বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাবুদ খান: কতভাবে প্রমান করবেন তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে বেঈমানী করেননি!
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মাবুদ খান, সাবেক মহাপরিচালক পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন আব্দুল মাবুদ খান এবং দেশ স্বাধীনের পর ক্যাডার সার্ভিস পরিক্ষা দিয়ে পুলিশের এ এসপি হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন।
যে ঐতিহাসিক ঘটনাটা এখন বলছি তা বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র ১১ দিনের মাথায় ঘটেছিলো।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যায় গভীর ক্ষোভ জমেছিলো আব্দুল মাবুদের মতো হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অন্তরে।
২৬ আগস্ট ১৯৭৫, আব্দুল মাবুদ তখন ভোলা'র সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার।বঙ্গবন্ধুর খুনী ক্যাপ্টেন মাজেদ (কিছুদিন পূর্বে ফাঁসীতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে) তার জন্মস্থান ভোলা,তে যান এবং অত্যন্ত দম্ভ এবং ক্ষমতা দেখাতে আব্দুল মাবুদের অফিসে গিয়ে তার চেয়ারে বসে পড়ে সকলকে গালাগাল করতে থাকে। বলা বাহুল্য সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুর এই খুনীরাই দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলো।
বঙ্গবন্ধুর খুনীকে এত কাছে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ অফিসার আব্দুল মাবুদ খান। তিনি তখনই তার লোকদের নির্দেশ দেন মাজেদ কে গ্রেফতার করতে। অনেকে ভয় পেলেও যখন আব্দুল মাবুদকে নিজ হাতে মাজেদকে পেটাতে দেখলেন তখন সকলে সাহস করে তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।
সেই সময়ে সমস্ত দেশের যা পরিস্থিতি সেই হিসেবে এ ছিলো এক দুঃসাহসিক কাজ। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর প্রতি অঘাত ভালোবাসাতেই এহেন দুঃসাহসিক ঘটনার জন্ম সম্ভব।
পরবর্তিতে পুলিশ কর্তা আব্দুল মাবুদের জীবনে নেমে আসে চরম অত্যাচার আর দুর্ভোগের কাব্য। জিয়া,র নির্দেশে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বগুড়া সেনানীবাসে, তারপর টর্চার আর টর্চার।
ঘটনার পরের ঘটনা, ২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৫ সাল। আব্দুল মাবুদ তখন নাটোরের এসপি। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা তখন লিবিয়ার টাকায় এবং প্রশিক্ষনে বাংলাদেশে বেশ কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করে আসছিলো যা পরবর্তিতে ১৯৮৭ সালে ফ্রিডম পার্টি নামক একটি দলে রুপ নেয়।
তাদের প্রথম টার্গেট ছিলো তাদের সহকর্মী বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদ এর গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিশোধ নেওয়া। তাই তারা সেই সময়ের নাটোরের এসপি আব্দুল মাবুদ খানকে হত্যার জন্য অতর্কিত তার চলন্ত গাড়িতে গুলি চালায়।
গাড়িতে তখন তার সাথে তার ৬ বছরের শিশু সন্তান আব্দুল বারী মুসাব্বির শুভ রাজশাহী যাচ্ছিলো। মাবুদ গুরুতর আহত হয়ে বেঁচে গেলেও তার শিশু সন্তানটি মারা যান।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, শিশু রাসেলের হত্যাকারী মাজেদ কে গ্রেফতারের কারনে আব্দুল মাবুদকে তার শিশু সন্তানের জীবনের বিনিময়ে মূল্য দিতে হবে তা হয়তো তিনি ভাবেননি।
অবাক লাগে, এমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা আমাদের অনেকেরই অজানা। কোন মিডিয়া কে দেখিনি আজ পর্যন্ত কোন একটি ১৫ আগস্টে এই আব্দুল মাবুদকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করতে।
একটি মানুষ আর কত কিছুর বিনিময়ে প্রমান করবেন যে তিনি দেশটাকে ভালোবেসে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন? কতভাবে প্রমান করবেন যে বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে, তার আদর্শের সাথে তিনি কোনদিনও বেঈমানী করেননি?
লেখক: সমাজকর্মী ও অনলাইন আ্যক্টিভিস্ট, সদস্য সচিব, অপরাজেয় বাংলা
ভোরের পাতা/পি