শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
অভিযানে কেউ বেশ্যা কেউ রাতের বাদশাহ
পীর হাবিবুর রহমান
প্রকাশ: বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১, ১:২৫ এএম | অনলাইন সংস্করণ

শোকাবহ আগস্টের বেদনাবিধুর ভাবগাম্ভীর্য আরেকদিকে করোনার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গোটা জাতি যুদ্ধে অবতীর্ণ। ডেঙ্গুর প্রকোপ ও মৃত্যু করোনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরেক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গণটিকা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ এবার ব্যাপকহারে দেখা দেওয়ায় আশার আলো জ্বলেছে। জীবন ও জীবিকার লড়াইয়ে আজ বুধবার থেকে লকডাউন শর্ত সাপেক্ষে শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। জনগণকে এখন আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। একদিকে করোনার টিকা গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আশপাশের মানুষকেও তা অনুসরণের তাগিদ দিতে হবে। সরকারের সব মেগা প্রকল্পের কাজ যেমন চলছে তেমনি থেমে নেই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞও। মানুষের জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতি রক্ষার এ লড়াইয়ের মাঝেও যারা সমাজকে কলুষিত করে দিন নেই রাত নেই বেআইনি কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জঙ্গিবিরোধী অভিযান, মাদকবিরোধী অভিযান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে আমরা বরাবর স্বাগত জানিয়েছি ও সমর্থন দিয়েছি। অন্ধকার জগতের কুৎসিত, কদর্য কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকেও স্বাগত জানিয়ে আসছি। মফস্বল থেকে উঠে আসা একদল তরুণী বা নারী লোভের লালসায় অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার মোহে নিজেদের অতীত ভুলে গিয়ে এক অন্ধকার জগৎ তৈরি করেছিল। এদের কেউ প্রতারক, কেউ আমদানিনিষিদ্ধ ও চোরাই গাড়ি এবং যৌনবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। 

সিনেমার বাজার মন্দা হলেও নায়িকা পরীমণির যৌনবাণিজ্যের বাজার তুঙ্গে। তাকে যেমন আটক করা হয়েছে তেমনি ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মরিয়ম আক্তার মৌ, হেলেনা জাহাঙ্গীর, নজরুল ইসলাম রাজ, মিশু হাসান, শরিফুল ইসলাম জিসানকেও আটক করা হয়েছে। এদের রিমান্ড চলছে। আবার কাউকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদের কেউ বেশ্যা, কেউ দালাল, কেউ বা মাসি। আবার কেউ চোরাই গাড়ি বিক্রির সিন্ডিকেটে জড়িত। নানামুখী অপরাধে রাত নামলেই এরা ঢাকা শহরে নিজেরা যেমন ভোগবিলাসে মত্ত হতো, তেমনি তাদের আসরে মনোরঞ্জনের জন্য নানা শ্রেণি-পেশার বিত্তবানদের টেনে নিয়ে যেত মনোরঞ্জন দিতে। যারা মনোরঞ্জন দেয় তারা একালের হাই সোসাইটির বেশ্যা যাদের রাতের রানী বলা হচ্ছে। আর যারা মনোরঞ্জন নিচ্ছেন তাদের রাতের রাজা বা বাদশাহ বলা হচ্ছে। অভিযানে আটকের দৃশ্য কলুষিত সমাজের অন্ধকার জগতের একটি বিন্দুমাত্র দৃশ্যমান হয়েছে বলে আগের লেখায় উল্লেখ করেছিলাম। এ অভিযান অব্যাহত রেখে পুরো অন্ধকার জগতের কুৎসিত কদর্য চেহারা দৃশ্যমান করতে অনুরোধ থাকবে। অনেকে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এদের পক্ষে সহানুভূতি দেখান। এদের সম্মান করে কথা বলতে বলেন। এসব দেখে তাদের জন্য করুণা হয়, লজ্জা হয়। সমাজকে যারা নষ্ট করেছে, সমাজকে যারা নষ্টদের হাতে তুলে দিয়েছে, সমাজে যেসব নষ্ট বেপরোয়াভাবে ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে দাপটে চলাফেরা করে তাদের জন্য আবার কীসের সহানুভূতি? কীসের সম্মান? বেশ্যার দালাল ও মাসিদের জন্য কীসের সহানুভূতি? সমাজের পরিশ্রমী, সৃজনশীল, মেধাবী নানা শ্রেণি-পেশার নর-নারীর জন্য সম্মান ও ভালোবাসা। এদের জন্য নয়।

