ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ০৩.০৪.২০২১ ১:৪৫ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নারীর অংশগ্রহণ বাদ দিয়ে সমাজ অগ্রসর হতে পারে না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীর অবদান রয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো নারীর অবদানের সুযোগ কতটা রয়েছে। আমাদের সমাজ এখনো পশ্চাৎমুখীতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। নারীকে পাশ কাটিয়ে সমাজকে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। বলতে বাধা নেই আমাদের সমাজ এখনো নানাভাবে কুসংস্কারের বেড়াজালে আটকে আছে। নারীর অগ্রগতিকে প্রতিহত করার জন্য সমাজেরই একশ্রেণির ধর্মান্ধ মানুষ প্রতিনিয়ত আস্ফালন করে চলছে। উচ্চস্বরে তারা নারী বিদ্বেষী কথা বলে।
অন্যদিকে এই নারীবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা ভীষণ ক্ষীণ। কখনো কখনো প্রতিবাদ হতেও দেখা যায় না। তারপরও শত বাধা পেরিয়ে নারীরা আজ সমাজের অনেকটাই এগিয়ে। অবশ্য এই যে অগ্রগতি এ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। নারীদেরকে সামনে যেতে হবে আরও। উন্নত বিশ্বের নারীরা যেভাবে কাক্সিক্ষত স্থানে যেতে পেরেছে, সে তুলনায় আমাদের নারীরা নিশ্চিতভাবেই অনেক পিছিয়ে। এই প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারীর নেতৃত্বের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারীর নেতৃত্ব নিশ্চিত হলে বলা যায় সমাজে আরও অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাবে নারীরা। বর্তমানে নারীরা নানা ক্ষেত্রেই তাদের মেধা ও প্রতিভা কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন। নানান পেশায় নারীরা উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে চলছেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীর নেতৃত্ব আশাতীত পর্যায়ে নেই। এটা যে রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বল দিক তা জোর দিয়েই বলা যায়। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা গ্রহণের বিষয়টি গুরুত্ব বহন করে। রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারীর নেতৃত্ব দ্রুত নিশ্চিত করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ধীরগতি কাম্য নয়। তারপরেও নির্বাচন কমিশন আশা জাগিয়েছে।গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে তারা জানিয়েছে, ‘রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃত্বের সর্বশেষ অবস্থা জানতে নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের ৭৮তম সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভাশেষে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেছিলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক দলের শর্ত পূরণের বিষয়টি এজেন্ডায় ছিল। এ বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেওয়ার। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের শর্ত অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে সকল রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা ছিল। এক্ষেত্রে দলগুলোর সর্বশেষ কী অবস্থা কমিশন দলগুলোকে চিঠি দিয়ে তার তথ্য নেওয়া হবে।এর আগে নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালে নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দিয়ে তাদের নারী নেতৃত্বের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়েছিল। ওই সময় চিঠি দিয়ে বেশিরভাগ দল তাদের অবস্থা জানানোর পাশাপাশি ২০২০ সালের মধ্যে শর্ত পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিছু দল। আবার কেউ কেউ সময় বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছিল।
এদিকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ৩৩ শতাংশ শর্ত পূরণের সময় বাড়াতে নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধনী খসড়া করেছে। ওই খসড়ায় নারী নেতৃত্বের ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করার সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের কোন দলটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর নেতৃত্ব বিদ্যমান রয়েছে, এটা আমাদের জানা নেই। কোনো দলেই নেই। যদি কাগজে-কলমে থাকে তাহলে সেটা আলাদা। এ দেশে কাগজে-কলমে অনেক কিছুই থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্বের বিষয়টি কাগজে-কলমে থাকার বিষয় নয়, এটি বাস্তবেই থাকতে হবে। সত্যিকার অর্থে যদি দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সহ ছোটখাটো দলগুলো নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন যে বাধ্যবাধকতা জারি করেছে, তা কার্যকর করে চলে তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর চেহারা ও বৈশিষ্ট্য অনেক ইতিবাচক হয়ে উঠবে। আমাদের মধ্যে আধুনিক ধ্যান-ধারণা আরও প্রবল হয়ে উঠবে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে দিতে আধুনিক-ধ্যানধারণাকে যতটা গভীরভাবে আত্মস্থ করা যায় ততই মঙ্গল। আমাদের সমাজে নারীর প্রতি যে বৈষম্য ও বিদ্বেষ পোষণ করা হয়, সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত হলে রাজনৈতিক দলগুলো আরও জনবান্ধব হয়ে উঠার সুযোগ পাবে। বর্তমানে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের দল আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্বকে সামনে এগিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
আমার মতে, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের শর্ত তাদের মেনে চলতে হবে।