বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন: তাজুল ইসলাম   ইংরেজি নববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা   করোনায় মৃত্যু কমেছে, শনাক্ত বেড়েছে    আরও ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত   শপথ নিলেন নতুন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী   বাস সরাতে গিয়ে দুই মৃত্যু: সেই পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা   আন্দোলনের বিকল্প নেই, ফয়সালা রাজপথেই হবে: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
করোনার থাবা ও জীবন জীবিকা
মমতাজ হুসেন চৌধুরী
প্রকাশ: বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১, ১০:৪৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

চীনের উহান প্রদেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ চিহ্নিত হলেও  আজ অব্ধি সারা বিশ্বেই কভিড-১৯ এর ভয়াবহতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে, সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে অক্টোপাসের মত সর্বগ্রাসী রূপে আবির্ভূত এই অতিমারী জীবাণু মানব দেহে প্রবেশ করে শ্বাস প্রশ্বাসের মূল চালিকা শক্তি ফুসফুসের কার্যক্রম বিকল করে দেয় যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ সারা বিশ্বকে ভূকম্পনের মত কাপিয়ে তুলেছে। আমরা জানি বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজ, এক দেশের মানুষ অন্য দেশে চলাচল এখন মামা বাড়ী বেরানোর মত বৈকি, ব্যবসা বাণিজ্য, শ্রম বাজার, চাকুরী, চিকিৎসা, আনন্দ ভ্রমণ, শিক্ষা সংস্কৃতি, কূটনৈতিক মিশন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ধর্মীয় আচার সহ নানা কারণে এক দেশের মানুষ অন্য দেশে ভ্রমণ মানব জীবনের অতি জরুরী অনুষঙ্গ। যার ফলে এই ভাইরাসটি ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বা সূত্রে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে আসে। পৃথিবীর সকল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর বা স্থল বন্দরে আগমনী যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোরাইন্টাইন ব্যবস্তা জোরদার ও বলবৎ আছে। আমি এয়ারলাইন্সের সাবেক কর্মকর্তা হিসেবে এয়ারপোর্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে এ ব্যাপারে বাস্তব জ্ঞান লাভের ব্যাপক সুযোগ পেয়েছি। আমার এ কথাটি বলার কারণ হলো যদি বিমান ও স্থল বন্দর গুলিতে সঠিক কোরাইন্টাইন করা যেত, আইসোলেন বা করোনা শনাক্ত করে ডিপোর্টেশন বা করোনা টেস্ট বহির্ভূত যাত্রীদের বহনকারী পরিবহন সংস্থাকে পেনাল্টি করার শক্ত ব্যবস্তা থাকলে হয়ত এর প্রাদুর্ভাব অনেকাংশেই ঠেকানো সম্ভব হত, এটাই বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক পদ্ধতি বলে সম্যক পরিচিত। 

বাংলাদেশে ২০১৯ এর ৮ মার্চে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যু হয়। সংগত কারণে অন্যান্য দেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহতার চিত্র দৃষ্টে সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও সামর্থ্য নিয়ে সরকার এর প্রতিরোধ কল্পে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেন। আমাদের সফল রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কারিগরি কমিটি গঠন সহ প্রতি জেলায় একজন সচিবের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠন করে করোনার যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে ৩৩ দফার দিক নির্দেশনা সহ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে সতর্ক বানী জারী ও প্রতিরোধ ব্যবস্তা, চিকিৎসা সেবা জোরদারের আহবান জানান। তিনি প্রত্যেক জেলায় জেলা প্রশাসন সহ স্তানীয় বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে ভার্চুয়াল মিটিং এর মাধ্যমে সরাসরি মাঠের চিত্র জানা ও মত বিনিময় সভার আয়োজন করেন। স্বাস্থ্য বিধি মানা, মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, জনসমাগম পরিহার, দূরত্ব বজায় রেখে চলা, মসজিদে দূরত্ব বজায় রেখে নামায আদায়, বিনোদন কেন্দ্র গুলো বন্ধ, জনসমাবেশ নিষেধ, লকডাউন, বিধি নিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি ইত্যাদি যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত তা প্রচার ও মানতে সবাই কাজ শুরু করেন ।করোনার প্রথম ঢেউ সামলাতে আমাদের তেমন বেগ পেতে হয়নি। 

