রাজনীতিহীন অস্থির অশান্ত মূল্যবোধহীন নষ্ট সমাজের নানান কর্মকান্ড ও করোনার মহাপ্রলয়ের লাশের মিছিল আর আক্রান্তের সংখ্যা দীর্ঘতর হওয়ায় বিষাদগ্রস্ত হৃদয়ে অনেকের মতোই দিনযাপন করছি। করোনা আমাদের কত স্বজনকে কেড়ে নিয়েছে। কত স্বজনকে কেড়ে নেবে তা জানি না। করোনার বিরুদ্ধে অবিরাম যুদ্ধ আমাদের চলছে। এ যেন এক অদৃশ্য মহাঅন্ধকার শক্তির সঙ্গে গোটা মানব জাতির অস্তিত্বের লড়াই। শত্রুকে না জেনে না চিনে যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার এক তুমুল লড়াই। করোনা আমাদের জীবনই কেড়ে নিচ্ছে না, আমাদের জীবিকার ওপরে আঘাত হেনেছে। অর্থনীতি তছনছ করে দিচ্ছে। করোনার সঙ্গে মানিয়েই মানব জাতিকে বাঁচতে হবে- এমনটাই বলছেন সবাই। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোথায় দাঁড়াবে কেউ জানে না। অর্থনৈতিক সংকট থেকে কবে উত্তরণ হবে তা-ও কেউ জানে না। মন ভালো নেই। এক বিষণ্ণ স্বদেশ ও পৃথিবীর বুকে মানুষ চলাফেরা করছে। আমাদের কঠিন লকডাউন দেওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের মাধ্যমে এবার লকডাউন আর শিথিলতা পাবে না। লকডাউন সবাইকে মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। মানুষ হয়তো লকডাউন মেনে নেবে। তবে সরকারকে দিনমজুর থেকে নিম্নমধ্যবিত্তের খাবার সরবরাহও বিবেচনায় নিতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাবারের জন্য করোনার ভয়কে জয় করে গরিব মানুষ বেরিয়ে পড়ে। আমরা যতই বলি আগে জীবন পরে জীবিকা তার কাছে আগেই খিদের যন্ত্রণা।
এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে একটি ঘটনা নজরে এসেছে। অবশেষে সংসদে মুখ খুলেছেন অন্তহীন বেদনা নিয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী প্রবীণ জননেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে পথহাঁটা দুঃসাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদও একহাত নিতে ছাড়েননি। অভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। জাসদের হাসানুল হক ইনু ও জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজীও কণ্ঠ খুলেছেন রাজনীতিবিদদের মানসম্মান-ইজ্জত রক্ষায়। বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা যেমন মাতৃক্রোড়ে তেমনি এমপিদের জায়গা হলো সংসদ। এককালে সংসদ ছিল প্রাণবন্ত, তুমুল বিতর্কের জায়গা। আগের জমানা বাদ দিলেও সামরিক শাসনের অবসানের পর নব্বই-উত্তর গণতন্ত্রের জমানায় আমরা তা কাভার করতে গিয়ে উপভোগ করেছি। সংবিধান ও কার্যপ্রণালিবিধি পার্লামেন্টারিয়ানদের হাতেই নয়, আমাদের মতো সংবাদকর্মীদের হাতেও থাকত। যাক সেসব কথা। দিনে দিনে গোটা দেশ যেন রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে, এই কথা বহুবার বলে আসছি। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই। সংসদে বিতর্কও নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হৃদয়বিদারক ঘটনার পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ’৯৬ সালে গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তখন সংসদে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে শক্তিশালী বিরোধী দলও বিদ্যমান ছিল। সংসদ বর্জন সংসদীয় রাজনীতিতে সংসদকে সব কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হতে দেয়নি। ’৯১ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দলের পোড় খাওয়া সংগ্রাম করে আসা নেতাদের মনোনয়ন দিয়েছিল। এরশাদের আস্থাভাজন জাঁদরেল সিএসপি এম কে আনোয়ারের মতো ব্যক্তি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে মনোনয়ন না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু সে নির্বাচনে বিএনপি এতটাই ভঙ্গুর ছিল যে এম কে আনোয়ারকেই নয়, টাকাওয়ালা ব্যবসায়ীদের হাতে মনোনয়ন তুলে দেয়। সামরিক শাসনের জমানার পর গণতন্ত্রের জমানায় এভাবেই রাজনীতিবিদদের বদলে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলা আর ব্যবসায়ীরা সংসদে তাদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। রাজনৈতিক দলের নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা সংগঠন ও নেতৃত্বে উঠে আসা দূরে থাক কর্মচারীতে পরিণত হতে থাকেন। কিংবা কারও করুণার ছায়ায় দিনযাপন শুরু করেন। ’৯৬ সালেও আওয়ামী লীগ দলীয় রাজনীতিবিদদের মনোনয়নদানে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়। তারপর স্রোতে গা ভাসায়। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতছাড়া হতে থাকে।
’৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নবীন হলেও দক্ষতা ও গতিতে দারুণ ক্যারিশমাটিক ছিলেন। তখনই তাঁকে অ্যারাবিয়ান ব্ল্যাক হর্স বলা হতো। আবদুস সামাদ আজাদের মতো বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, জিল্লুর রহমানের মতো অভিজ্ঞ নেতা, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদের মতো চৌকশ ওয়েল কানেকটেড দক্ষ রাজনীতিবিদ, মতিয়া চৌধুরীর মতো নেত্রী মন্ত্রিসভায় ছিলেন। সৃজনশীল মেধাবী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছিলেন সফল অর্থমন্ত্রী। এ এস এইচ কে সাদেকের মতো গণসম্পৃক্ত আমলা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। জাতীয় ঐক্যের সরকারের রূপরেখায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মতো জাঁদরেল নেতা অভিজ্ঞতা নিয়ে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। যুক্ত ছিলেন আ স ম আবদুর রব। পরে যুক্ত হন আমির হোসেন আমু, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আবদুল জলিল ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মতো নেতারা। মন্ত্রিসভা যেমন ছিল ভারী, তেমন ছিল দক্ষতায় প্রশংসিত। খালেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে জনতার মঞ্চে ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করে প্রথম দলীয় আনুগত্যের চেহারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করলেও সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সেই রাজনৈতিক সরকারের দাপটের কাছে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে তিন স্তরের দলীয় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রশাসনে সাজিয়েছিল। ওয়ান ইলেভেনের ঝড়ে তাসের ঘরের মতো ভেসে গেছে। আজকের বাংলাদেশে এক যুগ ধরে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা সবাই আওয়ামী লীগ। একেক জনের আচরণ চেহারা ও কর্মকান্ড দেখলে মনে হয় তারা যেন শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শক্তিশালী বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করে উগ্র হঠকারী ও সহিংস পথ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ ও তার জোট ওয়াকওভার পেয়ে একচ্ছত্র ক্ষমতা লাভ করে। এর পরই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বা আমলারা দিনে দিনে দাপুটে হয়ে ওঠেন। সরকারও হয়ে পড়ে প্রশাসন বা আমলানির্ভর। গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য রাজনৈতিক শক্তির ওপর আমলাতন্ত্রের ঔদ্ধত্য ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ সুদূরপ্রসারী এক সর্বনাশা ভয়ংকর খেলার সূচনামাত্র। এর লাগাম রাজনীতিবিদরা টেনে ধরতে না পারলে তার মাশুল শুধু রাজনীতিকদের দিতে হবে না, ক্ষমতার মালিক জনগণকেও দিতে হবে। গত এক যুগে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা দফায় দফায় শুধু বাড়েনি আচরণেও সীমাহীন পরিবর্তন এসেছে।