Bangladesh Pratidinএকটি পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় যখন এসব নষ্ট পচন ধরিয়ে দেয় তখন মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিপ্লবের বাতি জ্বলে ওঠে। সে বিপ্লব যদি মুক্তিযুদ্ধের বা রাষ্ট্রের আদর্শের পরিপন্থী হয় তখন সর্বনাশ হয়ে যাবে। পাপিয়াকে দিয়ে যে অভিযান শুরু হয়েছিল তা আবার শুরু হয়েছে। একে থামতে দিতে নেই। কিছুটা হলেও এদের বোঝানো উচিত। সমাজকে এতটা কলুষিত করার অধিকার এ নষ্টদের কেউ দেয়নি। এসব বেআইনি কর্মকান্ড চলতে পারে না। সমাজে আদর্শিক নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। শুধু সিনেমা, মডেলিং জগতের নারীরাই নয়, সমাজের অনেক মুখোশ পরা নারীও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য, ভোগবিলাসের জন্য, সামাজিক মর্যাদার লোভে, অর্থ ও ক্ষমতার মোহে ক্ষমতাবান, বিত্তবান ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিদের শয্যায় যাওয়া বা তাদের রক্ষিতা হয়ে থাকার ঘটনা নতুন নয়। মধ্যবয়সী একদল নারীও গোপনে এ অভিসারে যান। পরীমণি, পিয়াসাদের আসরে মনোরঞ্জন নিতে ৩ শতাধিক বাদশাহ যেতেন। জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এরা কারা? দুবাই সমুদ্রের বুর্জ খলিফার ব্যয়বহুল স্যুটে টানা সাত দিন সাত রাত পরীমণি কোন বাদশাহর মনোরঞ্জনে কাটিয়েছেন তার নাম প্রকাশ করা হোক। অন্যথায় মানুষ যাকে তাকে সন্দেহ করবে। রিমান্ডে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অনেক তথ্য পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এসব তথ্য উন্মোচিত হোক। অন্তত সমাজ চিনুক। রাতের বেশ্যা থেকে রাতের বাদশাহ সবার মুখোশ সমাজে খুলে পড়ুক। আমরা গোটা অন্ধকার জগতের অচেনা মুখগুলো চিনতে চাই। সমাজে ভালো মানুষের চলাফেরা নিরাপদ করতে এদের মুখোশ উন্মোচিত হওয়া দরকার। সামাজিক ক্লাবগুলোও এদের কারণে আজ সমাজে প্রশ্নবিদ্ধ। সামাজিক ক্লাবে যে বেশ্যাদের ঠাঁই নেই, সেটিও পরিষ্কার করা দরকার। মানুষকে প্রেমের অভিনয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে যে শিকার করা যায় তার সর্বশেষ উদাহরণ ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা সাকলায়েন। এসব মতলববাজ, নষ্ট নারী ও তাদের দালাল মাসিরা সমাজের জন্য ভয়ংকর অভিশাপ। নষ্টদের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু সমাজকে কলুষিত করার শক্তি তাদের প্রচন্ড।

