#বর্ধিত ভাড়া গুণছেন যাত্রীরা, #সিটে বসছেন গাদাগাদি করে, #দূরপাল্লার যাত্রীরাও কিনছেন অতিরিক্ত আসন
চলতি বছরের মার্চ থেকে ফের করোনা তার সংক্রমণমুখী চেহারা প্রকাশ করতে শুরু করেছে। করোনার এই দ্বিতীয় দফা ঢেউ ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের শনাক্তের হারকেও। সংক্রমণ ঠেকাতে ইতোমধ্যে গণপরিবহনগুলোতে অর্ধেক যাত্রীবহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাতে, উল্টো বেড়েছে যাত্রী ভোগান্তি। ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা করেছে বিক্ষোভও।
এদিকে, গত দু’তিন দিন ঢাকায় গণপরিবহনের তীব্র এ সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৬০টি দ্বিতল বাস নামানোর। গত রোববার নগরীর বিভিন্ন রুটে চলে এই ৬০টি ডাবল ডেকার বাস। মূলত যেসব রুটে যাত্রীসংখ্যা বেশি সেসব রুটকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।এ বিষয়ে বিআরটিসি কতৃপক্ষ বলছে, ঢাকার রাস্তায় ইতোমধ্যে নামানো হয়েছে বিআরটিসির ৩৫টি ডাবল ডেকার বাস। ৬০টি ডাবল ডেকার ফুলফেজে নামানো হলে যাত্রীদের পরিবহন সংকট অনেকটাই কমে আসবে।
কিন্তু, ৮.৯ মিলিয়ন নগরবাসীর এই মহানগরীতে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্ধিহান যাত্রীরা। তাদের দাবি পরিবহনের সংখ্যা আরো না বাড়ালে স্বাস্থ্যবিধি মানার যে ১৮ দফা নির্দেশনা সরকার দিয়েছে তা মানা বাস্তবপক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠবে।
গতকাল রাজধানীর গুলিস্তান, মিরপুর, মালিবাগ ঘুরে এমনই কিছুচিত্র পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কানা করেই যাত্রীরা বাস উঠার জন্যে প্রাণপণ সংগ্রাম করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বাসের সিট দখল নিয়েছেন জানালা দিয়ে ঢুকেই। অনেকে বাসনা পেয়ে চেষ্টা করেন হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার। এমন চিত্রই গতকাল পেয়েছেন ভোরের পাতার প্রতিনিধিরা।
একদিকে, বাসসহ সব গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রেখেযাত্রী তোলার নির্দেশনা, ৬০ শতাংশ ভাড়াবৃদ্ধি। অন্যদিকে, অফিসে ৫০ শতাংশ উপস্থিতি ঠিকঠাক কার্যকর না হওয়ায় রাস্তায় বেরিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন অফিস যাত্রীরা। সড়ক অবরোধ করতেও বাধ্য হয়েছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অফিসগামী যাত্রীরা অবস্থান নেন রাজধানীর খিলক্ষেতে বিমানবন্দর সড়কের দুপাশে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সড়কের দুদিকেই যান চলাচল। বাস থেকে যাত্রীরা নেমে এসে একাত্মতা ঘোষণা করেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। সে সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হয় ট্রাফিক পুলিশের।
কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশদের দাবি, তারা বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গণপরিবহনের সিটের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বেশি। তাই অনেকেই বাসে উঠতে পারছেন না। সরকারের দেওয়া ১৮ দফা নির্দেশনায় বলা হয়, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনে চলার। সংক্রমণের উচ্চঝুঁকির এলাকায় আন্তঃজেলা যানচলাচল সীমিতের পাশাপাশি প্রয়োজনে বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়। এই নির্দেশনা কার্যকর শুরু হয় গত বুধবার থেকে।
গতকাল দেখা যায় বেশির ভাগ বাসই এক সিটখালি রেখে যাত্রীপরিবহন করেছে। তবে কিছুসংখ্যক বাসকে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করতেও দেখা যায়। গণপরিবহনের অনেক চালক ও কন্ডাক্টরকে দেখা যায় মাস্ক থুঁতনিতে রাখতে। যাত্রীদের মধ্যেও অনেকে থুঁতনির মধ্যে মাস্ক রাখতে দেখা গেছে।অন্যদিকে, বাসের বিকল্প হিসেবে সে সব যাত্রীরা রাইড শেয়ারিং সার্ভিস ব্যবহার করতেন। তারাও পড়েছেন বিপাকে।
মহামারি করোনা বেড়ে যাওয়ায় গত বুধবার রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রীপরিবহনেও নিষেধাজ্ঞা দেয় বিআরটিএ। আদেশে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত (আপাতত দুইসপ্তাহ) রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে মোটরসাইকেলে যাত্রীপরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেও নামে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল চালকরা।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকরে মোটরসাইকেল চালকরা। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক, প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক, আগারগাঁও, শাহবাগ এবং বাড্ডায় মোটরসাইকেল চালকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে, ঢাকা শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বিধি-নিষেধ উপেক্ষা কওে তাদের অনেকে এখনো যাত্রীও পরিবহন করছেন।
এই পরিস্থিতির শিকার মোটরসাইকেল চালক সাবের আলম ভোরের পাতাকে জানান, সরকারের বিধি-নিষেধ অনুযায়ী তাদের যাত্রীপরিবহন বন্ধ হলে তারা চরম আর্থিক সংকটে পড়বেন। তিনি আরো বলেন, ‘সব যানবাহনই তো চলতেছে, তাইলে মোটরসাইকেলে যাত্রীপরিবহন করতে অসুবিধা কই? আমাগোর জইন্যে খালি এই নিয়ম!’
ভোগান্তির শিকার হচ্ছে দূরপাল্লা পরিবহনের যাত্রীরাও। দূরপাল্লা বাসেও ভাড়া বাড়ায় অনেক যাত্রীরাই অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
তাদের বক্তব্য, করোনার মধ্যে মানুষের আয় সীমিত হয়ে গেছে, সে বিবেচনায় ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আরো গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার সরকারকে। এক সিটের জায়গায় বাড়তি আরো এক সিটের ভাড়া দিয়ে ভ্রমণ করা মধ্যবিত্ত যাত্রীদের জন্যে দুর্ভোগের সেটা সরকারকে ভেবে দেখা দরকার।
অন্যদিকে, নৌযানেও ধারণ ক্ষমতার অর্ধেকযাত্রী পরিবহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌযান মালিকরা। ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে সেখানেও।
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে বিগত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় এর ১০ দিন পর। সম্প্রতি করোনায় সংক্রমণ বাড়েছে আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে। মৃত্যুও বাড়েছে। গত বছরও দেশে করোনার প্রথম ঢেউ ঠেকাতে গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেকযাত্রী বহন ও ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। সে সময়ও ভোগান্তিতে পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি লঞ্চ, ট্রেনেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।