বাজেট আলোচনায় জীবনের পড়ন্ত বেলায় পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী সবকিছু দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। আর জাতীয় সংসদ সদস্য এমন একজনও নেই যিনি নিজস্ব অর্থায়নে বা যে কোনোভাবে গবির-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছেন।’ তোফায়েল আহমেদ যথার্থই বলেছেন। ’৯৬-এর সরকারের মন্ত্রীরা ছিলেন জেলার দায়িত্বে। কিন্তু এবার জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। এতে মানুষ মনে করে এমপিরা যা দেন সেসব প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দিয়েছেন। অথচ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অনেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলায় যাননি পর্যন্ত। তিনি আরও বলেছেন, এটা একটা রাজনৈতিক সরকার। রাজনীতিবিদদের যে একটা কর্তৃত্ব বা কাজ তা কিন্তু এতে ম্লান হয়ে যায়। তোফায়েল আহমেদ পরিষ্কার বলেছেন, ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে এমপিদের অবস্থান সচিবদের ওপরে। এটা রাজনৈতিক সরকার। যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে সেখানে থাকা উচিত।’
মনে পড়ে ’৯৮ সালের বন্যায় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জামদানি শাড়ি তৈরির শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র দেখতে গিয়েছিলাম। তোফায়েল আহমেদ ঘুরে ঘুরে হাতে বোনা সেসব শাড়িই দেখেননি, মানুষের বেদনার কথাও শুনেছিলেন গভীর মনোযোগ দিয়ে। তাঁর স্টাফদের নোট নিতে বলেছিলেন। এই সফর শেষে অগণিত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারপর প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠককালে সেখানকার পুলিশ সুপার ছিলেন নুরুন্নবী। তোফায়েল আহমেদ ‘এই নুরুন্নবী এদিকে আসো’ বলে তাঁর বাঁ পাশে বসিয়েছিলেন। ডান পাশে ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক। সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীরা ঠেলা-ধাক্কা করলে তাদের সরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, তোমাদের কথা অনেক শুনেছি। এখন আমি তাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে বলব, তোমরা বাইরে যাও। সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ আমাকে সিলেট-সুনামগঞ্জে তাঁর সফরসঙ্গী করেছিলেন। তিনি দিরাই ও সুনামগঞ্জে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন এবং সরকারের তরফ থেকে তাঁরা কী করছেন তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। দিরাইয়ে তিনি বক্তৃতা না দিয়ে মোনাজাতেই বক্তৃতা দিয়ে ফেলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের কোনো সংবর্ধনা গ্রহণ বা তোরণ নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। আবদুস সামাদ আজাদের আগমনে নেতা-কর্মীরা অনেক তোরণ নির্মাণ করেছিলেন। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘পীর হাবিব তুমি কিছু দেখ নাই।’ জবাবে বলেছিলাম, জি লিডার আমি কিছু দেখি নাই। নিজের শহরে বাসায় ভাত খেয়ে সার্কিট হাউসে এসে দেখি তিনি খাবার টেবিলে আমাকে খুঁজছেন। তাঁকে যখন বললাম বাসা থেকে খেয়ে এসেছি, তখন তিনি সার্কিট হাউসের কাছাকাছি বাসা এমন কর্মী যারা ডাইনিং টেবিলে খেতে বসেছিলেন তাদের বললেন, তোমরা পাগলা থেকে এসেছ। অনেক ক্ষুধার্ত। পাগলা একটি অন্য উপজেলা। তিনি দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে খাবার টেবিলে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে চেয়েছিলেন। তাই তাদের কাছাকাছি ডেকে নেন। ’৯৮ সালের বন্যা নিখুঁতভাবে মোকাবিলা শেখ হাসিনা সরকারের এক অনন্যসাধারণ উদাহরণ হয়ে এখনো আছে।
জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, ‘দেশে কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতি আজ শূন্য। প্রতিটি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন প্রতিটি জেলার ডিসির সঙ্গে। আর এমপি সাহেবরা দূরে বসে থাকেন। তারপর বলেন, ডিসি সাহেব আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা। দেশ চালাচ্ছেন জগৎশেঠরা। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ এই দেশ স্বাধীন করেছেন রাজনীতিবিদরা।’