সরকারের অভিযানে আটক অনেকের কদর্য জীবনের ছবি বেরিয়ে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন এদের নষ্ট করেছে কারা? আসলে কি কেউ কাউকে নষ্ট করে? আমাদের সমাজ কি একালের মতো সাদা-কালো যুগে এতটা নষ্ট ছিল? এখনো কি সমাজে সবাই নষ্ট? সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তো এখনো ভালো। একটা সময় ভদ্র পরিবারও টানাপোড়েনের মূল্যবোধের নির্লোভ জীবনযাপন করেছে আত্মমর্যাদা নিয়ে। এখনো অনেকে করছে। আদর্শিক সৎ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী নিরাভরণ সাদামাটা জীবনযাপনে সেকালে প্রায় সবাই ছিলেন। তেমনি ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। বেশির ভাগ ঘুষ-দুর্নীতি করতেন না। এখনো অনেকে করেন না। তদবির বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য সেকালে ছিল না, একালে ব্যাপক হারে হচ্ছে। ব্যাংকের টাকা লুট, অর্থ পাচার, শেয়ারবাজার লুট, একালের ভয়ংকর অপরাধ। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় ছিল উপচে পড়া সুখ। আদব-কায়দা, আশরাফ-আখলাকের কোনো ঘাটতি ছিল না। ছেলেমেয়েরা টানাটানির সংসারে সুখ ও মর্যাদার জীবনেই ছিল। একালেও অনেকেই এখনো আছেন। নিম্নমধ্যবিত্তরাও কষ্ট সংগ্রামের জীবনযাপন করেছেন। উচ্চমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যেও পরিশীলতা পরিমিতিবোধ ছিল। আদর্শ ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ নানা পেশায় প্রায় সবাই ছিলেন। এখনো আছেন। অনেকে আবার নষ্টদের সারিতে। সিনেমা নাটক মডেলিংয়েও শিল্পীরা মর্যাদা সম্মান জনপ্রিয়তা লাভ করতেন। এখনো অনেকে তা ধরে রেখেছেন। কিন্তু অনেকের পচন ধরেছে ভয়ংকর। একালে উচ্চশিক্ষিত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপালের কি নোংরা ভাষা ভাইরাল হয়েছে ভাবা যায়? কান গরম হয়ে যাওয়া নোংরা রাস্তার পাশের কলতলার এমন খিস্তিখেউরের পর তদন্ত কমিটি হলেও এখনো প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি বহাল। একজন শিক্ষকের ভাষা যদি এত নোংরা হয়, সমাজের অন্যদের কাছ থেকে সুবচন আশা করি কীভাবে? এখনো তিনি বহাল থাকেন কী করে? প্রয়োজনে তাকে সরিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ফোরামও ভেঙে দেওয়া হোক। যারা ভর্তি বাণিজ্যের নামে দুর্নীতি করে তাদের তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হোক। ২৭ হাজার ছাত্রীর দেশসেরা এ প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত করা যায় না। প্রিন্সিপালের এমন নোংরা ভাষার পক্ষে তারাই সাফাই গাইতে পারে যারা একান্ত জীবনে এমন ভাষায় অভ্যস্ত এবং নিজেদের আখের গোছাতে অনৈতিক পথে হাঁটার অভ্যাস রাখে। সরকার বা সমাজ এমন নোংরা ভাষার প্রিন্সিপালকে প্রশ্রয় দিতে পারে না। মাদরাসাগুলোয়ও কী বিভীষিকাময় পরিস্থিতি আজ! মাদরাসা শিক্ষক দ্বারা ছাত্র বলাৎকার ও ছাত্রী ধর্ষণের রোমহর্ষক ঘটনা যেমন বেরিয়ে আসছে তেমনি মামুনুল হকের মতো তথাকথিত উগ্র আলেমের রক্ষিতাও ধরা পড়েছে। সমাজের সবখানে পচন ধরেছে।

সমাজটা এমন নষ্ট হয়েছে যে আড্ডার আসরে বা ব্যক্তিজীবনে কেউ কেউ নোংরা ভাষা ব্যবহার, যৌনবিকৃত রগরগে আলোচনা করে আনন্দ পায়! এটা ভাবা যায়? উচ্চশিক্ষিত ও ভদ্রতার মুখোশ পরা একদল নারী এখানে পিছিয়ে নয়। আজকাল আড্ডায় শিল্পসাহিত্য, সমাজ-রাজনীতি, আন্তর্জাতিক গতি-প্রকৃতি বা সেন্স অব হিউমারের বদলে বিকৃত রগরগে যৌনতা ঠাঁই পায়। রুচিহীন হয়ে গেছে আড্ডার আসর। সমাজে চলার মতো ভালো মানুষ অনেকেই চিরনিদ্রা নিয়েছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা বড়ই নিঃসঙ্গ।

করোনার দেড় বছর মানুষকে আরও বেশি বিষণ্ণ, বিষাদগ্রস্ত করে তুললেও মৃত্যুর বিভীষিকা দেখালেও অসৎ, নষ্টদের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

