দাম নিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করছে ক্রেতা-বিক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি, অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন হাটে তেমন ক্রেতা নেই, যারা আসছে তারা বিক্রি করার মতো দাম বলছেন না। কোরবানির পশুর হাটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। তবে বড় গরুর তুলনায় মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। গতকাল শনিবার রাজধানীর গাবতলী ও রামপুরা, মানিকনগর, শ্যামলী, সূত্রাপুর খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন বাজারে পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ও মাঝারি আকৃতির ৭০ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর চাহিদা বেশি।
গরুর ব্যাপারিরা জানান, তাদের গতবারের চেয়ে বেশি দামে গরু কিনতে হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় ক্রেতারা দাম কম বলছে। কুষ্টিয়া থেকে হাটে এসেছেন মো. রফিক ব্যাপারি। তিনি বলেন, আমি এবার ১৫টি গরু হাটে এনেছি। ২টি গরু বিক্রি করেছি। এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে যে গরু কিনেছি ক্রেতারা তার দাম বলছে এক লাখ ১০ হাজার। শনিবার সকাল থেকে হাটে ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ ক্রেতা ৭০ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনছেন।
মো বদিউজ্জামান মিরপুর থেকে এসেছেন। তিনি ৮০ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন। বদিউজ্জামান বলেন, দাম একটু বেশি। এ গরু গতবার ৭০ হাজার টাকায় কেনা গেছে। হাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট আকৃতির গরু ৫৫ থেকে ৭০ হাজার, মাঝারি আকারের গরু ৭০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরু আছে। তবে দাম নিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করছে ক্রেতা-বিক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি, অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন হাটে তেমন ক্রেতা নেই, যারা আসছে তারা বিক্রি করার মতো দাম বলছেন না। কুষ্টিয়া থেকে মো. রাজু ১০টি গরু এনেছেন, এর মধ্যে ৩টি গরু বিক্রি করেছেন। ২০০ কেজি মাংস হবে এমন গরু এক লাখ ২৫ হাজার, ১৬০ কেজি মাংস হবে এমন দুইটি গরু ৯৬ হাজার ও ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। মো. আহাদ ওয়ারি থেকে এসেছেন। লালচে রঙের দুইটি মাঝারি আকারের দেশি ষাঁড় কিনেছেন তিন লাখ টাকায়। গাবতলীর হাটে বড় আকারের একটি গরু এনেছেন মানিকগঞ্জের মো. নাজিমুদ্দিন। তিনি দাম চাইছেন ১২ লাখ টাকা। আর ক্রেতারা বলেছেন, ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। নাজিমুদ্দিন বলেন, এত কম দাম বললে কিভাবে হবে! গরুর ওজন আছে ২৭ মণ। কুষ্টিয়া খোবসা থেকে রাজাবাবু নামের ২২ মণ ওজনের একটি ষাঁড় এনেছেন রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, বড় গরুর চাহিদা কম। আমি ৬ লাখ টাকা হলেই এ গরু বিক্রি করবো।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার এবং অন্যান্য পশু রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৭৬৫টি। গত বছর এক লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছিল। এ বছর রাজধানীতে ১৯টি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। আর স্থায়ী হাট দুইটি। গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাট প্রায় ভরে গেছে গরু, মহিষে কিন্তু সে তুলনায় ক্রেতা কম। গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের ভেতরে ফাঁকা ব্যাপারিরা অনেকটাই অলস বসে রয়েছেন। তারা বলেন, গত বছর এমন সময় ক্রেতাদের ভিড় ছিল।
এদিকে ফরিদপুর থেকে ৭টি গরু এনেছেন জাহাঙ্গীর। এখনো একটিও বিক্রি হয় নি। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘হাতে তেমন ক্রেতা নেই। এই সময় তো আমরা দরদামে ব্যস্ত থাকতাম। দেখা যেত, আপনার সঙ্গে কথা বলারও সময় পেতাম না’। এক লাখ ৫০ হাজার টাকা গরুর দাম চান জাহাঙ্গীর আর ক্রেতারা বলছেন এক লাখ ২০ হাজার। তবে অনেক ব্যাপারি মনে করছেন, মূলত ঈদের তিন দিন আগে হাটগুলো পুরোপুরি জমে উঠবে। এখন নগরবাসী হাটে হাটে ঘুরেফিরে গরু-ছাগলের দাম দেখছেন।