অসহায় পরিবারের মেয়ে তামান্না। মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েও তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। ভর্তির এতো টাকা আর পড়ালেখার খরচ যোগাবেন কিভাবে তার দারিদ্র্য বাবা? শেষ পর্যন্ত দরিদ্রতার কাছে কি হেরে যাবেন তামান্না?
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম বেলদহ গ্রামের দারিদ্র ফেরিওয়ালা তারা মিয়ার মেয়ে। তামান্না জয়মনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও ভূরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইসএসএসসিতে জিপিএ-৫ পান।
দু’বোনের মধ্যে তিনি বড়। তার পুরো নাম তারজিনা আক্তার তামান্না। চলতি শিক্ষা বর্ষে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন। এতে তামান্নার মেরিট স্কোর ২৭১.৫ জাতীয় মেধা তালিকায় তার স্থান ২২৬৭তম। তিনি রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
তামান্নার বাবা তারামিয়া বলেন, ‘বাড়ির ভিটে টুকু ছাড়া চাষাবাদ করার মতো আমার কোনো জমি নেই। সংসার চালাতে ভ্যানগাড়িতে করে বিভিন্ন হাট-বাজারে কাপড় ফেরি করে বিক্রি করি। তা দিয়ে যে আয় হয় তাতে কোনো মতে সংসার চলে। সঞ্চয় বলতে কিছু নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাতে এনজিও আরডিআরএস থেকে ঋণ নিই। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ায় ২ বছরের জন্য ২৪ হাজার টাকা বৃত্তি প্রদান করে ওই এনজিওটি। বৃত্তির টাকা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে মেয়েকে রেটিনা কোচিং সেন্টারে ভর্তি করি। করোনায় কোচিং বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাশ করার জন্য মালয়েশিয়া প্রবাসী এক পরিচিত ব্যক্তি একটি মোবাইল ফোন কিনে দেন। আল্লাহর রহমতে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছে তামান্না।’
দারিদ্রকে জয় করে অজপাড়াগাঁ থেকে তামান্না মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারে পাশাপাশি গ্রামবাসীর মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। কিন্তু এতো আনন্দের মাঝেও তামান্নার ভর্তি হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ভর্তির এতো টাকা কিভাবে যোগাবে? আর দীর্ঘ পাঁচটি বছর পড়া লেখার খরচই বা মিটাবে কিভাবে? এ কথাগুলো বলার সময় তার ছলছল চোখ দু’টি দিয়ে ঝরছিল অশ্রু।
তামান্না জানান, মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু সেই আনন্দের সুখানুভূতি হারিয়ে চোখেমুখে এখন হতাশা। মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও চরম দরিদ্রতার বাধা অতিক্রম করে কিভাবে মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে পড়া লেখা করব সেই চিন্তাই করছি।
তামান্নার মা লাইলি বেগম জানান, তাদের কোনো জমি নেই। শুধু ভিটে টুকুই সম্বল। স্বামীর সামান্য আয়ে কোনো রকমে চলে সংসার। মেডিক্যালে ভর্তি ফি ও আনুসঙ্গিক খরচ বাবদ নগদ প্রায় ৯০ হাজার টাকার প্রয়োজন। যা তাদের পক্ষে যোগান দেওয়া অসম্ভব।
ভুরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ খালেদুজ্জামান বলেন, মেয়েটি অসম্ভব মেধাবী। কলেজে পড়ার সময় আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছি। এমন এক প্রতিভা যেন অর্থাভাবে হারিয়ে না যায় সেজন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
ভোরের পাতা/এএম