'জান্নাত আমার দ্বিতীয় স্ত্রী, মিথ্যাবাদী হয়ে থাকলে আমার উপর আল্লাহর গজব নাজিল হউক'
হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, সেই নারীর সঙ্গে দুই বছর পূর্বের বিবাহ বন্ধন যদি শরিয়তসম্মতভাবে সম্পাদিত না হয়ে থাকে, জান্নাত আরা ঝর্ণা আমার দ্বিতীয়া স্ত্রী- এই বিষয়ে যদি আমি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকি, তাহলে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আমার উপর গজব নাজিল হউক।
তিনি মিথ্যা বললে তার ওপর ‘আল্লাহর গজব’ পড়বে। যারা তার সমালোচনা করছেন তাদেরও একই চ্যালেঞ্জ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মামুনুল হক।
মামুনুলের দাবি, ইসলামি বিধান অনুযায়ী এই চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে মারাত্মক। আর তিনি আত্মবিশ্বাসী বলেই এই সাহস দেখাতে পেরেছেন।
নারায়ণগঞ্জে রিসোর্টকাণ্ড প্রসঙ্গে ঘটনার পাঁচ দিন পর মামুনুল হক বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) ফেসবুক লাইভে এসে এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, আমি নিজের বিবেকের কাছে, নিজের কাছে এবং আলিমুল গায়েব, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে স্পষ্টভাবে নিষ্কলুষ। যে ধরনের অভিযোগ দিয়ে আমার চরিত্রকে হরণ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমি নিরপরাধ এবং এই ধরনের কোনো চারিত্রিক কোনো কালিমা আমার উপর নেই। এই বিষয়ে আমি এতটাই নিজের ওপর কনফিডেন্ট।
তিনি বলেন, সেই জায়গাটা থেকেই আমি মুবাহিলা করার মতো সৎ সাহস আমি দেখিয়েছি।
‘মুবাহিলা’র ব্যাখ্যা করে হেফাজত নেতা বলেন, সবাই কথাটা বুঝতে না পারলেও যাদের আল্লাহর কোরআন সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে, তারা জানেন মুবাহিলা বিষয়টা কেমন। ইসলামের আলোকে কোরআনের আলোকে কোনো একটি বিষয় যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে অমীমাংসিত হয়ে যায়, বিতর্কে আর যখন কোনো মীমাংসার সুযোগ না থাকে, কোরআন বর্ণিত সর্বশেষ সমাধানের পথটাই হলো মুবাহিলার পথ।
তিনি বলেন, সেই নারীর সঙ্গে দুই বছর পূর্বের বিবাহবন্ধন যদি শরিয়তসম্মতভাবে সম্পাদিত না হয়ে থাকে, জান্নাত আরা ঝর্ণা আমার দ্বিতীয়া স্ত্রী- এই বিষয়ে যদি আমি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকি, তাহলে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আমার উপর গজব নাজিল হউক। যদি কেউ আমার এই কথাকে অস্বীকার করতে চায়, যদি কেউ মুমিনের সন্তান ঈমানদার মুসলিম যদি হয়ে থাকে, তাহলে তাকে আমার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ থাকল, আপনিও এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন, আপনিও বলুন, আপনি যদি আমার প্রতি মিথ্যে অপবাদকারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার উপর আল্লাহর গজব নাজিল হউক। দেখি, এই ধরনের সৎ সাহস কোনো মায়ের সন্তান রাখেন কি না।
ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজত নেতা এও বলেন যে, তার অসাবধানতা ছিল। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছে, যে ত্রুটির কারণে, আমার অসাবধানতার কারণে এবং যথাযথভাবে আমি পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হযেছি, সেজন্য আমি নিজেই মর্মাহত।
মামুনুল জানান, তিনি নিরাপদ ভেবে রিসোর্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, সেটি ধারণা করতে পারেননি।
হেফাজত নেতা বলেন, রয়েল রিসোর্ট অত্যন্ত নিরাপদ জায়গা বলে আমার ধারণা ছিল। কিন্তু সেদিনের ঘটনায় আমি বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে পড়েছি। যে এই ধরনের একটি যেখানে বিদেশিরা অবস্থান করে থাকে, পর্যটকদের জন্য সেখানে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু সেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাকে যেভাবে ভঙ্গ করে, ধ্বংস করে দিয়ে যেভাবে আমার অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক আমার একান্ত কক্ষে প্রবেশ করা হয়েছে সেটি দেশবাসী তাদের প্রচারিত লাইভ ভিডিও ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও থেকে আপনার দেখেছেন।
হেফাজত নেতা বলেন, আমি অবশ্যই অকপটে স্বীকার করছি, এভাবে অসাবধানতা এবং নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে স্ত্রীকে সেখানে ঘুরতে যাওয়া বা সেখানে অবস্থান করাটা আমার জন্য সেই পরিস্থিতে সমীচীন ছিল না। আসলে আমি এতটা আশঙ্কা করিনি যে আমাদের বাংলাদেশ এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, সন্ত্রাসীরা এমন একটি নিরাপদ জায়গায়ও হামলা করতে পারে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে এক নারী সঙ্গীসহ স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি মাওলানা মামুনুল হক। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মামুনুল হক ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে হেফাজতের নেতাকর্মীরা ওই রিসোর্টে গিয়ে ভাঙচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর একে একে মামুনুল হক ইস্যুতে একাধিক অডিও ফাঁস হয়। যেখানে মামুনুল হক ওই নারীকে শহীদুল ইসলামের সাবেক স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
ভোরের পাতা/ই