একটা অশান্ত অস্থির নষ্ট সমাজ অবক্ষয়ের ধারায় যখন নিচে নামছে তখন উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠা নানা শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ অনেকেই লোভের পথে পা বাড়িয়েছেন। মানমর্যাদা মূল্যবোধ ভুলে যেনতেন পথে অর্থবিত্তের নেশায় অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামেন। ক্ষমতাবান বা বিত্তবানদের করুণা ও আশ্রয় লাভের জন্য ব্যক্তিত্ব ইজ্জত হারিয়ে ফেলেন। কেউ নষ্ট হয় তার নিজ দায়িত্বে। কে ঘুষ খাবে, কে দুর্নীতি করবে, কে রাতের রানী হবে, কে রক্ষিতা হবে, কে লম্পট হবে, কে হবে দালাল মাসি সে তার ইচ্ছা। কেউ জোর করছে না। মেধা প্রজ্ঞা কর্মে সামাজিক মর্যাদা অর্জন করবে নাকি টাকা দিয়ে কেনার পথে যাবে সে তার রুচি, সিদ্ধান্ত। আসলে কেউ কাউকে নষ্ট করে না, নিজের লোভে লালসায় যার যার মতো নষ্ট হয়। কেউ কেউ টাকার জন্য, কেউ ভোগবিলাসের জন্য, কেউবা ক্ষমতার জন্য, কেউবা চাকরি-বাকরি প্রমোশনের জন্যও নষ্ট হয়। একবার যে নষ্ট হয় তাকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। নষ্টরা সমাজকে কলুষিত করে। অপরাধ করে। এদের করুণা নয়, প্রতিবাদ করতে হবে। মুখোশ খুলে আইনের আওতায় আনতে হবে। আর রাজনীতিতে যারা পদপদবি ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থবিত্ত গড়ে তাদের আইনের আওতায়ই নয়, দলীয় ব্যবস্থাও নিতে হবে। আর মানুষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে মূল্যবোধের আদর্শিক নির্লোভ পথে ফিরবেন, হাঁটবেন নাকি লোভের পাপের শেষ অন্ধকার পথটিই নেবেন।

সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশের আদর্শই আমাদের আদর্শ। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও দর্শনই আমাদের আদর্শ। এ শোকাবহ মাসে তাঁর মহান আদর্শের পথে হাঁটার শপথ নিতে পারেন সবাই। সেদিন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন গেছে। বাল্যবধূ থেকে জীবনে মরণে তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের সংগ্রাম ও প্রেরণার উৎস। শিশু বয়সে বাবা-মা হারালেও পৈতৃক যে সম্পদ পেয়েছিলেন তা-ও স্বামীর রাজনীতির জন্য উজাড় করে দিয়েছেন। পাকিস্তান সৃষ্টির পরই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন উৎসর্গ করলে শাসক গোষ্ঠীর নানা ষড়যন্ত্র আর কারাগার থেকে কারাগারে জীবনের ১৪টি বছর কেটেছে। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেই নির্লোভ, নিরহংকার রাজনৈতিক ইতিহাসের বিস্ময়কর এক নারী, যিনি তাঁর স্বামীকে সহযোগিতা ছাড়া কখনো কোথাও বাধা দেননি। অমিত সাহসী এই নারী নির্লোভ, নিরাভরণ, সাদামাটা জীবনে সন্তানদের আদর্শ মানুষ হিসেবে একদিকে গড়ে তুলেছেন অন্যদিকে দলের নেতা-কর্মীদের গভীর স্নেহে আগলে রেখেছেন। কোনো পদপদবির মোহ দূরে থাক বঙ্গবন্ধু দলের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। ফজিলাতুন নেছা মুজিব হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। তাঁর হাতের রান্না খাননি এমন নেতা-কর্মী ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু কারাগারে নেপথ্যে থেকে সংগঠন ও আন্দোলন পরিচালনায় তিনি অর্থের জোগান দিয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন কঠিন সব সময়ে। দলের কারাভোগী ও নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হয়েও বঙ্গভবন বা গণভবন তাঁকে টানেনি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতেই তিনি জীবন দিয়েছেন। ঘাতকের কাছে প্রাণভিক্ষাও চাননি। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস, সামাজিক ইতিহাস পূর্বসূরিদের সততা, আত্মমর্যাদা ও আদর্শের ইতিহাস। সেই মূল্যবোধ, সেই নির্লোভ সৎ মর্যাদার জীবনযাপনের সমাজই আজ সবাইকে মিলে তৈরি করতে হবে। সমাজ থেকে ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক লুট ও সমাজকে কলুষিত করার অন্ধকার জগৎকে প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা লাখো লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশকে আদর্শিক ধারা থেকে বিচ্যুত হতে দিতে পারি না। এখানে থাই সেক্স ইন্ডাস্ট্রি হতে পারে না।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]