করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন নিয়ে আপোষ চলবে না:ডা. কামরুল হাসান খান#করোনা মোকাবিলায় শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন:গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার#টিকা কার্যক্রমে বাংলাদেশ এখনো এগিয়ে রয়েছে:ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১, ১২:১২ এএম আপডেট: ০৮.০৭.২০২১ ১২:১৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা খুবই সংকটজনক। ভয়ংকর এক পরিস্থিতির সম্মুখীন আজ আমরা। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের সব স্বাভাবিকতা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন আমাদের পুরো জাতিকে মনোনিবেশ দিতে হবে কিভাবে এই করোনাকে প্রতিরোধ করা যায়, সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউনের বিষয়ে কোন আপোষ করা চলবে না। আমাদের এখন মানুষকে বাঁচাতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। করোনা প্রতিরোধে আমাদের এখন কি করতে হবে সেটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু বাস্তবায়নের দিক থেকে যেটা সবচেয়ে বড় বিষয় সেটাই হচ্ছে না। বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবিলায় যে অগ্রগামী দেশ রয়েছে সে তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটা অগ্রগণ্য দেশ হিসেবে বিবেচিত।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৩৯৩তম পর্বে বুধবার আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাস।
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো ২০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটি একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ হাজার ৫৯৩ জন। এমন অবস্থার দিক থেকে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা খুবই সংকটজনক। ভয়ংকর এক পরিস্থিতির সম্মুখীন আজ আমরা। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের সব স্বাভাবিকতা ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন আমাদের পুরো জাতিকে মনোনিবেশ দিতে হবে কিভাবে এই করোনাকে প্রতিরোধ করা যায় সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউনের বিষয়ে কোন আপোষ করা চলবে না। আমাদের এখন মানুষকে বাঁচাতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে। করোনা প্রতিরোধে আমাদের এখন কি করতে হবে সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু বাস্তবায়নের দিক থেকে যেটা সবচেয়ে বড় বিষয় সেটাই হচ্ছে না। এখন আজকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে যদি কথা বলতে যায় তাহলে বলতে হবে টিকার সংকট এখনো অনেক দেশেই রয়েছে। এখনও অনেক দেশ রয়েছে যারা এখনো টিকা পাইনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ৭৫ ভাগ টিকা ১০টি দেশের কাছে রয়েছে এবং স্বল্প আয়ের দেশে রয়েছে মাত্র ১% টিকা। সেকারণে টিকার সংকট এখনো বিশ্ব থেকে যায়নি। টিকার সংকট এখনো রয়ে গিয়েছে। যে সব টিকা প্রস্তুতকারি সংগঠন রয়েছে তাদের টিকা উদপাদন করার যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেটা কিন্তু মোটেও অর্জন করতে পারেননি। এর মধ্যে আবার বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও তৃতীয় ঢেউও দেখতে পারছি। সে হিসেবে বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো আমাদের এখানের পরিস্থিতি খুবই আশাব্যাঞ্জক। দেশে টিকা আনা নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন পজিটিভ খবর শুনছি এবং আমাদের বাজেটে করোনার টিকা নিয়ে ভালো একটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে ১৪২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে শুধু টিকার জন্য এবং সব মিলিয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে করোনা প্রতিরোধের জন্য। এবারের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ৮০ ভাগ মানুষকে টিকাদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছি এবং বিনামূল্যে টিকাটা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আমাদের যে সংকট ছিল সেটাও কিন্তু কেটে গেছে। ফাইজার বা সিনোফার্মের কিছু নতুন টিকা আসায়, পহেলা জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে আবারও করোনা ভাইরাসের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, করোনার হিংস্রতায় পুরো বিশ্ব ছিন্নভিন্ন। আর ঘনবসতিপূর্ণ ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা অন্যান্য দেশের চেয়ে ভিন্নতর। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ও আওয়ামী লীগ সারাদেশে খাদ্য বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়াও সরকার খাতভিত্তিক প্রণোদনা প্যাকেজ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। এ কারণেই, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে অনন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবিলায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রম ও অদম্য মনোবলের কারণে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের আগেই করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসবে। এছাড়াও গতবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়কের ন্যায় দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিনিয়ত সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং ও সমন্বয় করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী গত এক বছরের উপর সময় ধরে ঠা-া মাথায় দূরদর্শিতার সাথে যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন সে কারণেই হয়তো করোনার মত মহামারি বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ব্যাপক তা-ব চালাতে সক্ষম হয়নি যা অনেক উন্নত দেশের অবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর করে দিয়েছে। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি সিদ্ধান্ত সফল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির মোড়লরা যখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ অন্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। সরকার ইতোমধ্যেই অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে প্রায় ১ কোটি মানুষকে টিকা প্রদান করেছে, যেখানে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ তাদের জনগণের টিকা জোগাড় করতে সক্ষম হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বার বার সুরক্ষাবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছেন। সুরক্ষা বিধিগুলো আমরা যদি মেনে না চলি তাহলে পরিস্থিতি আবার যেকোনো সময় খারাপের দিকে যেতে পারে। আজ অবধি বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এটা খুব সুস্পষ্টভাবেই বলা যায় এই পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে নিয়েছিলেন। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি।
অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, বর্তমান মহামারি বা অতিমারি এটার একমাত্র সমাধান কিন্তু টিকা নয়। করোনার মত মহামারির ভ্যাকসিন বা টিকাও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নোংরা রাজনীতি চলছে। বাংলাদেশের সরকারের সাথে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও আমাদের বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে যে ৪০ মিলিয়ন টিকার সংগ্রহের চুক্তি হয়েছিল সেটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা একদল লোক দেখতে পেয়েছি, যে তারা এটা নিয়ে একটা ধুম্রজাল সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে। অথচ ভারতের মতো একটা দেশে যেখানে করোনার সব থেকে ভয়ানক ধরণ ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সেটা সেখানে খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার দ্বিতীয় বছরে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে এই ভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ংকররূপ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। বর্তমানে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সুস্পষ্ট প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। মে মাসে ৪৫ শতাংশ ও জুন মাসে ৭৮ শতাংশ নমুনায় এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস আগামী বছর এই সময়ের মধ্যে যেন প্রত্যেক দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে ভ্যাকসিন দেওয়া নিশ্চিত করা হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন। কেবল যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বা ভারতের সেরাম নয়, আবিষ্কার ও সরবরাহের খবরদারিতে ভ্যাকসিন উৎপাদক ও নিয়ন্ত্রণকারীরা গোটা বিশ্বেই ‘ফ্যাক্টর’। ভ্যাকসিন কেনাবেচা-উপহার নিয়ে ক্যারিকেচার কেউ কম করছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগজনক ভাইরাস হিসেবে যে চারটিকে শনাক্ত করেছে তাদের মধ্যে ডেল্টা একটি। শুধু বাংলাদেশ নয়, আমেরিকা, ইউরোপেও উদ্বেগ আছে এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে তৃতীয় ঢেউ চলে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কিছু দেশে। আজ পর্যন্ত ৮০টি দেশে এটি ছড়িয়েছে এবং খুব কম সময়ে সহজে বিস্তার লাভ করছে। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক মৃত্যু দেখছে বাংলাদেশ। এছাড়া সংক্রমণের হারও অতীতের সকল রেকর্ড ভাঙছে। করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার সারাদেশে তৃতীয় দফায় সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাপী করোনা মোকাবিলায় যে অগ্রগামী দেশ রয়েছে সে অগ্রগামী মোকাবিলায় বাংলাদেশ জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটা অগ্রগণ্য দেশ হিসেবে বিবেচিত। এমনকি এই যে ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়া যখন চালু হয় তখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অনেক দেশ কিন্তু পাইনি। সেখানে বাংলাদেশ এখনো অনেক এগিয়ে রয়েছে।
ভোরের পাতা/পি