এবার মামলায় ফেসে যাচ্ছে দেশের অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ই কমার্স) ইভ্যালি। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সময়ের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকেও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইভ্যালির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩৩৮ কোটি টাকা ইভ্যালি আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মামলা করার সুপারিশও করেছে এই মন্ত্রণালয়। গত ৪ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল থেকে পৃথকভাবে এসব চিঠি পাঠানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হাফিজুর রহমান গতকাল ইভ্যালির বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিঠি দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
চিঠিতে বলা হয়, ইভ্যালির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া চিঠিতে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩৩৮ কোটি টাকা ইভ্যালি আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মামলা করতে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দুদকে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা ও মার্চেন্টদের কাছে বিপুল পরিমাণ বকেয়ার অর্থ আত্মসাৎ বা মানি লন্ডারিং কিংবা অন্য কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়েছে কি না তা অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে অগ্রিম টাকা দিয়ে যেসব গ্রাহক এখনও পণ্য পাননি এবং মূল্য ফেরত পাচ্ছেন না, তাদের অধিকার সুরক্ষা করতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এদিকে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকেও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১৪ কোটি টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া ও মার্চেন্টদের ১৯০ কোটি টাকা পাওনা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে যেন দ্রুত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হাফিজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কাছে গ্রাহকের পাওনা ফেরত প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে পাওয়া অনিয়মগুলোর অধিকতর তদন্ত এবং মামলা করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিধি অনুযায়ী সুপারিশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি যে অগ্রিম টাকা নিয়েছে, তা পরিশোধ করতে হবে। আশা করছি-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে।’
হাফিজুর রহমান বলেন, সরকার চায় দ্রুত বিকাশমান দেশের ই-কমার্স খাত আরও সম্প্রসারিত ও টেকসই হোক। সেইসঙ্গে ভোক্তার সুরক্ষার বিষয়টিও যেন নিশ্চিত থাকে। সে লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ই-কমার্স খাত পরিচালন নির্দেশিকা-২০২১ জারি করেছে। শুধু ইভ্যালিই নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যদি একই কর্মকা- করে তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেবে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুদক, ভোক্তা অধিকার ও প্রতিযোগিতা কমিশনে পাঠানো চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইভ্যালি ডটকম-এর চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬.১৪% গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক এবং মার্চেন্ট এর পাওনা পরিশোধ করা ওই কোম্পানির পক্ষে সম্ভব নয়।
তাছাড়া, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে নেয়া ৩৩৮.৬২ কোটি টাকার কোনো হদিস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন আলোকে চিঠিতে ওই অর্থ আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিতে আরও উল্লেখ্য করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭.১৮ কোটি টাকা। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ ২১৩.৯৪ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯.৮৫ কোটি টাকার মালামাল বাকিতে গ্রহণ করেছে। এরপর প্রতিষ্ঠানটির কাছে স্বাভাবিক নিয়মে কমপক্ষে ৪০৩.৮০ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬৫.১৭ কোটি টাকা।