পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) ৪নং আটঘর কুরিয়ানা ইউনিয়নের আটঘর বাজার ও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন সীমান্তবর্তী সংযোগ ব্রিজ এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ব্রিজ দিয়ে পারাপার করছে ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষ। ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ভুক্তভোগীরা দ্রুত ব্রিজ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটঘর-কুরিয়ানা সীমান্তবর্তী আটঘর খালের উপর ১৯৯৫ সালে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ব্রিজ নির্মাণ করেন। পিরোজপুর জেলা পরিষদের অর্থায়নে এ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে ওই ব্রিজটি নির্মাণকালে ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। এতে নির্মাণের দুই বছরের মাথায় ব্রিজটি হেলে-ধুলে নড়বড়ে হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ২০১০ সালের দিকে ব্রিজটির লোহার ভিম হেলে-ধুলে গেলে স্থানীয়রা পিরোজপুর জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। কিন্তু অদ্যবধি জেলা পরিষদ ওই ব্রিজ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। সংস্কার না করায় বর্তমানে ব্রিজটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ওই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন ৮/১০ হাজার মানুষ- বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, আটঘর (এরশাদ) মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আন্দাকুল (আটঘর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আটঘর বাজার, কুরিয়ানা বাজার, মসজিদ-মাদরাসার মুসল্লিÑশিক্ষার্থী ব্যবসায়ী প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। নড়বড়ে ও ভেঙে যাওয়া ব্রিজ দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে পারাপার হচ্ছে। এছাড়া ব্রিজ দিয়ে ছোট ও মাঝারি যানবাহন চলাচল করতে না পারায় বিপাকে পড়েছে অটোবাইক, মোটরসাইকেল, টেম্পো, রিকশা ও ভ্যানসহ অভ্যন্তরীণ রুটের যানবাহনের যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সিমেন্টের ঢালাই দেওয়া বিভিন্ন স্থান থেকে বেশির ভাগই ভেঙে পড়েছে। ক্রস অ্যাঙ্গেলগুলো মরিচা ধরে ব্রিজটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। স্থানীয়রা ওই ব্রিজ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এ ব্যাপারে ওই ওয়ার্ডের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং ওয়ার্ড আ.লীগ সভাপতি ও সমাজসেবক শিক্ষানুরাগী মাস্টার মো. সরোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ৪নং আটঘর কুরিয়ানা ইউনিয়নের আটঘর বাজার সীমান্তবর্তী হওয়ায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি কারো নজরে পড়ছে না। ব্রিজটি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এলাকার সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা এই ব্রিজ। তিনি ব্রিজটি সংস্কারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেন এবং দ্রুত ব্রিজটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। আটঘর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমি, নাজমুল, রেদওয়ান, ছগির ও আসমা বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙ্গা ব্রিজ পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়। আমরা দ্রুত এ ব্রিজটি সংস্কারের দাবি জানাই।
আটঘর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাসির চৌধুরী জানান, দুটি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে। তিনি সরকারের প্রতি ব্রিজটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী মো. কাঞ্চন চৌধুরী জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে আটঘর বাজারের শতাধিক ব্যবসায়ী ও সপ্তাহের শুক্রবার পেয়ারা ও নৌকার হাটে পর্যটক স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতাসহ হাজার হাজার লোক ওই ব্রিজ দিয়ে পারাপার হচ্ছে। দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী মো. ইউনুছ মোল্লা জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজটি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার করা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. সাগর মোল্লা বলেন, এই ব্রিজটি অতি জনগুরুতপূর্ণ এ সংযোগ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। ব্রিজটি বর্তমানে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ব্রিজটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ আমাকে কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে আমি খোঁজখবর নিয়ে জানাতে পারবো। নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মির আলী সাকির মুঠোফোনে বলেন, এ ব্রিজের ব্যাপারে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছে চাহিদা চেয়েছি। চাহিদা মোতাবেক আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে, যেহেতু আপনি আমাকে অবহিত করেছেন। খোঁজখবর নিয়ে প্রকল্পের মধ্যে ওই ব্রিজটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।