প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট, ২০২১, ১০:৪৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক ভাবে আহত হন আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমান। যিনি ছিলেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের জীবনসঙ্গী। বিএনপি জোট সরকারের জিঘাংসার শিকার হয়ে পরিণত বয়সের আগেই তাকে চলে যেতে হয়। পিছনে রেখে যান স্বামী জিল্লুর রহমান ছেলে পাপন (বিসিবি সভাপতি), মেয়ে তানিয়া, ও ময়নাকে। কিন্তু তাকে মৃত ঘোষণা করা হয় সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার হাসপাতাল থেকে ফেরার পর পরই। কি ঘটেছিল সেদিন তা অনেকেরই অজানা। সেই বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন যাকে নিশানা করে এই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দল নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেই ঘটনার বর্ণনা দিলেন।
গতকাল ছিল আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। ২১ আগস্ট হামলার পর আরও চার দিন জীবিত ছিলেন আইভি রহমান। একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে তিনি সেই বিভৎস ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন। নিজে সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারলে অন্তরালের ঘটনার বর্ণনা দিতে সক্ষম হতেন। কিন্তু সেই সুযোগ তাকে আর দেয়নি ঘাতকদের দলনেতা বেগম খালেদা জিয়া। নিজের সন্তানের অপরাধ ঢাকতেই সেদিন হয়তো নিজে হাসপাতালে গিয়েছিলেন আলামত ধ্বংস করতে। তাই তিনি ফিরে যাওয়ার পর পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইভি রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন। অথচ খালেদার যাওয়ার আগে নিজের আহত হওয়ার ঘটনা বলতে চেয়েছিলে আইভি রহমান। সন্দেহ করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবেই আইভি রহমানের জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ ১৭ বছর পরে এসেও আইভি রহমানের এই মৃত্যুর ঘটনা অপ্রকাশিতই থেকে গেছে। যদিও গত সোমবার এবিষয়ে কথা বলেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানে তিনি আইভি হত্যার শিকার কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সিএমএইচে গিয়ে দেখে আসার পর পরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমান। তিন দিনের মাথায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল তার। সেই দিনটি ছিল গতকাল ২৪ আগস্ট। আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।
এদিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়াত নেত্রী আইভি রহমানকে স্মরণ করে বলেন, ‘আজকের দিনে আমার আইভি চাচির কথাই বেশি মনে হচ্ছে। আর একটা অবাক কা- আপনারা হয়তো জানেন না, তাকে যখন সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয় আমরা ঠিক জানি না কখন কোন মুহূর্তে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন? তার ছেলে-মেয়েরা তার কাছে ছিল। সে সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে দেখতে যাবেন বলে তার ছেলে-মেয়েরা যারা বেডের কাছে ছিল, তাদের একটা কামরার মধ্যে নিয়ে তালা মেরে রাখা হয়। প্রায় তিন-চার ঘণ্টা নাজমুল হাসান পাপন, বোন তানিয়া, ময়না, এদের সবাইকে একটা রুমে তালা দিয়ে রেখে, তারপর খালেদা জিয়া যান আইভি রহমানকে দেখতে। আর খালেদা জিয়া যখন দেখে ফিরে আসেন, এরপরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ কথাটা অনেকেরই জানা নেই, আমি এটা জানিয়ে রাখলাম যে কত বড় নৃশংসতা এরা করতে পারে!’ এসময় প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানসহ সবার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এক ডজনের বেশি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এ হামলায় শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও তাঁর শ্রবণেন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন। আর কমপক্ষে ৫০০ নেতাকর্মী, পথচারী ও সাংবাদিক আহত হন। প্রধানমন্ত্রীর এই তথ্য প্রমাণ করে তৎকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে। সিএম এইচে চিকিৎসাধীন রোগীর নিকট আত্মীয়দের ঘর থেকে বের করে দিয়ে সেই ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেই সেদিন যেমন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, তেমনি সেই হামলাকে বিভ্রান্ত করতে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়। একজন অতি সাধারণ হকার জজ মিয়াকে ব্যবহার করতে টোপ দেওয়া হয়। সেই টোপ ছিল তার সন্তান বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য নিয়মিত খোরাকির নিশ্চয়তা। প্রথম প্রথম সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু কথায় আছে ধর্মের ঢাক আপনি বাজে। তাই একদিন সব ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। প্রকৃত খুনিকে আড়াল করার চেষ্টা প্রকাশ্যে চলে আসে। এরপর ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেনেড হামলার মামলাটি পুনোরুজ্জীবিত করা হয়। তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর যিনি ভুল ইংরেজি বলায় পারদর্র্শী তাকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়।
বাবরের বিখ্যাত উক্তি ‘উই লুকস আওয়ার শত্রুজ’। সেই বাবরের দেওয়া অনেক তথ্যই এখন এবিডেন্স হিসাবে মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে তিনি তারেক জিয়াকে অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে বলতে চেয়েছেন। তবে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে সেটি হচ্ছে রাষ্ট্র মানুষের জান মালের নিশ্চয়তা বিধানের দায়িত্ব নিয়েছে। সেই রাষ্ট্রযন্ত্র যখন কোন হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তখন বিষয়টি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেন এবং কাদের স্বার্থে রাষ্ট্র এমন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে সেটিও প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। এখানে বিএনপি জোট সরকার যে চিরকালীনভাবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল সেটি এখন কেবল অভিযোগ নয় সেটিই সত্য। এ কারণেই তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সব আলামত ধ্বংস করার খেলায় মেতেছিল। আইভি রহমানের হত্যাও তারই একটি অংশ মাত্র।