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে।’ লকডাউন-শাটডাউনসহ বারবার প্রজ্ঞাপন পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সরকারের ভিতরে আমি অস্থিরতা লক্ষ্য করছি।’ জাতীয় পার্টির এমপি ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘প্রশাসনের সর্বত্র ঘুষ-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। একজন বলেছেন, ১ হাজারের ওপর বেগমপাড়া রয়েছে কানাডায়। কারা করেছেন? তারা সব এমপি? নো। ম্যাক্সিমাম সরকারি কর্মকর্তা। কিছু ব্যবসায়ী। আর কিছু আমাদের নষ্ট রাজনীতিবিদ। এই অপদার্থ কিছু রাজনীতিকের কারণে সব রাজনীতির নামে চালানো হয়। রাজনীতিবিদ নন, সবচেয়ে বেশি হচ্ছেন আমলারা, সরকারি কর্মচারীরা। তারা দুর্নীতি করে আগে স্ত্রীর নামে বাড়ি কেনেন। ছেলেকে পাঠান। পরে নিজে যান। দুর্নীতি লুটপাট করে ফাঁকে ফাঁকে ওখানে পাঠিয়ে দেন। এমন কোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অফিস নেই যেখানে ঘুষ ছাড়া কেউ কাজ করাতে পারেন। আর কেউ পারলে তিনি ভাগ্যবান। ভূমি অফিসে গেলে এসি ল্যান্ডকে ঘুষ দেওয়া লাগবে। আরেক জায়গায় তহশিলদার। আরও বড় হলে ডিসিকে টাকা দেওয়া ছাড়া হবে না। থানায় তো দারোগা বাবুরা। আপনি মার খাবেন, আপনার লোক আহত হবে, নিহত হবে। এর পরও এফআইআর করতে গেলে টাকা, তারপর কথা।’
যে কোনো মূল্যে রাজনীতিবিদদের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব প্রশাসনসহ সমাজের সব ক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ দেশের ইতিহাস রাজনীতিবিদদের ইতিহাস। রাজনীতিবিদদের মাইনাস করা, কোণঠাসা করা আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের উন্মুক্ত আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। রাষ্ট্র পরিচালনায় আমলাতন্ত্র বা প্রশাসন থাকবে। কিন্তু তাদের নির্ধারণ করা সীমানা লঙ্ঘন করতে দেওয়া যায় না। সংবিধান ও আইন বিধিবিধান সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-ডিসিরা এমপিদের এমপি সাব বলতে পারেন না। সচিবরাও পারেন না। বঙ্গবন্ধুর শাসনামালে এমপিদের পদমর্যাদা অনেক উঁচুতে ছিল। রাজনীতিবিদদের মর্যাদা সীমাহীন সম্মানের আসনে ছিল। সামরিক শাসকরা অনেক নামিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর চেহারা রাতারাতি পাল্টে গেছে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী তাদের আগের চেহারায় ফিরে যেতে হবে। তারা জনগণের সেবক। প্রভুর আচরণ করতে দেওয়া যাবে না। দেশের একজন সচিব মন্ত্রীসহ কাউকেই মানেন না। একচ্ছত্র ক্ষমতাধর এই সচিব এতটাই বেপরোয়া যে সব ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন তিনি। এসব চলতে দেওয়া যায় না। সব এমপিই এলাকায় বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন না। তেমনি প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীই অসৎ নন। একদল অসৎ নষ্ট রাজনৈতিক কর্মীর জন্য রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব যেমন হরণ করা যায় না, তেমনি তাদের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। রাজনীতিবিদরাই জাতীয় বীর। একই সঙ্গে একদল অসৎ বেপরোয়া কর্মকর্তার কারণে গোটা প্রশাসন কলঙ্কিত হতে পারে না। সবচেয়ে বড় বিষয় রাজনৈতিক সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আজ, রাজনীতিবিদরা নেতৃত্ব দেবেন, কর্তৃত্ব করবেন নাকি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা করবেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের হাতে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব তুলে দিলে রাজনীতিবিদদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হবে না, রাজনীতির গতিপথ যেভাবে বদলে যাবে ভবিষ্যতে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।