প্রকাশ: বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১, ১১:১৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক খাত চামড়া শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে। টানা কয়েক বছর নিম্নমুখী প্রবণতার পর এবার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে লক্ষমাত্রা ছিলো ৯২০ কোটি ডলার। অর্জন হয়েছে ৯৪১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বেশি। গত অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৭৯৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সেই তুলনায় এ বছর রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে চামড়ার মান বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিকায়নের কারণেই মূলত রফতানি বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত কয়েক বছর ধরে চামড়া রফতানিতে নিম্নমুখী ছিলো। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪৫ কোটি ডলার বেশি আয় করেছে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে আয় হয় ১১৩ কোটি ডলার। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬ কোটি ডলারে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই আয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে হয় ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। কিন্তু এরপরের বছরই ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে রফতানি আয় অস্বাভাবিক কমে আসে। যা ১০৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। যদিও ওই অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১২ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২২ শতাংশ কমে রফতানি হয়েছে মাত্র ৭৯৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৯৪১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার চামড়া রফতানি হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিইটিপি নির্মাণের কারণে বর্জ্য শোধন আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তের পর নিদিষ্ট সময়ে ঋণ পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ড্রেনের সংস্কারকাজ আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। গত এক বছরে চামড়া শিল্প নগরের অনেক উন্নতি হয়েছে। এছাড়া আগের চেয়ে ট্যানারির দূষণ কিছুটা দূর হওয়াতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আবার চামড়া নিতে শুরু করেছে। এছাড়া চামড়া শিল্প নগরে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫৪টি ট্যানারিকে। এর মধ্যে ১৩২টি কার্যক্রম শুরু করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে বাকিগুলো কার্যক্রম চালু করবে। এছাড়া ট্যানারি মালিকদের এখন আগের মতো তেমন কোন অভিযোগ নেই। যারা জমি পেয়েছে তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানিসহ অবকাঠামো ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে এ সময় অনেক ক্রেতা বাড়ছে।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, বর্তমানে ইউরোপ দেশগুলো চামড়া চাহিদা বেড়েছে। গত ৬ মাস ধরে আমাদের চামড় ব্যাপক রফতানি হচ্ছে। মাঝে কয়েক বছর চামড়া রফতানি খারাপ অবস্থা ছিলে। চামড়া রফতানির জন্য পরিবেশগত কিছু সমস্যা রয়েছে এগুলো সমাধান হলোই আরো বাড়বে রফতানি। এছাড়া লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদও এখনো পাওয়া গেলে আরো বাড়বে রফতানি। তবে
পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিডেট লি. ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউরোপ দেশগুলোতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ হওয়ার ফলে চামড়া শিল্পে রফতানি বেড়েছে। আগের মতোই অর্ডার হচ্ছে এখন। ফলে সব ধরনের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি শুরু হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকও সময় সময় ঋণ দিচ্ছে।
আমাদের বর্জ শোধনের কিছু সমস্যা রয়েছে তবে এগুলো ঠিক হলে রফতানি আরো বাড়বে এবয় এক সময় রফতানিতে বড় বাজার হবে চামড়া শিল্প। সোনালী আনাস ইন্ডাস্ট্রিজ লি. ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ক্রমেই চামড়া রফতানি ভালোর দিকে যাচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানিতে ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে। চীনের এই অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে। চীনের অবস্থা ভালো হলে রফতানি আরো বাড়বে। আগের লোকসানে ছিলাম এখন আর লোকসানে নেই।