দেশে টিকাদান কর্মসূচি ধারাবাহিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে: ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ
প্রকাশ: সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১, ১১:০২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
পৃথিবীর ইতিহাসে এখন বৃহত্তর টিকাদান কর্মসূচি চলছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৪০.৮ মিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে এবং এই পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৮টি টিকার অনুমোদন দিয়েছে এবং আমাদের দেশে এই পর্যন্ত ৭টি টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই টিকা নিয়ে আমাদের দেশে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিষয়টা বুঝতে হবে যে, এই টিকা নিয়ে পৃথিবীর অনেক ধনী দেশ এটাকে নিয়ে ব্যবসা করছে, তারা নিজেদের দেশে স্টোরেজ করে রাখছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের কথাও তারা শুনছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে টিকাদান কর্মসূচি আছে সেটার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ টিকার আওতায় এসে পড়বে কিন্তু সে পর্যন্ত আমাদের আগে বেঁচে থাকতে হবে। আমাদের সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনসহ সামনে আরও যতোগুলো বিধি-নিষেধ আসবে সেগুলো মেনে চলতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৩৯১তম পর্বে সোমবার (০৫ জুলাই) আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন- স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা গবেষক ডা. মো. সালেহ মাহমুদ তুষার। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এখন বৃহত্তর টিকাদান কর্মসূচি চলছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৪০.৮ মিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে এবং এই পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৮টি টিকার অনুমোদন দিয়েছে এবং আমাদের দেশে এই পর্যন্ত ৭টি টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা টিকা দানের কর্মসূচির শুরুতেই অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রেজেনেকা, মর্ডানা ও ফাইজার। আমাদের অপসন ছিল একটি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকা, তাপমাত্রার কারণে আমরা অন্য দুইটি টিকার দিকে যায়নি। সে প্রেক্ষাপটে আমরা সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ৩ কোটি টিকার নেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। আমাদের এই পর্যন্ত টিকা নেওয়ার যে স্ট্রাকচার আছে সেটার দিকে যদি লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো যে, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা এসেছে ৭০ লাখ, সিনোফার্ম থেকে ২০ লাখ, কোভ্যাক্স থেকে এসেছে ২৬ লাখ, ভারত থেকে উপহার পেয়েছি ৩২ লাখ এবং চীন থেকে উপহার পেয়েছি ১১ লাখ। এই মোট ১৬৯ লাখ টিকা আমরা পেয়েছি। এই বছরের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে আরও ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। এই ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১০কোটি টিকা আসবে। আগামী বছর জনশন এন্ড জনশন থেকে আরও ৭ কোটি টিকা আসার কথা। এই হলো আমাদের টিকা আসার কাঠামো। সরকার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টিকা আমদানি, উৎপাদন ও উদ্ভাবন; এই তিনটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহতভাবে করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ভারত থেকে আমাদের দেশে টিকা আসার কথা ছিল কিন্তু সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের কারণে ও আমেরিকায় কাঁচামাল পর্যাপ্ত না থাকায় আমরা একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম কিন্তু আমরা আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ভারতের অবস্থা একটু ভালো হলে আমরা বাকি ৩ কোটি টিকা পেয়ে যাবো। এর মধ্যে চীনের সাথে যে দেড় কোটি টিকার চুক্তি হয়েছে সেটাও এসে পড়বে। সব মিলিয়ে আমাদের টিকাদান কর্মসূচি একটা ধারাবাহিকতার মধ্যে চলে এসেছে। এই টিকা নিয়ে আমাদের দেশে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে, কিন্তু আমাদের বিষয়টা বুঝতে হবে যে, এই টিকা নিয়ে পৃথিবীর অনেক ধনী দেশ এটাকে নিয়ে ব্যবসা করছে, তারা নিজেদের দেশে এটা স্টোরেজ করে রাখছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের কথাও তারা শুনছে না। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে চীন ও আমেরিকার আগ থেকেই একটা দ্বন্দ্ব আছে। আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী আরও আগেও একটি বৈশ্বিক প্রোগ্রামে বলেছেন যে, এই টিকাকে গণপণ্য হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার জন্য এবং যেসব দেশ গরিব রয়েছে সেসব দেশে যাতে টিকা উৎপাদন করা যায় সেক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।