অক্সিজেনের একটি সিলিন্ডার হাতে ধরা। আর নল মুখে লাগানো। আরেকটি সিলিন্ডার পায়ের নিচে রাখা। কারণ, মুখে লাগানো অক্সিজেন কখন শেষ হয়ে যায়, এ অনিশ্চয়তার মধ্যে এবং মৃত্যু ভয়কে সঙ্গে নিয়ে সুস্থ হওয়ার আশা বুকে বেঁধে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে বেড়িয়েছেন বাবা।
এভাবে তারা ১৩ দিন ধরে একটি অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করলেও করাতে পারেননি চিকিৎসা। কারণ, মেয়ের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেই। আর রিপোর্ট ছাড়া তাকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি কিংবা কোনো চিকিৎসক চেম্বারেও চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। সবাই বলছেন, ‘আগে রিপোর্ট, পরে চিকিৎসা’।
এ বিড়ম্বনায় পড়েছেন খুলনা মহানগরের খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ ওয়াহিদ আলী। বাবা হিসেবে কলেজপড়ুয়া মেয়ে শেখ রাইসা তাহসিন অর্পিতার চিকিৎসা করাতে না পেরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ তিনি। অর্পিতা জ্বর, গায়ে ব্যথা এবং তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। খুলনার করোনা হাসপাতালের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষায় থাকা শেখ ওয়াহিদ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখানে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলাম গত ২৯ জুন। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা। কিন্তু ৮ দিন হয়ে গেছে, আমরা রিপোর্ট হাতে পাইনি। যোগাযোগ করলে তারা কবে রিপোর্ট দিতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। তাই আজ (৫ জুলাই) আবার নমুনা দিতে এসেছি। ছেলে শেখ জসিম আলী খোঁজ নিতে হাসপাতালের ভিতরে গেছে, আর আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি।’
বাবা শেখ ওয়াহিদ আলী আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরছি, চিকিৎসকের চেম্বারে যাচ্ছি। কিন্তু তারা করোনার রিপোর্ট ছাড়া চিকিৎসা দিতে রাজি হচ্ছে না। কিন্তু মেয়ের প্রচ- শ্বাসকষ্ট হওয়ায় গাড়িতে একটি অতিরিক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট না দিলে আমরা কি করব এ প্রশ্নও ছুড়ে দেন তিনি। কলেজছাত্রী অর্পিতার বড় ভাই জসিম বলেন, আমার বোনকে চিকিৎসার জন্য কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম, করোনার রিপোর্ট ছাড়া সেখানকার ডাক্তাররা রোগী দেখতে চাচ্ছেন না। আবু নাসের হাসপাতালে নতুন একটি ইউনিট চালু হয়েছে। সেখানে গেলাম, তারাও বলছে, রিপোর্ট ছাড়া ভর্তি নেবে না। কোথাও চিকিৎসা পাইনি। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা পেয়ে আমার বোন আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে, বুকে ব্যথা হচ্ছে, বমি হচ্ছে।
এখানে ডাক্তাররা বলছেন, বেড নেই, ভর্তি রাখা যাবে না। মাঝে মধ্যে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন, তবে তেমন কাজ হচ্ছে না। করোনা হাসপাতালে আবারও নমুনা দিলাম। তবে কবে রিপোর্ট পাব তা বলতে পারছি না।’
করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদানে বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করে খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, ভেতরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত ২৯ জুন থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এ কারণে রিপোর্ট দিতে সময় লাগছে। তবে ভাইরাসমুক্ত করে ল্যাবটি আবার সচল করা হয়েছে। এখন থেকে ল্যাবে পুরোদমে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এখন তারা দ্রুত রিপোর্ট দিতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।