জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, তার ওপর দেশটির আকাশে গ্রিনহাউস গ্যাসের আনাগোনাও বেড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে উচ্চমাত্রায় মিথেন গ্যাসের ধোঁয়া শনাক্ত করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। তবে এর উৎস নিশ্চিত না হওয়ায় বিষয়টিকে ‘রহস্যময়’ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
বৃহস্পতিবার (০৮ এপ্রিল) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কায়রোস এসএএস বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে মিথেন নিঃসরণের ১২টি সর্বোচ্চ হার শনাক্ত করেছে।
গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ পর্যবেক্ষক জিএইচএসস্যাট জানিয়েছে, তাদের দেখা এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী নিঃসরণ এগুলো।
ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় গত দুই দশকে ৮০ গুণ মিথেন গ্যাস শক্তিশালী হয়েছে।
মিথেনের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়েও বেশি। কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায়, মিথেন গ্যাস, বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা এক শতাব্দী কাল সময়ব্যাপী ৩০ গুণ বেশি ধরে রাখতে পারে।
প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি কেরোস এসএএস স্যাটেলাইটে ধারণকৃত চিত্র বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের ওপর মিথেন গ্যাস নিঃসরণের সর্বাধিক ১২টি হার শনাক্ত করেছে।
জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশের ওপর মিথেন গ্যাসের ধোয়া শনাক্ত করেছে। জিএইচজিস্যাটের প্রেসিডেন্ট স্টেফানি জার্মেইন বলেছেন, আমরা আজ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী টেকসই মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ দেখতে পেয়েছি। তবে তারা পরিষ্কারভাবে এর উৎস শনাক্ত করতে পারেননি বলেও জানান।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ডেটা বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুফিল্ড টেকনোলজিসও বাংলাদেশের উপরে এই গ্যাস শনাক্ত করেছে। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা যোতম এরিয়েল বলছেন, আমাদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মিথেন নিঃসরণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। এটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এসব সমস্যা সম্পর্কে তারা অবহিত বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মিথেনের সিংহভাগ আসছে ধানক্ষেত থেকে। কৃষকরা যখন জমিতে পানি দেন, তখন পানির নিচে থাকা মাটির ব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে গ্যাস নিঃসরণ করে। এছাড়া মিথেনের আরেকটি উৎস হলো মাটির ভেতরে থাকা খনিজ গ্যাস। মাটির স্তর উন্মুক্ত হয়ে গেলে এই গ্যাস বেরিয়ে আসতে পারে। এ নিয়ে আরো জানতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, মিথেন গ্যাসের ছড়িয়ে পড়ার হার যদি কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা না যায়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করার জন্য বর্তমানে যেসব লড়াই সংগ্রাম চলছে, তাতে খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও গবেষক রবার্ট জ্যাকসন বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকানোর জন্য বর্তমানে যেসব কর্মসূচি চালানো হচ্ছে তাতে কার্বন ডাই অক্সাইডের ওপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। তবে আমরা যদি এখন এই মিথেন গ্যাসের দিকে নজর না দেই, তাহলে সেই ঝুঁকিটা থেকেই যাবে।