিন্তু তারা তার নাম বাঙালি জাতির অন্তর থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর জখম হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট মারা যান আইভি রহমান। আজকে (২৪ আগস্ট) তার মৃত্যুবার্ষিকীতে পুরো জাতি তাকে স্মরণ করছে। আইভি আপা এমন একজন সফল নেত্রী ছিলেন যিনি সব সময় নিজের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করতেন এবং সবাইকে যেকোনো আন্দোলনে তিনি উদ্বুদ্ধ করতে পারতেন। আমরা অনেক গভীরভাবে আইভি আপার সঙ্গে কাজ করেছি। উনি নানা সমস্যায়, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি সবসময় ন্যায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। এবং সেখানে কিন্তু তিনি দল মত কিছুই মানতেন না। উনি শুধুই দেখতেন কোনটা ন্যায়ের পক্ষে এবং কোনটা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শক্তির পক্ষে।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, আগস্ট মাস শোকাবহ মাস, বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কতম দিন ও অধ্যায় এ মাসে রচিত হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস আছে কিন্তু নারী, শিশু ও গর্ভবতী মহিলাসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করার জঘন্যতম কাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও নেই এবং ২১ আগস্টে এই রকম নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ইতিহাসও পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও নেই। এই হত্যাকাণ্ডে আসলে আমরা যদি দেখি তাহলে দেখতে পাবো যে, ৭১ সালের পরাজিত শক্তি, ১৫ আগস্টের পরাজিত শক্তি কিংবা ১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্টের পরাজিত শক্তিরা কিন্তু একই সূত্রে গাথা। সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা বার বার বাঙালিদের পরাজিত করার জন্য তারা সব সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারকে খুঁজে নেই সব সময় কারণ তারা জানে এই পরিবারটিকে শেষ করে দিতে পারলে তাদের পৈশাচিক যে ষড়যন্ত্র আছে সেটা তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আগস্ট মাস আসলেই এরা সক্রিয় হয়ে যায়। আসলে এই পরাজিত শক্তির পেছনের যে উৎস আছে সেটা মূলত সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি থেকে শুরু করে খুনি জিয়া থেকে এরপর খালেদা জিয়া-জামায়াত ইসলাম ও তারেক জিয়ার মাধ্যমে প্রতিবার এই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিরা বারংবার আঘাত করছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে ৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট মারা যান আইভি রহমান। আইভি রহমান ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই ভৈরব শহরের চণ্ডিবের এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ভৈরবের জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর তার নামের সঙ্গে যুক্ত করেন রহমান। তার বাবা জালাল উদ্দিন ছিলেন তৎকালীন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম ছিলেন গৃহিণী। ৮ বোন ৪ ভাইয়ের মধ্য আইভি রহমান ছিলেন পঞ্চম। ১৯৭১ সালে আইভি রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগ সদস্য এবং ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। উনি ছাত্র জীবন থেকেই অনেক মিশুক ছিলেন, সবার সাথে কথা বলতে ভালোবাসতেন। পরিশেষে বলতে চাই, ষড়যন্ত্রকারীরা বার বার হামলা করেছে এবং সামনেও করতে পারে। সুতরাং আমরা যদি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারি তাহলে আমরা সামনেও যেকোনো ষড়যন্ত্রকে প্রতিরোধ করতে পারবো।
আফজালুর রহমান বাবু বলেন, আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে প্রাণভরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে চাই, আমি স্মরণ করতে চাই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব যাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিন আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গেরিলা বলেছেন, আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ ফজলুল হক মনি, আবু নাসেরসহ সেই ১৫ আগস্টের কালরাতে যারা শহীদ হয়েছিলেন এবং একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জন শহীদ বিশেষ করে আইভি রহমানকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই। ২১ আগস্টের খুনিরা এক ও অভিন্ন। ঘাতকচক্র সবসময় রক্তপাত ঘটাতে ষড়যন্ত্র করছে। রক্ত পিপাসু হায়েনার ছোবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে তাদেরকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। আইভি রহমান সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, দুই কন্যা তানিয়া ও ময়নার গর্বিত জননী। নির্ভীক অসীম সাহসী শহীদ বেগম আইভি রহমানের রক্তের ঋণ শোধ হবার নয়। জাতি তাঁর অবদান বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে। তিনি কখনও মঞ্চে বসতেন না। তিনি নিচে বসতেন এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সকল নেত্রীকে নিয়ে তিনি স্লোগানের ব্যবস্থা করতেন। তিনি নিজে স্লোগান দিতেন, কর্মীদের উৎসাহিত করতেন এবং কাছাকাছি থাকতেন। এই পনেরই আগস্ট এবং একুশে আগস্ট দুটোই একই সূত্রে গাঁথা। সেদিন কার যে নৃশংস অবস্থা আসলে বর্ণনা করার মতো নয়। একটার পর একটা গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল সেদিন। এইরকম রাজনৈতিক নিকৃষ্টতা পৃথিবীর ইতিহাসে একেবারেই বিরল। সেদিন যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন সবাই নির্মমভাবে আহত হয়েছিলেন। মানবদেয়ালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রাণ রক্ষা হয়েছিলো, ততক্ষণে আইভি রহমানসহ ২৪ নেতাকর্মীর শরীরে গেঁথেছিলো স্পিøন্টার। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি চক্রের সকল প্রকার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। যেকোন মূল্যে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ করতে হবে। তাই সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্নে যেকোন ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, আগস্ট মাস আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণের মাস, বেদনার মাস এবং আমরা স্মৃতিহারা হয়ে যাই এই মাসে। এই মাসটি আসলেই আমাদের বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়, আমরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ি এবং শোককে শক্তিতে পরিণত করে যে একটা দুর্দান্ত সাহসী হয়ে ১৮ কোটি মানুষ গর্জে ওঠে এই মাসে। এই আগস্ট মাসে সেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা যারা এই দেশটাকে নিয়ে নানাভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এখনো আছে তারা এই দেশটাকে অচল করার জন্য এখনও মৌলবাদী গোষ্ঠী, এখনো ধর্মান্ধ এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে নিয়েই বারবার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে এই দেশটাকে পিছিয়ে দিতে চায়। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং তারপর থেকেই একদল ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের স্বাধীন বাঙলার উন্নয়ন রথ যেটা আমাদের জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল তা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। এই জন্যই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ড চালানো হয় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের উপর। এরপর ২১টি বছর বাংলাদেশ ছিল অন্ধকার যুগে। এরপর এর থেকে বাঙালিকে পরিত্রাণ দেয় জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। আজকে তিনি নেই কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মাঝে আছেন। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে আজ আমরা দেশের বিরুদ্ধে রটে যাওয়া সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি এবং হচ্ছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বর্ণযুগ পালন করে আসছে যা ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকগুলো যেভাবে ঊর্ধ্বগতিতে আছে তা আলোচনা করে সহজে শেষ করা যাবে না। যখনই এইরকম উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দেশে শুরু হয়ে একটি আশার দিক সৃষ্টি করে, তখনই এই দেশেরই কিছু কুচক্রীরা নানা রকম বিকল্প পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোকে সারা বিশ্বের কাছে ম্লান করার জন্য। আমি বিশ্বাস করি, কোন রকমের ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই উন্নয়নগুলো কোনভাবেই বন্ধ করতে পারবে না।