মোদ্দাকথা জীবন জীবিকা নিয়ে বিরাট চ্যালেঞ্জ সরকারের সামনে চলে আসে । এ নিয়ে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো ব্যক্তিগত তহবিলে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া শুরু করে । কারণ লকডাউনের ফলে মানুষ কার্যত গৃহবন্দী ও কর্মহীন হয়ে পরে। অফিস আদালতে , কল কারখানায় সরকারী/বেসরকারী পর্যায়ে কর্মঘন্ঠা কমে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা আর্থিক প্রণোদনার কর্মসূচী ঘোষণা করেন। হতদরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি সহ আর্থিক সহযোগিতা, খাদ্য সরবরাহ, পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণ ও করোনা সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচী অব্যাহত থাকে । এমনকি ধান ফসল কাটার জন্য ছাত্রলীগ , যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে করোনাকালীন সময়ে সহযোগিতা করে প্রশংসিত হয়েছে। অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন সহ ব্যক্তি উদ্যোগে ও ত্রাণ কর্মসূচী চলতে দেখা যায়। ফলে জীবিকার প্রশ্নে মানুষকে তেমন উদ্বিগ্ন হতে হয়নি, কাউকে না খেয়ে মরতে শুনা যায়নি। সবচেয়ে সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ ছিল কিছুটা ঝুঁকি থাকা স্বত্বেও কল কারখানা বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা গুলো খোলা রাখা। এতে দুটো উপকার প্রমাণিত , প্রথমত: কারখানার শ্রমিকরা কাজ না হারিয়ে আর্থিক ও মানসিক ভাবে ফুরফুরা ছিল, কাজ না হারানোর ভয়ে ও ফিট রাখার জন্য নিজ তাগিদেই পরিচ্ছন্নতা বোধ উনাদের মাথায় কাজ করেছে বলে জানা যায় ।উপরন্তু মালিকদের উপর  সরকারের বেঁধে দেয়া স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা অনেকাংশেই উনাদের করোনার সংক্রমণ থেকে দুরে রাখতে সহায়ক ভূমি পালন করেছে। দ্বিতীয়ত: করোনার ভয়াবহতার ফলে কিছু দেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাঁধাগ্রস্ত হয়, এসব দেশের ক্রেতাদের অনেকেই বিকল্প বাজার হিসেবে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেয় , যার দরুন রপ্তানি আয়ে আমরা অন্য যে কোন বছরের চেয়ে এগিয়ে যা ১৫% শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে আমাদের সাফল্যের নেপথ্যে ছিল প্রবাসী আয়। এ বছর প্রবাসী আয় বা রিমিট্যান্স বেড়েছে ৩৬% শতাংশ। যে কারণে রিজার্ভ দাঁড়িয়ে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের উপরে। প্রবাসী আয় ছিল ২ লাখ কোটি টাকার উপর, এ অর্থ দিয়ে ৭টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব বলে ধারনা, ফলে বিজ্ঞ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংককে অতটুকু ছার না দিয়ে বরং দমক দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। অধুনা প্রবাসী আয় বেরে রফতানি আয়ের কাছাকাছি। আমরা প্রবাসীদের এ অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি, উনাদের অবদানের স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেয়া সময়ের দাবী।করোনার কারণে অনেক প্রবাসী চাকুরী হারিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন , উনাদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে সার্বিক সহযোগিতা করা জরুরী বলে মনে করি ও প্রাণের দাবী।

আমরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অতিক্রম করছি। গেল ১০ দিন যাবত দৈনিক ১০০ থেকে ১৬৩ জনের মৃত্যু যা আজ ২০১ এ উন্নীত সহ সংক্রমণের হার ৩১% এর উপরে যা আজকের চিত্র, ১লা জুলাই থেকে কড়া লকডাউন চলছে যা আগে থেকেই ঢিলেঢালাভাবে চলছিল। লকডাউন কার্যকর করার জন্য মাঠে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী , আনসার সহ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা কাজ করছেন। লকডাউন অমান্যকারীদের জেল, জরিমানা, আটক সহ নানা শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে, তবু ও কতিপয় উৎসুক জনতা লকডাউন দর্শনের জন্য রাস্তায় বের হন যা আদৌ সমর্থনযোগ্য নয় । আমরা বিধি নিষেধ মেনে চলি , করোনাকে পরাস্ত করি । আমাদের চিকিৎসা সামর্থ্য সীমিত যা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখেনা, দেশের পয়সাওয়ালারা বেশীর ভাগ বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে অভ্যস্ত বিধায় দেশে আশানুরূপ স্বাস্থ্য সেবা উন্নত না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন বিশেষজ্ঞ মহল যদিও সরকারের নানামুখী উদ্যোগ অব্যাহত। সরকারের বাজেট বরাদ্দের টাকা ফেরত যায়, দুর্নীতি, অবহেলা নাকি সীমিত অভিজ্ঞতার জালে আমরা আটকা পড়েছি তা ভাবতে হবে। আমরা সবকিছুতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখাপেক্ষী না হয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা ও বাস্তবায়ন শিখি। স্বাধীন জাতি হিসেবে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করার পর আর কত সময় নিব নেতৃত্বের বা ডিসিশন মেকারের। এখনি সময় ঘুরে দাঁড়াবার। সরকার এক কোটি হত দরিদ্রকে ঈদ আল আযহার আগেই ভিজিএফ এর মাধ্যমে ১০ কেজি চাল, টিসিবির মাধ্যমে ৪৫০টি এলাকায় তিনটি জরুরী পণ্য সরবরাহের কাজ শুরু করেছে, ৩৩৩ নাম্বারে কল দিলে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্তা আছে, যারা বিত্তবান একটু পাশে থাকুন তাহলে জীবিকার শত কাহনের কবর দিতে পারব। সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে, এই হোক নিদান কালে সামনে চলার প্রত্যয়। 

আমরা ১৭ কোটি দেশের বাসিন্দা, গ্রামের সাধারণ মানুষ করোনা সম্পর্কে অতটুকু ধারনা নেই, সহজ মানুষগুলো সহজ ধারনা পুষে বসে আছে, গ্রামের মানুষের করোনা হয়না বা করোনা নেই, যা আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। অতএব আমাদের ফোকাস হওয়া উচিত, করোনা সচেতনতার আওতায় সাধারণ গ্রামের মানুষদের আনা, স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে নানা ফর্মে জ্ঞান দান , যেমন স্তানীয় প্রশাসন, স্তানীয় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বা আইডেল , ধর্মীয় নেতা বা মসজিদের ইমাম, হাট বাজারে প্রচার ইত্যাদি কার্যক্রম জরুরী ভাবে চালু করা যা হবে দেশীয় চাঁপাই নবাবগঞ্জ মডেল। জনসম্পৃক্ততা, মোটিভেশন , তৃনমূল নেতা কর্মীদের নিয়ে এ কাজটি করা সম্ভব। সামনে কোরবানির হাট বসবে তাই কাল বিলম্ব না করে আমরা গ্রামে মহল্লায় কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করি , করোনাকে লকডাউন করি ও বিদায় জানাই। যেন ঈদের পরে তৃতীয় ঢেউয়ের দখল বইতে না হয়। সর্বোপরি আমাদের টীকা নিতে হবে, গন-টীকার কাজ আজ থেকে রেজিষ্টেশন শুরু হয়েছে, ডিসেম্বর নাগাদ ১০কোটি ডোজ টীকা দেশে আসবে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা বিভ্রান্ত না হয়ে, অপপ্রচার না করে নাগরিক দায়িত্ব পালন করি, সরকারের দেয়া বিধি নিষেধ মেনে চলি তবেই হবে বিজয়ী জাতির আরেক বিজয়। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। 

লেখক: 
সদস্য, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
কার্যকরী সভাপতি, প্রত্যাগত প্রবাসী আওয়ামী ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]